ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলি রহমান

কর্মজীবী নারী ও ডে কেয়ার সেন্টার

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৫ মে ২০১৭

কর্মজীবী নারী ও ডে কেয়ার সেন্টার

নারীর পদযাত্রায় প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সারা বিশ্ব। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সব প্রেক্ষাপটেই নারীর ভূমিকা অতুলনীয়। তবু আজও কিছু নারী গৃহবন্দী। কেননা সন্তান লালন-পালনের মহৎ কাজটি নারীদের ওপর যুগ যুগ ধরে। একটি সন্তানের সুস্থ ভাবে বেড়ে ওঠার ওপর নির্ভর করছে তাদের ভবিষ্যত। যেখানে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। সেই নারীদের গৃহবন্দী করে দেশের সুষ্ঠু অগ্রযাত্রা কখনও সম্ভব নয়। আজকে যেসব নারী তার কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে তারাও কখনও কখনও মাতৃত্বের মায়াজালে আটকা পড়ে। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনও চায় না তাদের বউমা ঘর রেখে বাইরে কাজ করবে। বর্তমানে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ পরিলক্ষিত হয়। নারীদের আরও কর্মমুখী করার জন্য সরকার দিচ্ছে নানা সুযোগ-সুবিধা। এক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় শিশু দিবা যতœ কেন্দ্র বা ডে কেয়ার সেন্টারের অপ্রতুলতা। আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। একটি শিশু ভাল পরিবেশে বড় হলে সমাজ ও দেশ উপকৃত হবে। শিশুকে আদর্শবান গড়তে মায়ের সান্নিধ্য খুব প্রয়োজন। তাই বর্তমানে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডে কেয়ার সেন্টার থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই স্বল্প। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কর্মজীবী মায়েদের শিশুদের জন্য দিবাযতœ কর্মসূচী প্রকল্পটি ০১-১০-২০০৯ তারিখে প্রশাসনিক অনুমোদন লাভ করেছে। রাজস্ব বাজেটের আওতায় ঢাকা শহরে ৭টি ও ঢাকার বাইরে পুরনো ৫টি বিভাগীয় শহরে ৫টিসহ মোট ১২টি ডে কেয়ার সেন্টার নিম্নবিত্ত শ্রেণীর কর্মজীবী/শ্রমজীবী মহিলাদের শিশুদের জন্য পরিচালিত হচ্ছে। পরিবারে তথা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পুরুষের সমান অংশগ্রহণ করতে না পারায় তাকে সর্বদাই অন্যের ওপর নির্ভরশীল থেকে নিগৃহীত হতে হয়। এই অবস্থা থেকে মুক্তির একটি মাত্র পথ নারীর অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণ। কিন্তু একজন মা তার ছোট শিশুকে কোন নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার নিশ্চয়তা না পেলে সন্তানকে রেখে কাজের জন্য ঘরের বাইরে যেতে পারে না। কর্মজীবী মায়েদের সন্তানকে এই দিবাকালীন সেবা প্রদানের লক্ষ্যেই মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন মহিলা বিষয়ক অধিদফতর কর্তৃক শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যাতে মহিলারা স্ব-স্ব কর্মস্থলে নিশ্চিন্তে কাজ করে নিজের তথা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারেন। সেলিনা আক্তার একটানা ৫ বছর একটি বেসরকারী ব্যাংকে চাকরি করেছেন। এক সময় ৬ মাসের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিয়েছিলেন। কিন্তু ৬ মাস পর আর চাকরিতে ফেরা হলো না। কারন তার একক পরিবারে সন্তানকে দেখাশোনা করার মতো কেউ ছিল না। আয়ার কাছে সন্তানকে নিরাপদ মনে করেনি। কাছাকাছি খোঁজ নিয়ে দেখলেন কোন ভাল শিশু দিবাযতœ কেন্দ্র নেই। তাই এক প্রকার নিরুপায় হয়ে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে হয়। এভাবে অনেক নারী তার প্রতিভাকে ছাইচাপা দিচ্ছে সন্তানের কথা ভেবে। মধ্য বয়স্ক একজন ভদ্র মহিলা ভিকারুন্নেসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের সামনে দাঁড়ানো । তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম ঢাকা ইউনিভার্সিটি থেকে ¯œাতকোত্তর শেষ করে সংসার জীবন শুরু করেছেন। সন্তানের কথা ভেবে কখনও চাকরি নিয়ে ভাবার সুযোগ হয়নি। ২০ বছর সংসার করে আজ নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছে। ছেলেমেয়ে বড় হয়ে গেছে। আজকাল সন্তান বড় হয়ে গেলে তাদের আর সময় হয় না বাবা-মাকে কিছুটা সময় দেবার, চোখে পানি চলে আসে তার। এক সময় স্বামী-সন্তানও বলে কেন তুমি কিছু করলে না। তখন মনে হয় হয়ত জীবনটা আর একটু অন্যভাবে সাজানো যেত। কিন্তু আমি আমার সন্তানদের অনেক ভালবাসি তাই ওদের চোখের আড়াল করতে পারিনি। এটাই স্বাভাবিক প্রতিটি মা তার সন্তানকে পরম ¯েœহে বড় করতে চান। আর মায়ের সান্নিধ্যে একটি সন্তান হয় আদর্শবান। এ জন্য সরকারী-বেসরকারী প্রতিটি কর্মস্থলে শিশুদের ডে কেয়ার সেন্টার বা দিবাযতœ কেন্দ্রের ব্যবস্থা করলে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে অনেক। নারীরা উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চার দেয়ালের মাঝে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে বলেই শিক্ষিত নারীরাও হচ্ছে নির্যাতিত। অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন এনে দিতে পারে স্বাধীনতা। তাই কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ডে কেয়ার সেন্টারের ভূমিকা অপরিসীম। প্রতিটি এলাকা ও কর্মস্থলে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত সকল শ্রেণী-পেশার নারীদের জন্য সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে ডে কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করা দরকার।
×