ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যামনেস্টির বক্তব্য বিতর্কিত

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ৫ মে ২০১৭

এ্যামনেস্টির বক্তব্য বিতর্কিত

ভারতের রাজধানী দিল্লীতে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বক্তব্য একদিকে যেমন চিন্তা উদ্রেককারী, অন্যদিকে উদ্বেগজনক। উদ্বেগজনক এই কারণে যে, এ্যামনেস্টি নাকি এই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করতে চেয়েছিল ঢাকাতেই। কিন্তু সংগঠনটির একাধিক কর্মকর্তা ঢাকার ভিসা না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই তারা এটি প্রকাশ করেছে দিল্লীতে। এ নিয়ে এ্যামনেস্টি প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি না হলেও বিবিসিকে তারা বলেছে, বাংলাদেশে স্বাধীন মতামত প্রকাশের পরিবেশ যে আদৌ নেই, এই ঘটনাটি তা দেখিয়ে দিচ্ছে। এ্যামনেস্টির কর্মকর্তাদের বাংলাদেশের ভিসা প্রত্যাখ্যানের কোন খবর বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অথবা অন্য কোন সূত্রে গণমাধ্যমে আসেনি। সুতরাং এর সত্যাসত্য নির্ণয় দুরূহ। যা হোক, ৩ এপ্রিল মঙ্গলবার প্রকাশিত বিশেষ প্রতিবেদনে মানবাধিকার সংগঠনটি বলেছে, বাংলাদেশে গত তিন-চার বছরে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পুরোপুরি কণ্ঠরোধ করা হয়েছে। আতঙ্ক আর দমন-পীড়নের চাপে পড়ে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর পুরোপুরি স্তব্ধ। সরকার ধর্মনিরপেক্ষ ব্লগারদের রক্ষা তো করতে পারেইনি বরং নতুন আইন প্রণয়ন করে সাংবাদিক ও ব্লগারদের স্বাধীন মতামত ও কাজকর্মকে অপরাধের তকমা দেয়ার চেষ্টা করছে। সংস্থাটি এও বলেছে যে, মুক্ত সাংবাদিকতাকে সরকার যেন একটা অপরাধ বলেই গণ্য করছে। এ্যামনেস্টির মতে, বাংলাদেশে টানা বহু বছর ধরে সংসদীয় গণতন্ত্র থাকলেও সেটা স্বাধীন মত প্রকাশের রাস্তা পরিষ্কার করতে পারছে না। ভারতের এফসিআরএ আইনের মতো বাংলাদেশেও সম্প্রতি এফডিআরএ নামে একটি আইন প্রণয়ন করছে যাতে এনজিওগুলোর বিদেশী তহবিল পাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়। এ্যামনেস্টির প্রতিবেদনের মূল সুর হলো, জঙ্গীদের হামলা আর হুমকির ভয়ে বাংলাদেশে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ কমে এসেছে। সরকার তাদের সুরক্ষা দেয়ার বদলে উল্টো নানা কৌশল ও আইনের বেড়াজালে বাক স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করে চলেছে। এ প্রসঙ্গে তারা ব্লগার রাজীব হত্যাসহ কয়েকটি হত্যার উদাহরণসহ দু’জন বিতর্কিত সাংবাদিকের গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করেছে। সত্যি বলতে কী, এ্যামনেস্টির এই প্রতিবেদন বহুলাংশে বাস্তবতাবর্জিত এবং স্বকপোলকল্পিত। বাংলাদেশে অন্তত এই মুহূর্তে সংবাদপত্রে মত প্রকাশের ওপর আদৌ কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। মধ্যরাতে অনুষ্ঠিত একাধিক টিভি চ্যানেলে বহুল প্রচারিত ‘টক শো’র নামে প্রায় সবাই নিজের মত প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছেন এমনকি সরকারের যথেচ্ছ সমালোচনা করেই। নিকট অতীতে মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল, তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল। এমনকি একজন গ্রেফতার হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে। আইনের শাসনের ভিত্তিতে তারা প্রত্যেকেই বর্তমানে জামিনে আছেন এবং কেউ কেউ অবস্থান করছেন বিদেশে। সুতরাং এক্ষেত্রে এ্যামনেস্টির ঢালাও অভিযোগ আদৌ গ্রহণযোগ্য নয় এবং বাস্তব পরিস্থিতি তা সমর্থন করে না। সরকার এই প্রতিবেদনকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বিশিষ্টজনরা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করার অপচেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন। বর্তমান সরকার সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও সরকারের এই অবস্থান প্রশংসিত হয়েছে। সে অবস্থায় জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে কয়েকটি এনজিও এমনকি বৃহৎ একটি ব্যাংকের বিরুদ্ধে অর্থায়নের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের প্রেক্ষিতে হিসাব খতিয়ে দেখা যেতেই পারে। আইএস, তালেবান, আল-কায়েদার সঙ্গে এদেশীয় কোন কোন জঙ্গীগোষ্ঠীর যোগাযোগসহ অর্থায়নের অভিযোগটিও পুরনো। সে অবস্থায় তা বন্ধ করতে হলে আইনের প্রয়োজনীয়তা ও আবশ্যকতা অপরিহার্য। বর্তমানে সারা বিশ্বেই এ রকম আইনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে করাও হয়েছে। বাংলাদেশেরও এক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার কোন সুযোগ নেই। মনে রাখতে হবে যে, গণতন্ত্রের অন্যতম একটি শর্তই হলো সর্বত্র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার বিচার ইতোমধ্যে সম্পন্ন এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৮ জঙ্গীর সাজা হয়েছে। অন্যান্য হত্যাকা-েরও কয়েকটি তদন্তও বিচারাধীন। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট অংশগ্রহণ না করে প্রকারান্তরে নেমেছিল জ্বালাও-পোড়াও নীতিসহ মানুষ হত্যায়। স্বাধীনতাবিরোধী মানবতাবিরোধীদের বিচারসহ মৃত্যুদ- কার্যকরের ক্ষেত্রেও তাদের বিরোধিতা লক্ষণীয়। এর ফলে প্রকারান্তরে রাজনীতিতে একঘরে হয়ে যাওয়া বিএনপি-জামায়াত জোট প্রকাশ্যে জনসমাবেশ করতেও ভয় পাচ্ছে। এ্যামনেস্টির প্রতিবেদনেও অনেকটা যেন তাদের সেই মনোভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে! গণতন্ত্রের নামে জঙ্গীবাদ ও জ্বালাও-পোড়াও নীতি অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয়।
×