ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥ চর্যাপদ’র ভূমি ॥ কবিতার জন্য এতটা পথ হেঁটে চলা

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৫ মে ২০১৭

তরুণ লেখকদের সাহিত্য ভাবনা ॥  চর্যাপদ’র ভূমি ॥ কবিতার জন্য এতটা পথ হেঁটে চলা

মায়ের হাতের আঙুল ধরে আর বগলে বর্ণমালা নিয়ে প্রথম যেদিন পাঠশালায় যাওয়া সেদিন থেকেই স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণের ভালবাসায় জড়িয়ে গেছি। তারপর, মেঠোপথ ধরে বেড়ে ওঠা। ধীরে ধীরে পাঠ্যের পাশাপাশি ভাললাগা তৈরি হয় কবিতার জন্য। মায়ের বকুনির ভয়ে পাঠ্যবইয়ের ভাঁজে কবিতাকে পরম যতেœ রেখে নিরন্তর চেয়ে থাকা কবিতার শরীরে। কবিতার রূপ যে কতটা মায়াবতী হতে পারে তা কল্পনাতীত। যৌবতী কন্যার প্রেমে যেমন নেশাতুর হওয়া যায় তেমনি কবিতার প্রেমেও নেশাতুর হয়ে আছি। জানি না তার ফল কি? শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে যৌবনেও কবিতার শরীরের সাথে মিশে আছি একান্তভাবে। কবিতাকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার প্রয়োজন আছে বৈকি; তবে কবিতাকে ভিন্নার্থে প্রয়োগের ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া জরুরী। কেননা, কবি তার কথামালা গণমানুষের মুখ হয়ে বলে থাকে। কবিতায় কথা বলে যায় দ্বিধাহীনভাবে, কারো দৃষ্টিকোণের সাথে ভিন্ন হতেই পারে। সত্যি বলতে কবিতার ভাষাশৈলী, চিত্রকল্প বা দৃশ্যায়নের সাথে আপোস করা হয়ে ওঠেনি। কবির সরলরৈখিক চিন্তার সাথে সাধারণ মানুষের মনস্তাত্ত্বিক-বৃত্তীয় পরিম-লে এক অদৃশ্য যোগাযোগ তৈরি হয়, যা কেবল কবিতার খিদে মেটানোর চেষ্টা করা হয়। সমকালীন কিছু দুর্বোধ্য ও রূপক কবিতা সাধারণ মানুষের বোধের বাইরে, এই কবিতার স্বাদ কেবল বোদ্ধারাই গ্রহণ করে চলেছে। তবে কবিতা সবার জন্য প্রযোজ্য হওয়া উচিত বলে মনে করি। তাই কবিতা সহজ, সাবলীল, গ্রহণযোগ্য, বোধনির্ভর ও দর্শনভিত্তিক হওয়া উচিত। কবিতাকে শৈত্যপ্রবাহের কুয়াশার মতো ধোঁয়াটে করা উচিত নয়। কবিতাকে বুকের ভেতর লালন করে আগামীর সাথে সেতুবন্ধ গড়ে দেয়ার কাজটি একমাত্র কবিই করে থাকে। সমকালীন অনেক কবিতার জন্ম হচ্ছে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মতো, অথচ বেঁচে থাকার মতো কবিতার সংখ্যা নিতান্তই কম। কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, এক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক বিষয়বস্তু ও দায়বদ্ধতার অভাব। কবিতার বিষয়বস্তু যদি পাঠককে আন্দোলিত না করে তবে কবিতা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে না। কবিতায় প্রাণবন্ততার জন্য প্রয়োজন বোধ ও দর্শন। বোধের স্তর সেই মাপের হতে হবে যা পাঠকের চিন্তার বাইরে। কবিতার একটি চরণ পড়ার পর পরের চরণ কি হবে তা পাঠককে ভাবতে দিতে হবে। এক্ষেত্রে পরের চরণে পাঠক যা ভাবছে, কবির বোধ ও দর্শন হয়ে থাকে তার মধ্যবর্তী। অর্থাৎ পাঠক কখনই পুরোপুরিভাবে কবির বোধকে ছুঁতে পারে না। এমন দ্যোতনাধর্মী চিত্রকল্প ও দৃশ্যকল্প ফুটে আছে আমাদের কবিতায়। সাহিত্যের একটি শাখা কবিতা। এই শাখাতে বিচরণ নেই এমন মানুষ খুব কম। সেটি হতে পারে গ্রামের খেটেখাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে উঁচুতলার মানুষ পর্যন্ত। এখন গ্রাম-গঞ্জ থেকে শহর পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষের দুবিঘা সম্পত্তি না থাকলেও দুটো কবিতা আছে। এটাই তাদের জীবনের এক মহাসম্পদ হিসেবে ধরে নেয়। আর এই সম্পদের জন্য কেউ কেউ ভিন্ন ভিন্ন উপাধির রামাবলী গায়ে দিয়ে দিব্যি বেঁচে আছে। ** পুরনো প্রেম ও ভুল মানুষের গল্প নতুন কোনো প্রেমিকার ঠোঁটে ঠোঁট রাখলেই- পেছন থেকে পুরনো প্রেম হাত টেনে ধরে। তবুও, পাপ আর পুনর্জন্মের পথ ধরে হাঁটতে থাকি একা শুধুই একা, যেখানে সমুদ্রের খসে পড়া বুদবুদ জমা হয় সেখানেই আবার থেমে যাওয়া, গন্তব্য হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে। হাত বাড়ালেই অধুনা প্রেম চিমটি দেয় শুধু তোমাকেই ছোঁয়া যায় না। ভোররাতের স্বপ্নে আঁকি পুরনো প্রেম আর প্রেমিকার মুখ অথচ রোজ বিকেলে চায়ের কাপে নতুন প্রেমিকাকে খুঁজি। প্রেম ও কামের শুদ্ধ বানান ভুল প্রেমিকারা জানে, কেবল তুমিই জানোনা- জলাশয় ঘুমোলেই বরফ হয়ে যায়। ** আশ্বিনের বিকেলে যে যুবক রোদ্দুরের জামা গায়ে দূরের বালিকার খোঁজে যায় অথচ, হাটখোলার হাঁটুরে হয়ে ফিরে আসে রোজ। তার কাছে দুটো কবিতার চেয়ে চার টাকার ঝালমুড়ি বেশ নোনতা লাগে। কেননা, আজও জানা হলো না তার আদিম পরিচয়। কোনো এক আশ্বিনের বিকেলে তার বেনামে চিঠি এলো ডাকবাক্সের দরোজা খুলে। তবুও বালিকার দেখা পেলে হয়তোবা জানা যেত বেনামী যুবকের নাম, যার রুমালে আঁকা ছিল সে যুবকের প্রচ্ছদ। বছরের পর বছর চলে গেল, কেবল পাশাপাশি শুয়ে থাকে যুবক আর বালিকার লেখা চিঠিগুলো। হঠাৎ ঘুমের ভেতর গুঙিয়ে ওঠে আচমকা ভালবাসা, তবে কি খুঁজে পেল যুবকের নাম-পত্তর! ** একটি অস্বস্তিকর কবিতা অতঃপর, মানুষের ঘরে আগুন লাগলে কিংবা মানুষের হাতে মানুষ জখম হলে এক ছটাক তেল-জলের বদলে হাতে হাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে মুঠোফোনের রঙিন পর্দা। চোখের পলকেই আকাশদুনিয়ায় ভেসে যায় সে-সব সাদাকালো কষ্টের ছবি; তুমুল বৃষ্টি নামে নাগরিক নগরে।
×