ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাধ্যমিকের ফল প্রকাশ

পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৫ মে ২০১৭

পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ২০০১ সালে গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর প্রথমবারের মতো এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সাফল্যে বড় ধরনের ছেদ পড়ল। গ্রেডিং পদ্ধতি চালুর পর প্রায় প্রতিবছরই পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। দু’একবার পাসের হার এক থেকে দুই শতাংশ কমলেও বেড়েছে জিপিএ-৫। তবে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটিই কমেছে। এক বছরের ব্যবধানেই পাসের হার প্রায় ৮ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮০ দশমিক ৩৫ শতাংশে। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৪ হাজার ৭৬১ জন, যা গতবারের চেয়ে পাঁচ হাজার জন কম। কমেছে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠান, বেড়েছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানও। সবচেয়ে বেশি পাস করেছে রাজশাহী বোর্ডে ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ। সবচেয়ে কম ৫৯ দশমিক ০৩ শতাংশ কুমিল্লা বোর্ডে। এদিকে যেমনটা ধারণা করা হয়েছিল ঘটেছে তেমনটাই। বছরের পর বছর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে লাগামহীন উদারতার কারণে ফলে রীতিমতো সাফল্যের বিস্ফোরণ ঘটে। শিক্ষার মানে অগ্রগতি না হলেও অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকে পাসের হার ও জিপিএ-৫। এ অবস্থায় সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি চালু ও কঠোরতা অবলম্বন করলে ফলে তার প্রভাব পড়বে বলেই ধারণা ছিল সকলের। এবার প্রথমবারের মতো খাতা মূল্যায়নে নেয়া হয়েছিল নতুন উদ্যোগ। যা কার্যকর করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সেসিপ প্রকল্পের একটি ইউনিট। বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের (বেদু) উদ্যোগে বাস্তবায়িত নতুন এ পদ্ধতিতে খাতা যথাযথভাবে মূল্যায়ন হওয়ায় পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে। কমেছে জিপিএ-৫-সহ বেশকিছু সূচক। পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে এবার পাসের হার কয়েক বছরের মধ্যে বেশ খানিকটা কমে গেলেও এ পরিবর্তনকে সময়োপযোগী বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, ফলাফল কিছুটা আগের তুলনায় খারাপ হলেও সঠিক খাতা মূল্যায়ন জরুরী হয়েয়ে পড়েছিল। যুগের পর যুগ ধরে একটি ত্রুটিপূর্ণ খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি ছিল যার পরিবর্তনের ফলে পরীক্ষার সঠিক ফল পাওয়া গেছে। ভবিষ্যতে আরও কঠোরভাবে উদ্যোগ কার্যকর হবে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এবার দশ শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষায় অংশ নেয়া ১৭ লাখ ৮১ হাজার ৯৬২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৬ হাজার ৭২২ জন। শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবার দুই হাজার ২২৬টি, যা গত বছর ছিল চার হাজার ৭৩৪টি। কেউ পাস করেনি এমন প্রতিষ্ঠান এবার ৯৩টি, যা গত বছর ছিল ৫৩টি। এবার মোট ২৮ হাজার ৩৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কপি হস্তান্তরের পর দুপুর সাড়ে ১২টায় সচিবালয়ের সংবাদ সম্মেলন করে সারাদেশের ফল প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এরপরই স্ব স্ব কেন্দ্র, বিদ্যালয়, শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট, মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়ে ফল জানতে পারে পরীক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীর পাশে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের সচিব মোহাম্মদ আলমগীর, অতিরিক্ত সচিব অরুণা বিশ্বাস, অশোক কুমান বিশ্বাস, ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমানসহ বিভিন্ন বোর্ডের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোন বোর্ডে কেমন ফল? এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার এবারও বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছেন ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ হাজার ৪৮১ জন। গত বছর পেয়েছিল ৪০ হাজার ৮৩৩ জন। পাস করেছে ৮৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড পরীক্ষায় পাসের হার ৯০ দশমিক ৭০ শতাংশ, গত বছর ছিল ৯৫ দশমিক ৭০ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৭ হাজার ৩৪৯ জন, গত বছর পেয়েছিল ১৭ হাজার ৫৯৪ জন। