ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;আজিজুল হকের জবানবন্দী

আমীর রাজাকাররা আমার চাচাসহ ৯ জনকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৫ মে ২০১৭

আমীর রাজাকাররা আমার চাচাসহ ৯ জনকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালীর সুধারামপুরের পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী মোঃ আজিজুল হক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দীতে সাক্ষী বলেন, রাজাকার আমীর হোসেনসহ অন্যান্য রাজকাররা আমার চাচা মমিন উল্লাহসহ ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে। এই সময় তারা স্কুল মাঠে বসা লোকদের উদ্দেশে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’Ñ বলে সেøাগান দেয়ার নির্দেশ দেয়। আমরা জীবনের ভয়ে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’Ñ সেøাগান দেই। আর্মি ও রাজাকাররা চলে যাওয়ার পর শহীদ নয়জনের লাশ তাদের বাড়িতে নিয়ে দাফন করি। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য ১৭ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ আদেশ প্রদান করেছেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জাহিদ ইমাম। সাক্ষী জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ আজিজুল হক। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৫ বছর। আমার ঠিকানা গ্রাম- রামহরিতালুক, থানা-সুধারাম, জেলা-নোয়াখালী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল আনুমানিক ১৯ বছর। তখন আমি লেখাপড়া করতাম। এবং পাশাপাশি আমার বাবার সঙ্গে সুধারাম থানার খলিফারহাট বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করতাম। বর্তমানে আমার কাপড়, জুতা ও ম্যাট্রেসের ব্যবসা আছে। আমি এইচএসসি পাস করেছি। ১৯৭১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আমি বাড়ির সামনে গিয়ে দেখতে পাই, ১০-১২ জন রাজাকার আমাদের বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে। এ সময় রাজাকার মোঃ ইউসুফ (বর্তমানে মৃত) আমাকে দেখে ফেলে এবং আমাকে তার কাছে যেতে বলে। আমি প্রাণের ভয়ে রাজাকার ইউসুফের নির্দেশ মতো তার কাছে গেলে সে আমাকে বেঁধে ফেলে। সে আমাকে আমার চাচা মমিন উল্লাহর বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে দেখতে পাই, রাজাকাররা আমার চাচা মমিন উল্লাহ, চাচাত ভাই নুর উদ্দিন ও সাহাব উদ্দিন, প্রতিবেশী আনোয়ার উল্লাহ, খুরশিদ আলম, জুলফিকার ও ফজলূ মিয়াকে বেঁধে রেখেছে। আমি সেখানে যাওয়ার পর রাজাকাররা আমাকেও বেঁধে ফেলে। সকাল আনুমানিক সাতটা সাড়ে সাতটার সময় ওই রাজাকাররা আমাকে ও আটককৃত ব্যক্তিদের রামহরিতালূক সরকারী প্রাইমারী স্কুলের মাঠে নিয়ে যায়। রাজাকাররা আমাদের গ্রামের ২০০-৩০০ আটককৃত লোকের সঙ্গে লাইনে বসায়। এ সময় রাজাকাররা আমাদের মারধর করে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে তথ্য দিতে বলে। তখন আমরা বলি, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। সাক্ষী জবানবন্দীতে আরও বলেন, ওই দিন সকাল আনুমানিক নয়টা সাড়ে নয়টার দিকে রামহরিতালূক প্রাইমারী স্কুলের মাঠে আসামি মোঃ আমির আহম্মেদ ওরফে আমির আলী, আসামি রাজাকার আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুরসহ আরও অনেক রাজাকার আসে। এ সময় এ দুই আসামি রাজাকার ইউসুফকে নির্দেশ দেয় ওই স্কুলের মাঠে আটককৃত লোকদের মধ্যে থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের বাছাই করার জন্য। রাজাকাররা ওই স্কুলের মাঠে আটককৃত লোকদের মধ্য থেকে আমার চাচা মমিন উল্লাহ, চাচাত ভাই নূরু উদ্দিন ও সাহাব উদ্দিন, আমার প্রতিবেশী সফিক উল্লাহ, আনোয়ার উল্লাহ ও সেরাজুল হক, গ্রামবাসী হেজ্ঞু মিয়া, জুলফিকার আলী ও রমজান আলীকে বাছাই করে বোর্ড অফিসের উত্তর দিকে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করায়। এ সময় আমি স্কুলের মাঠে বসা অবস্থায় দেখতে পাই, আসামি আমীর আহমেদ ওরফে রাজাকার আমীর আলীসহ অন্য রাজাকাররা লাইনে দাঁড় করানো ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করে। রামহরিতালূক প্রাইমারী স্কুলের দক্ষিণ পাশে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।
×