ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মলয় বিকাশ দেবনাথ

নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রগামী নারী

প্রকাশিত: ০৬:৫৪, ৫ মে ২০১৭

নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রগামী নারী

বিশ্বব্যাপী মেয়েদের এগিয়ে চলার প্রবণতা বৃদ্ধি পেলেও শতভাগে উন্নীত করাই এখন সময়ের চাহিদা। এ লক্ষ্যে মেয়েদের পাশাপাশি সামাজিকভাবে সচেতনতাবোধ জাগানোর ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত আছে। উইমেন টুয়েন্টি হচ্ছে গ্রুপ অব টুয়েন্টিভুক্ত দেশগুলোর একটি শাখা, যেখানে নারীরা লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীদের সক্রিয় ভূমিকা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে। মূলত নারীর ক্ষমতায়নই এর মুখ্য উদ্দেশ্য। এ বছর ২৪-২৬ এপ্রিল এই সভা অনুষ্ঠিত হয় জার্মানির বার্লিনে। এ বছরের সেøাগান ছিল ‘যদি আমরা নারীর জন্য বিনিয়োগ করি তবে এটা হবে বিশ্ব উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী বিনিয়োগ। এই সেøাগানকে সামনে রেখে একটি ফলপ্রসূ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মার্কেল, আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন লাগার্ড, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কন্যা ইভাঙ্কা ট্রাম্প, কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড এবং সঞ্চালকের ভূমিকায় ছিলেন নেদারল্যান্ডের রানী ম্যাক্সিমা। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল শ্রমবাজারে মেয়েদের অন্তর্ভুক্তি। ২০২৫ সালের মধ্যে শ্রমবাজারে মেয়েদের উপস্থিতির যে ফারাক রয়েছে পুরুষদের তুলনায় তা শতকরা ২৫ ভাগ কমিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। মেয়েদের সমানভাবে অন্তর্ভুক্তি সামগ্রিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে যে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এটাই এই সেøাগানের মূল বিষয়। দ্বিতীয়ত অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি। নারী উদ্যোক্তাদের সঠিক ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ দিতে হবে পাশাপাশি মেয়েদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে উৎসাহ দিতে হবে। তবেই অর্থনৈতিক মুক্তি মিলবে। আমাদের দেশেও এখন সরকারী বা বেসরকারীভাবে নারী উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হচ্ছে এবং বিভিন্ন ঋণ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তবে একটি বিষয় উল্লেখ্য, অর্থনেতিক সহায়তার পাশাপাশি সামাজিক পরিবেশ খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ অন্যথায় উদ্যোগীরা লোকসানের মুখ দেখবে যা তাদের মনোবলকে ধ্বংস করে দেবে। তৃতীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মেয়েদের এগিয়ে চলার পথ সুগম করা এবং প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজেদের সম্পৃক্ত করা। প্রযুক্তির জয়জয়কার ও অগ্রসরমান যাত্রার সঙ্গে মেয়েরা যেন খাপখাইয়ে নেয়ার সুযোগ পায় সেটাই ছিল প্রত্যয়। সময়ের চাহিদা মোতাবেক মেয়েরা এগিয়ে যেতে পারলেই হবে সার্থকতা মিলবে অর্থনৈতিক মুক্তি, প্রতিষ্ঠা পাবে সমঅধিকার। সর্বশেষ বিষয় ছিল উইমেন২০-কে শক্তিশালীকরণ। লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ও নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। বৈচিত্র্য আর সকলের সমন্বিত প্রচেষ্টা হচ্ছে নারী উন্নয়নের মূল চাবিকাঠি। উইমেন২০ হচ্ছে একটি চালিকাশক্তি যা গ্রুপ অব ২০-কে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ট্রাম্পকন্যা ইভাঙ্কার মতে ডব্লিউ ২০ হচ্ছে এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে মুক্ত আলোচনা করে বের করা যায় যে আসল সমস্যা কোথায় এবং এর সমাধান। সম্মেলন পরবর্তী প্যানেল আলোচনায় হঠাৎ করে জার্মানির চ্যান্সেলর মার্কেলকে প্রশ্ন করেন সঞ্চালক আপনি কি নিজেকে নারীবাদী মনে করেন? উত্তরে তিনি বললেন, ‘সত্যি বলতে আপনারা যদি আমাকে নারীবাদী মনে করেন তবে আমার সমস্যা নেই তবে এ তকমা আমি আমার গায়ে লাগাতে চাই না। সবাই যে কথাটিতে একমত পোষণ করেছিলেন তা হলো নেদারল্যান্ডের রানী মেক্সিমা বলেছিলেন, ‘আমি শুধু চাই, সব নারীর নিজের সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ ও স্বাধীনতা থাকবে, যাতে সে সুযোগ তারা কাজে লাগাতে পারে এবং নিজেদের জন্য গর্ববোধ করে। সত্যিকার অর্থে এটাই হচ্ছে মূল চেতনা যা নারীর ক্ষমতায়ন বা স্বাধীনতাকে মূল্য দেবে এবং নারীর আত্মবিশ্বাসকে বৃদ্ধি করবে। বাংলাদেশ জি২০-এর সদস্য না হওয়াতে এখানে আমাদের উপস্থিতি নেই তবে আমরা এই বিষয়গুলো আত্মস্থ করতে পারি এবং আমাদের সমাজব্যবস্থায় নারীকে যথাযথ সম্মান ও তার কর্মক্ষেত্রকে সুষম ও সুগম করতে পারি এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে মেয়েদের একটি সুন্দর ও নিরাপদ সমাজ ও পরিবেশ দিতে পারি যেন তারা তাদের প্রতিভা বিকাশে সর্বোচ্চ সুযোগ পায়। তবেই জাতি তথা দেশের উন্নয়নে গতি বাড়বে।
×