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮৪ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৪৫০ জন, গত বছর পেয়েছিল ছয় হাজার ৯৫৪ জন শিক্ষার্থী। যশোর শিক্ষা বোর্ড পাসের হার ৮০ দশমিক ৪ শতাংশ, গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৪৬০ জন, গত বছর ছিল ৯ হাজার ৪৪৪ জন শিক্ষার্থী, গত বছর তা পেয়েছিল সাত হাজার ১৮১ জন। চট্টগ্রাম বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ, গত বছর ছিল ৯০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে আট হাজার ৩৪৪ জন, গত বছর ছিল সাত হাজার ৬৬৬ জন ছাত্রছাত্রী। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ২৪ শতাংশ, গত বছর ছিল ৭৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। এবার এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ২৮৮ জন, গত বছর ছিল তিন হাজার ১১৩ জন। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ২৬ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে দুই হাজার ৬৬৩ জন, গত বছর পেয়েছিল দুই হাজার ২৬৬ জন। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ছয় হাজার ৯২৯ জন, গত বছর পেয়েছিল আট হাজার ৮৯৯ জন। কারিগরি বোর্ডে পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ, গত বছর ছিল ৮৩ দশমিক ১১ শতাংশ। এবার এ বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ১৮৭ জন। গত বছর ছিল সাত হাজার ৯৭ জন। মাদ্রাসায় পাস করেছে ৭৬ দশমিক ২০ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ। পাসের হার করেছে ১২ শতাংশেরও বেশি। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৫ হাজার ৯৯৫ জন এবার তিন হাজার ২৮৫ জন কমে হয়েছে দুই হাজার ৬১০ জন। এদিকে বিদেশের আটটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৪৩৭ জন ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪১২ জন। গড় পাসের হার ৯৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১২ জন। খারাপ ফলের পেছনে নতুন মূল্যায়ন পদ্ধতি সকালে যখন ফলের কপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষামন্ত্রীসহ বোর্ডের প্রধানরা হস্তান্তর করেন তখনই প্রকাশ হয় বহু বছর পর ফলের উর্ধগতিতে ছেদ পড়েছে। তবে এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই এ কথা স্পষ্ট হয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যেই। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তনের কারণে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার গত কয়েক বছরের মধ্যে বেশ খানিকটা কমে গেলেও এ পরিবর্তনকে সময়োপযোগী বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরে ফল আনুষ্ঠাননিকভাবে প্রকাশের পর শিক্ষামন্ত্রী বলছিলেন, আগে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি যথাযথ ছিল না। শত বছরের একটা পদ্ধতি তিন বছর ধরে পরিবর্তনের জন্য আমরা কাজ করেছি। বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদরা কাজ করেছেন। এবার নতুন পদ্ধতিতে যথাযথ মূল্যায়ন হওয়ায় মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার কিছুটা কমেছে। আমাদের কাছে এটা খুবই স্বাভাবিক এবং এ জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু যারা পাসের হার কেবল বাড়ছে এ কথা শুনে অভ্যস্ত তাদের কাছে একটু বিস্ময় হতে পারে। যেহেতু এটা একটা আমাদের অগ্রগতি, সেই কারণে জিনিসটা আমি সবাইকে স্বাভাবিকভাবে নিতে অনুরোধ জানাব। প্রতিবারের মতো এবারও ২৩টি বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সব কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে, নকলমুক্তভাবে, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা হয়েছে, বড় ধরনের কোন সঙ্কট কোথাও হয়নি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কম হয়েছে। এটা কারও মনে প্রশ্ন আসতে পারে কেন কম হলো। