ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারী শ্রমের যথার্থ মূল্যায়ন

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ৫ মে ২০১৭

নারী শ্রমের যথার্থ মূল্যায়ন

১ মে পালন করা হলো আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস সারা বিশ্বের শ্রমিকদের শ্রমঘণ্টা কমানো থেকে শুরু করে ন্যায্য মজুরি প্রদান, শ্রম অধিকারের আনুষঙ্গিক শর্ত পূরণসহ অন্যান্য মৌলিক দাবি-দাওয়াকে প্রধান্য দেয়ার মধ্যেই দিবসটির তাৎপর্য নিহিত। শ্রমজীবী মানুষের প্রায় অর্ধাংশই নারী শ্রমিক। বাংলাদেশের পেক্ষাপটে শ্রমিকদের যথার্থ পাওনা কতখানি আদায় হয় তা সত্যিই গবেষণার। কিন্তু নারী শ্রমিকদের বঞ্চনার আখ্যান সেভাবে তথ্য-উপাত্তের ও প্রয়োজন পড়ে না। কৃষিতে, সড়ক নির্মাণে, কল কারখানায় কিংবা পোশাক শিল্প খাতে নারীদের শ্রমশক্তির অপচয় দৃষ্টিকটুভাবে দৃশ্যমান। প্রথম দৃষ্টিতে নজরে এসেই যায় মজুরি বৈষম্য। বিশেষ করে ক্ষেত-খামারে কিংবা সড়ক, বহুতল ভবন, কালভার্ট এবং সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়ায় নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ অবকাঠামোগত সমৃদ্ধির একটি অপরিহার্য শর্ত। আর পোশাক শিল্প খাতে নারী শ্রমের কোন বিকল্পই নেই। কৃষি খামার এবং অবকাঠামোর প্রবৃদ্ধিতে নারীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেশের সামনে এগিয়ে চলার অন্যতম নির্ণায়ক বললে অত্যুক্তি হবে না। তবে এসব ব্যাপারে লক্ষণীয় এই ধরনের কর্মপ্রক্রিয়ায় নিয়োজিত হতদরিদ্র নারীরা সংসার ধর্মকে সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত করার পরই তার কর্মস্থলে এসে হাজির হয়। কিন্তু তার সহকর্মী স্বামীটি নিশ্চিন্তে, নির্বিঘেœ সংসারের কোন তোয়াক্কা না করে তার পেশাগত দায়িত্ব পালনে ব্রতী হয়। সময়ের হিসাব এবং কাজের ধরনে বলা যায় এখানে নারী-পরুষের কোন ভেদাভেদ রাখা তো হয়ই নাই বরং মজুরি দেয়ার বেলায় অসহায় নারী শ্রমিকদের ভাগ্যে জোটে বঞ্চনা এবং লাঞ্ছনার অসহ্য পরিস্থিতি। অনেক ক্ষেত্রে তারা বোঝেও না তাদের কতখানি নিপীড়ন করা হচ্ছে মজুরি মূল্যে। যেখানে একজন পরুষ শ্রমিকের প্রতি দিনের আয় নির্ধারিত থাকে ৩০০ থেকে ৬০০ (অবস্থা এবং সময়ের নিরিখে তা বেড়ে ও যায়) টাকা পর্যন্ত। সেখানে একজন নারী শ্রমিকের নিত্য মজুরি দাঁড়ায় মাত্র ১৬০-৩০০ পর্যন্ত- প্রায় অর্ধেক। এসব নিয়ে নারীদের মধ্যে প্রতিবাদ, প্রতিরোধের ঝড় যে ওঠে না তা কিন্তু নয়। কিন্তু শেষ অবধি এ ধরনের অবিচারের কোন সুরাহা হয় না। আন্তর্জাতিক নারী দিবস এবং নারী সংগঠনগুলো সেমিনার, সভা-সমিতি, সমাবেশে এই অলঙ্ঘনীয় সমস্যার আলাপ, আলোচনা, বক্তৃতা, পরামর্শ এবং নীতিমালা প্রণয়নের ব্যাপারে সুপারিশ গৃহীত হলেও তা ওই পর্যন্তই। আন্দোলন আর প্রতিরোধের অভিযাত্রায় এই পর্বতপ্রমাণ অন্যায়-অবিচারের সমাধান বাস্তবতা থেকে অনেকখানি দূরেই। এ তো গেল শ্রমমজুরি নিয়ে নারী শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকে দূরে রাখার নির্মম বাস্তবতা। তার উপর পারিবারিক দায় দায়িত্ব পালনে নারী শ্রমের মূল্যায়ন তো আজ অবধি হয়নি। সংসারযজ্ঞে একজন নিবেদিত নারী সে গৃহিণী কিংবা কর্মজীবীই হোক না কেন গৃহশ্রমের কোন মূল্যই কোন সময়ই প্রত্যাশা করে না। নিজের দায়বদ্ধতা আর বোধ থেকেই কোন নারী তার পারিবারিক কর্তব্য পালনে পিছপা হয় না। সমাজের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী গৃহস্থালির কাজকর্ম তো নারীর জন্যই। আর সন্তান লালন-পালন প্রতিটি নারীর মাতৃস্নেহ ধারার এক অনির্বাণ দীপ্তি। যা মেয়েদের অন্তরে সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করে। যথাসময়ে তারই বিকিরণ মাতৃত্বের চিরন্তন সত্তাকে আলোকিত করে। দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মেকে যথার্থ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কঠিন দায়-দায়িত্বও নারীর উপরই বর্তায়। আর সেটাকে যে কোন নারী তার স্বাভাবিক জীবনের প্রতিদিনের কর্মযোগ হিসেবেই মেনে নেয়। নারীর এই যুগান্তকারী কর্মযাত্রাকে কোন মূল্যের নিরিখেই বিবেচনায় আনা যাবে না। কিন্তু দেশের সার্বিক অগ্রযাত্রার এতবড় দায়ভাগ গ্রহণে তার উপযুক্ত মর্যাদা কিংবা সম্মান থাকা তো অত্যন্ত জরুরী। সেটুকুও কি নারীরা পেয়ে থাকে? মায়ের স্নেহধারায় সন্তান গড়ে ওঠবে সেটা যেমন সন্তানের অকৃত্রিম এবং মৌলিক অধিকার একইভাবে মাতৃত্বকেও তার যথাযোগ্য আসনে অধিষ্ঠিত করা প্রত্যেকের নৈতিক এবং মানবিক দায়বদ্ধতা। সেক্ষেত্রে নারীর মূল্যবান শ্রমশক্তিকে বাদ দিলেও দেশকে যথার্থ নাগরিক উপহার দেয়ার কৃতিত্বের ভাগিদার তো করাই যেতে পারে। নারীর এই মহামূল্যবান অবদানটিও সবার নজরে আসা আবশ্যক। নারী যদি তার যথার্থ সম্মান পায় তাহলে কোথাও সে অন্যায় কিংবা অবিচারের শিকার হতে পারে না। তার শারীরিক এবং মানসিক শ্রমেও কোন ধরনের অসততা কিংবা অসমতার নগ্ন ছাপ পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হবে না। অপরাজিতা প্রতিবেদক
×