ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টুটুল মাহফুজ

ফ্যাশনে রাবীন্দ্রিক ছায়া

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ৫ মে ২০১৭

ফ্যাশনে রাবীন্দ্রিক ছায়া

রবীন্দ্রনাথের ফ্যাশন ভাবনা ভাবতে গেলে মুগ্ধ হতে হয়। লেখক হিসেবে তিনি যেমন রুচিশীল ও আধুনিক তেমনি ফ্যাশনেও অসামান্য। রবীন্দ্রনাথ শুধু একা নন, ফ্যাশনের দিক থেকে পুরো ঠাকুরবাড়িই সে সময় ছিল সমান্তরালভাবে অন্যন্য আধুনিক, সচেতন এবং রুচিশীল। আমাদের আজকের সময়ের ফ্যাশনের ধরনধারণ, উপস্থাপন ও নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস, ফ্যাশন ডিজাইনারা অথবা গণমাধ্যম। সেসময় কোন ফ্যাশন হাউস ছিল না। ছিল শুধু ঠাকুরবাড়ি। আর ঠাকুরবাড়ি মানেই ফ্যাশনে ও পোশাকে নিত্যনতুন বাহারের সমারোহ। সেই ফ্যাশন প্রভাব বিস্তার করেছে সমস্ত বাঙালউর মধ্যে। আমাদের এই সময়ে ঠাকুরবাড়ির ফ্যাশনগুলো ধরে রাখতে না পারলেও কিছু এখনও নিত্যদিনের সঙ্গী। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী জ্ঞানদানন্দিনী দেবী ফ্যাশনের দিক থেকে ঠাকুরবাড়ির নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উদ্ভাবনী মনের ছিলেন। তিনিই এখানে প্রথম চালু করেন শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজের ব্যবহার এবং কুচি দিয়ে শাড়ি পরার চল। অন্যসব বাদ দিলেও এই দুটি এখনও বাঙালি নারীর নিত্যদিনের সঙ্গী। ফ্যাশনের দিক থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আজও অনুকরণীয়। শুধু ফ্যাশন নয়, ব্যক্তির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলাকে তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন। আর পরিপাটি সাজগোজে তার তুলনা হয় না। ফ্যাশনেবল রবীন্দ্রনাথ নিজস্ব স্টাইলকে প্রাধান্য দিয়েছেন সবসময়। তিনি ফ্যাশন ও স্টাইল নিয়ে বলেছেন, ‘ফ্যাশানটা হলো মুখোশ, স্টাইলটা হলো মুখশ্রী’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অভিজাত হিন্দু পরিবারের সন্তান হিসেবে ধুতি, পাঙ্গাবি বা লুঙ্গি যেমন পরেছেন তেমনি বিলেতে ব্যারিস্টারি পড়তে গিয়ে পরেছেন স্যুট-প্যান্ট। তবে সেখানেও পাওয়া গেছে তার স্বতন্ত্র উপস্থাপনা। সবকিছুতেই তাকে মানিয়েছে। প্রতিদিনের পোশাকে তিনি বাড়িতে পরতেন গেরুয়া বা সাদা রঙের জোব্বা আর পায়জামা। বাহিরের যাওয়ার সময় পরতেন জোব্বা ও সাদা ধুতি। সঙ্গে জামাও পরেছেন। আর বরাবরের মতো তিনি ব্যবহার করতেন শাল। রবীন্দ্রনাথের ছবি দেখলে তার পোশাকে রঙের ব্যবহার বোঝা যায় না। কিন্তু, তিনি রঙের ব্যবহার করেছেন মনের মাধুরী মিশিয়ে। ঋতু উৎসবে ঋতু অনুসারে তিনি ব্যবহার করতেন নানা রঙের রেশমি শাল। বর্ষায় ব্যবহার করতেন কালো বা লাল রঙের শাল, শরতে সোনালি আর বসন্তে বাসন্তি রং। আবার কখনও কখনও জোব্বার রঙের সঙ্গে ম্যাচ করে বেছে নিতেন সেই রঙের শাল। তিনি মাঝে মধ্যে টুপিও পরেছেন। ভিনদেশী ফ্যাশনের সঙ্গে বাঙালীয়ানা ফ্যাশনের মিশ্রণ সে সময় ঠাকুরবাড়িতে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। রবীন্দ্রনাথ জাপানীদের কিমানো ব্যবহার করেছেন নিজের মতো করে। কিমানোর সঙ্গে তিব্বতীদের বাকুর মিশ্রণে জোব্বা তৈরি করে পরেছেন। পাহাড়ী কিংবা বাউলদের পোশাকের মিশ্রণও রবীন্দ্রনাথের পোশাকের মধ্যে পাওয়া যায়। তিনি ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশ্রণে পোশাক তৈরি ও নির্বাচনে নিপুণ ছিলেন। পোশাকে তিনি স্টাইলিশ ছিলেন বলে জোব্বার হাতা, কলারের ধরন, জোব্বার বা কোটের বোতাম, জোব্বার দৈর্ঘ্য ইত্যাদিতে নতুনত্ব আনতেন। রবীন্দ্রনাথ শুধু একটি পোশাকে কখনও নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি। রুচির মধ্যে ভিন্নতা আনার প্রবণতা ছিল সবসময়। এতেই বোঝা যায় তিনি ফ্যাশনেবল ও স্টাইলিশ মানুষ ছিলেন। তিনি যা পরতেন সেটাই তাঁর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে চমৎকারভাবে মানিয়ে যেত। তার ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠেনি এমন কোন পোশাক তাকে পরতে দেখা যায়নি। এখানেই রবীন্দ্রনাথের ফ্যাশনের সবচেয়ে বড় সার্থকতা। স্টাইলটাই যে আসল, তিনি তার ফ্যাশনের মধ্য দিয়ে চমৎকারভাবে দেখিয়েছেন। মধ্যবিত্ত বাঙালীর জীবন ধারাটাকেই বদলে দিয়ে গেছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। কী কবিতায় কী গানে, গল্পে উপন্যাসে, চিত্রকলায়, জীবনযাপনে, পোশাক পরিচ্ছেদে এমন কি তার শৌখিন- সহানুভূতিপ্রবণ নিসর্গভেজা মন দিয়ে বাঙালীর সমাজ ব্যবস্থায়, অসহায় মানুষের প্রাণাবেগ সঞ্চারণে যেমন তার লেখা সকলকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে যুগে যুগে। মডেল : সাইফ ও তিথি ছবি : নাঈম ইসলাম
×