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, যথাযথভাবে যেন মূল্যায়ন হয় শিক্ষার্থীদের। ম্ল্যূায়ন পদ্ধতি পরিবর্তনের কারণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার পর পরীক্ষকরা খাতা নিয়ে যান এবং ফলাফল জমা দেন। কিন্তু ‘অভিজ্ঞতায় দেখা যায়’Ñ তারা ভাল করে খাতা দেখেন না অনেকেই। এ কারণে একটি পরীক্ষা পর্যালোচনা পর্ষদ করে সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার ব্যবস্থা হয়। একই খাতা ২০টি ফটোকপি করে দেয়া হয় দেশের ২০ জন সেরা পরীক্ষককে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে আলাদাভাবে নম্বর নেয়া হয়। দেখা যায়, ২০ জনই ২০ ধরনের নম্বর দিয়েছেন। একজন ছাত্র ৪ পাচ্ছে, আরেকজন ছাত্র এখানে সাত পেয়ে যাচ্ছে। তাহলে কত পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগেই আমরা বলেছি, যিনি প্রধান পরীক্ষক, তিনি আসলে খাতা দেখেন না। এই একটা রিপোর্ট দিয়ে দেন। আবার যিনি খাতা দেখেন, তিনিও ভাল করে দেখেন না। বোঝা যায়, অনেক সময় তিনি এটা ওজন করে দিয়ে দিলেন, কত পাতা লিখেছে সেই পরিমাণে। এটা হলে তো সত্যিকার অর্থে আমাদের ছেলেমেয়েদের মূল্যায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। এতে সে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, কিংবা সে একটা বাড়তি সুযোগও পেয়ে যেতে পারে। খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির উন্নয়নে তিন বছর ধরে কাজ করার কথা জানিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, এ বিষয়ে প্রথমে প্রধান পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে তাদের মাধ্যমে সারা দেশে সব পরীক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। সব শেষে এ বছর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘একটি মান’ বজায় রাখার এই ব্যবস্থা চালু হয়। এ জন্য আমরা এই খাতাগুলো দেখে একটা উত্তরপত্র আগেই বাছাই করে আমাদের হেড এক্সামিনাররা বসে এবং দুইবার চেক করে একটা সাধারণ মান ঠিক করে দেন। সে অনুযায়ী পরীক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি এবং দেশের শিক্ষাবিদদের সহযোগিতা নিয়েই মূল্যায়ন ব্যবস্থার এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। আমাদের তিন বছরের এই প্রচেষ্টার ফলাফল হচ্ছে, সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে খাতা দেখে আমরা ফলাফল আনতে পারছি। এতে ছেলেমেয়েরা আরও সিরিয়াস হবে। শিক্ষকরাও খাতা দেখা এবং পড়ানোর ক্ষেত্রে সিরিয়াস হবেন এবং এখানে আমরা সঠিক বাস্তবতা দেখতে পাব। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, আমরা বিভিন্ন মানের সাড়ে ১২ শতাংশ খাতা বিভিন্ন জনকে দেখিয়েছি। খাতা দেখার পরে আমরা মিলিয়ে দেখছি যে ঠিক হচ্ছে কি হচ্ছে না। প্রধান পরীক্ষকের খাতা দেখার জন্য শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের রাখছি যারা এটা মূল্যায়ন করবেন। যাতে দেখতে পারি তারা (প্রধান পরীক্ষক) ঠিক মতো খাতা দেখেছেন কি না। তারা আগে মূল্যায়ন না করেই বলতেন মূল্যায়ন করেছি। