ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এক কালবৈশাখীতে-

প্রকাশিত: ০৪:১০, ৬ মে ২০১৭

এক কালবৈশাখীতে-

সোমবার রাতের কালবৈশাখীতে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে আশুগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ জাতীয় গ্রিড লাইনের টাওয়ার ভেঙ্গে পড়ে। এর ফলস্বরূপ জাতীয় গ্রিডে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটে যায়। এর জের শেষ না হতেই পরদিন মঙ্গলবার দ্বিতীয় দফা বিপর্যয় ঘটে জাতীয় গ্রিডে। দু’দফা বিপর্যয়ের কারণে বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দেয়। ফলে দেশের প্রায় অর্ধেক অংশ বা ৩২ জেলা বেশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন থাকে। ২০১৪ সালের পর এটি ছিল সবচেয়ে বড় গ্রিড বিপর্যয়। প্রাকৃতিক ও কারিগরি কারণে দু’দফা গ্রিড বিপর্যয়ের পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশের চারটি বিভাগে দিনভর চলে বিদ্যুত বিভ্রাট। এতে কোটি কোটি মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হন। বিপর্যয়ের কারণ তদন্তে যথাসময়ে প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশÑ পিজিসিবি। আড়াই বছরের মধ্যে দু’দুবার বিদ্যুত সঞ্চালন ব্যবস্থায় বড় ধরনের জাতীয় বিপর্যয় ঘটায় সঙ্গত কারণেই নানা প্রশ্ন সামনে চলে এসেছে। সবচেয়ে বড় জিজ্ঞাসাÑ এককভাবে একটি কোম্পানিকে দিয়ে সারাদেশের বিদ্যুত সঞ্চালন সম্ভব কিনা? সংশ্লিষ্ট সেক্টরের অবকাঠামোগত সক্ষমতাও আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। এক কালবৈশাখীতেই যদি দেশের বিদ্যুত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় প্রায় অচলাবস্থা নেমে আসে তাহলে মৌসুমের উপর্যুপরি ঝড়-ঝঞ্ঝায় পরিস্থিতি কতখানি নাজুক হবেÑ এ নিয়ে দেশবাসীর মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু এর জন্য দায়ী কী কী কারণ? কোথায় ফাঁক রয়ে গেছে সেটা সুস্পষ্টভাবে জানা এবং সে অনুযায়ী প্রতিকারের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী। জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয় জাতীয় নিরাপত্তার জন্যই উদ্বেগজনক। এতে যোগাযোগ ও সম্প্রচার কার্যক্রম, পুলিশ, বেতারসহ জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যবস্থাই অকার্যকর হয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকে যায়। আমাদের প্রত্যাশা ছিল ২০১৪ সালের বিদ্যুত বিপর্যয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ আরও সতর্ক ও সক্ষম হবে। কালবৈশাখী ঝড় প্রতিবছরের একটি নিয়মিত প্রাকৃতিক পরিস্থিতি। সেটি মাথায় রেখেই বিদ্যুত টাওয়ার স্থাপন করার কথা। আগামীতে এ ধরনের বিপর্যয় রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে কর্তৃপক্ষ এখন থেকেই সাবধানতা অবলম্বন করে দেশবাসীকে শঙ্কামুক্ত রাখবেÑ এটাই প্রত্যাশা। বলাবাহুল্য সঞ্চালনে নজর কম হওয়ায় বার বার বিদ্যুতে ঘটছে বড় বিপর্যয়। সরকারী খাতের পাশাপাশি বেসরকারী খাত উৎপাদন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে এসেছে, এটাও সত্য অথচ সঞ্চালনের পুরো নিয়ন্ত্রণ রয়ে গেছে এককভাবে রাষ্ট্রীয় পিজিসিবির হাতেই। সঙ্গত কারণে সরকারী বরাদ্দের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় পিজিসিবিকে। বিগত বছরগুলোয় বিদ্যুত উৎপাদন অনেকাংশে বাড়ায় দেশের মানুষের বিদ্যুত নিয়ে সমস্যা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। কিন্তু এত বিদ্যুত উৎপাদন সত্ত্বেও কোন কোন এলাকায় সঞ্চালন-সীমাবদ্ধতার কারণে লোডশেডিং করা হচ্ছে। বিদ্যুত সঞ্চালন ক্ষেত্রে একাধিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা থাকাটাই সুবিধাজনক। তাতে কোন নির্দিষ্ট এলাকার বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে অন্য এলাকার মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। একমুখী সঞ্চালন পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা কাটাতে জাতীয় গ্রিডকে কয়েকভাগে বিভক্ত করে আঞ্চলিক গ্রিড নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে সঞ্চালন এবং বিতরণ লাইনের সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। জনজীবন চূড়ান্তভাবে বিপর্যস্ত হয়ে যেতে পারে যে বিদ্যুত সরবরাহের কারণে, সেটি দুর্বল ভিত্তির ওপর চলতে পারে না।
×