ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত কমিটির রিপোর্টে ব্যবস্থা

হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক সাসপেন্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৫ মে ২০১৭

হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক সাসপেন্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে(এনআইসিভিডি) চিকিৎসাধীন রোগী চামেলী দাসের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত ওই হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ প্রদীপ কুমার কর্মকারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সদ্য বিদায়ী এক কর্মকর্তার স্ত্রী চামেলী দাস। তাঁর মৃত্যুর জন্য এনআইসিভিডি’র সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ প্রদীপ কুমার কর্মকার ও তাঁর মাধ্যমে বাইরে থেকে রিং সরবরাহকারী চক্রের সদস্যদের দায়ী করে তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ দায়ের করেন চামেলী দাসের স্বজনেরা। এই প্রেক্ষিতে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আব্দুল কাদের আকন্দকে সভাপতি করে গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন একই হাসপাতালের অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মামুনুর রশিদ, অধ্যাপক ডাঃ অমল কুমার চৌধুরী, অধ্যাপক ডাঃ মীর জামাল উদ্দিন ও অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আতাহার আলী। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, রোগী চামেলী দাসের এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টির পূর্বে রোগের লক্ষণ ও রিপোর্ট পর্যালোচনা করে একটি সঠিক ডায়াগনসিসে উপনীত হওয়া উচিত ছিল। সিএজি ও স্টেন্টিং করার পূর্বে এই চিকিৎসার ঝুঁকি সম্পর্কে রোগীর অভিভাবককে অবহিত করা প্রয়োজন ছিল। সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্টদের উক্ত ইউনিটের সকল কার্যক্রমে সক্রিয় অংশগ্রহণ করা এবং করানো জরুরী ছিল বলে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করেছে। ব্রজেন্দ্র চন্দ্র দাস তদন্ত কমিটিতে জানান, গত ২০১৬ সালের ১৫ নবেম্বর চামেলী দাস শ্বাসকষ্ট ও পায়ে পানি জমে ফুলে যাওয়ায় সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ প্রদীপ কুমার কর্মকারের তত্ত্বাবধানে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ভর্তি অবস্থায় ৩ থেকে ৪ দিন চিকিৎসার পর শ্বাসকষ্ট ও পা ফুলা অনেকাংশে ভাল হয়ে যায়। চিকিৎসকদের পরামর্শে ২১ নবেম্বর এনজিওগ্রাম ও একটি রিং পরানো হয়। যার মূল্য বাবদ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রদান করি। ক্যাথল্যাব প্রসিডিউর হওয়ার পর সিসিইউ-২এ নেয়ার সময়ও রোগী কথা বলছিলেন। কিন্ত বেলা ২টা থেকে ক্রমান্বয়ে খারাপ হতে থাকলে অবহিত করার পরও ওই সময় না গিয়ে সন্ধ্যায় রোগীকে দেখতে যান চিকিৎসক। সন্ধ্যায় গিয়ে তিনি স্যালাইনের নাম লিখে দিয়ে চলে যান। অবস্থার আরও অবনতি ঘটতে থাকলে রোগীকে সিসিইউ-১ এ স্থান্তান্তর করা হয়। রক্ত দেয়া শুরু করার প্রায় ২৫ মিনিটের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু হয়। রোগীর প্রসিডিউর ঝুঁকি আছে, সেই সম্পর্কে আমাদের কোন কাউন্সেলিং করা হয়নি। রোগীর ঝুঁকি আছে জানলে এখানে চিকিৎসা করাতাম না। ডাঃ প্রদীপ কুমার কর্মকার (স্টাফসহ) রিং কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন প্রাপ্তির আশায় ভুল চিকিৎসা, অবহেলা এবং নার্সদের অবহেলার কারণে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে বলে তদন্ত কমিটির কাছে অভিযোগ করেছেন চামেলী দাসের স্বামী ব্রজেন্দ্র চন্দ্র দাস। জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ প্রদীপ কুমার কর্মকার তদন্ত কমিটিকে জানান, আমরা রোগীকে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ‘এ্যাল্ড এমআই এ্যান্টেরিয়ার’ হিসেবে নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করি। প্রদত্ত চিকিৎসার দু’দিন পর রোগীর বাম পাশের ভেন্ট্রিকুলার ও শ্বাসকষ্ট কমে যায়। পরবর্তীতে রোগীর আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে আলাপ করে ২০১৬ সালের ২১ নবেম্বর এনজিওগ্রাম করার পর এলআইডি ধমনীতে ৯৫ ভাগ ব্লক ধরা পড়ায় রোগীর স্বজনদের সম্মতিক্রমে স্টেন্টিং প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি। ক্যাথল্যাব শেষে আনুমানিক দুপুর আড়াইটায় সহযোগীদের নিয়ে আমি রোগীর ফলোআপ করি। তখন রোগীর সব কিছু স্বাভাবিক ছিল এবং স্বাভাবিকভাবে পানি ও জুস পান করছিলেন। পরবর্তীতে আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে রোগীর বমি হয় এবং ব্লাড প্রেসার কমে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ইনোট্রপস, এ্যান্টিয়ারনেটিক ও ফ্লুড দেয়ার পরও প্রেসার না বাড়ায় রোগীকে সিসিইউ-১ এ স্থানান্তর করা হয়। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা রোগীকে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করেন এবং এক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করতে রোগীর স্বজনদের বলেন। অবনতি ঘটতে থাকলে রোগীকে ডিসি শকসহ সকল জরুরী ওষুধ ও সিপিআর ইন্টুবেশনসহ সকল চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করে। কিন্তু সব ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করার পরেও রোগী রাত ৮টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
×