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, পরীক্ষক চাপের মধ্যে ছিলেন যে তার খাতা আবার দেখা হতে পারে। এ জন্য তাকে কঠোর পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে। এবার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে কোন পরীক্ষকের ফাঁকি দেয়ার সুযোগ ছিল না। শতভাগ হয়ে গেছে এটা আমি বলছি না। সেদিক থেকে বলা যায় বিরাট পরিবর্তন এখানে এসেছে। নতুন পদ্ধতিতে একই ধারায় নম্বর দেয়ার কারণে তুলনামূলকভাবে অন্য বছরের চেয়ে বেশি ফেল করেছে। তবে এ বিষয়টি আমাদের কাছে কাম্য ছিল। এছাড়া এবার প্রশ্নপত্র আগে আউট করে নিয়ে উত্তর লিখবার সুযোগ বলতে গেলে বাস্তবে ছিল না। এটা এড়াতে শিক্ষকদের ওপর আমাদের প্রচ- চাপ ছিল। অন্যায় সুযোগ নিয়ে নম্বর বেশি পাওয়ার চেষ্টাও বন্ধ করার বিষয়টিও ফলাফলে সামান্য হলেও প্রভাব পড়েছে। এদিকে একই কথা বলছেন, বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও শিক্ষকরা। সবচেয়ে কম পাস করা কুমিল্লা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল খালেক জনকণ্ঠকে বলছিলেন, এবার খাতা মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে। এটা অত্যন্ত কঠোর ও কার্যকরী একটা উদ্যোগ। আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুসারে সকল কাজ করেছি। এতে ফলাফলে একটু প্রভাব পড়লেও যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে বলেই আমরা মনে করি। সিলেট বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম কবির তপাদার বলছিলেন, আসলে এত দিন খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি যথাযথ ছিল না। সেই তুলনায় এবার অনেক বেশি ভাল একটা উদ্যোগ নেয়া হয়। বাংলাদেশ এক্সামিনেশন ডেভেলপমেন্ট ইউনিটের সদস্যরা পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের সময় বোর্ডগুলোতে গেছেন। তারা মনিটরিং করেছে। এটা অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে। এতে পাসের হার কমলেও এটা অনেক ভাল একটা উদ্যোগ। আরও কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ দরকার বলে মনে করেন এ চেয়ারম্যান। এদিকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ফলাফল নিয়ে কথা বলছিলেন, বাংলাদেশ বেসরকারী কারিগরি শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ এম এ সাত্তার। তিনি বলছিলেন, তার প্রতিষ্ঠানে পাসের হার ৯৭ শতাংশের ওপরে। তবে এবার সরকারের নেয়া নতুন খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতি ছাড়াও কেন্দ্রে পরীক্ষা গ্রহণে কঠোরতা অবলম্বন ও প্রশ্ন ফাঁসের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়ার কারণে সারাদেশে পাসের হার কিছুটা কমেছে। তবে নতুন এ উদ্যোগ দেশের শিক্ষার জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে বলে মত তার। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ছায়েফ উল্লাহ বলছিলেন, পাসের হার কমেছে তবে আমরা খাতা মূল্যায়নে সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছি। এটা শিক্ষার জন্য খুবই ভাল একটা উদ্যোগ। সংবাদ সম্মেলনে বোর্ড চেয়ারম্যানদের হতাশা ফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রীর পরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। তবে প্রথমবারের মতো কোন পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের সংবাদ সম্মেলনে কোন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকেই মন্ত্রীর পাশে বসতে দেখা যায়নি। কারণ মন্ত্রীর পাশে বসেছিলেন দুইজন সচিবসহ কমপক্ষে সাতজন অতিরিক্ত সচিব। আর আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ দশ বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বসতে দেয়া হয় পেছনের সারিতে। এতে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা বিব্রতবোধ করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে কথা বলতে হয় দাঁড়িয়ে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বোর্ড চেয়ারম্যান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের এখানে দাওয়াত দিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলোÑ এই পরীক্ষার যাবতীয় কাজ আমরা করলেও আমাদের সংবাদ সম্মেলনে ঠিকমতো বসতে দেয়া হয়নি, কথাও বলতে দেয়া হয়নি। অথচ অতিরিক্ত সচিবদের এখানে কোন কাজই ছিল না। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে তাই দাঁড়িয়ে কথা বলতে হয়েছে পেছনের সারি থেকে। বিষয়গুলো মন্ত্রীর দেখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বোর্ড চেয়ারম্যান ও অন্যান্যরা।
×