ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় বিনোদ খান্না

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৪ মে ২০১৭

বিদায় বিনোদ খান্না

পপি দেবী থাপা ॥ বিনোদ খান্না। বলিউড বিনোদন জগতে এক বিস্ময়ের নাম। আসমুদ্র হিমাচল যখন আলোড়িত কোরবানি কোরবানি, লায়লা ও লায়লার তালে। হাতের মুঠোয় যখন ধরা লাখো লাখো ভক্তের হৃদয়। অসংখ্য তরুণীর স্বপ্নে তখন তিনি দেখা দেন মায়াময় দৃষ্টির ‘হাম তুমকো চাহতে হ্যায় এ্যায়সে’ সেই প্রেমিক পুরুষ হিসেবে, বালিশের নিচে তার ছবি। অথবা দয়াবানের সেই রাগী তরুণ থেকে মায়াময় দৃষ্টির প্রেমিক হয়ে কন্যাস্নেহে কাতর পিতা। ঠিক তখনই তিনি উধাও। তিনি তখন পাল্লা দিচ্ছিলেন বলিউডের বিগ বি অমিতাভের পাশে। জানা গেল খ্যাতি, বিত্ত, প্রতিষ্ঠা সব ছেড়ে রজনী শের আশ্রমে মালির কাজ করছেন। ভাবা হয়েছিল তিনি হারিয়ে গেছেন। কিন্তু তিনি যে বিনোদ খান্না। হারিয়ে যাবার নন। ফিরে এসে দাপটের সঙ্গে উদ্ধার করেছেন নিজ রাজত্ব। সেই বিনোদ খান্না আর নেই। অসংখ্য ভক্ত-দর্শক আর সিনেমা প্রেমীদের রেখে গত ২৭ এপ্রিল না ফেরার দেশ চলে গেলেন হিন্দী সিনেমার সুপার হিরো বিনোদ খান্না। উচ্চমান ব্যক্তিত্বের অধিকারী, সুদর্শন এ অভিনেতার অভিনয়ের সুকৌশলী দক্ষতা, তার ঠোঁটের হৃদয় কারা হাসির ঝলক, দৃষ্টির গভীরতা যুগ যুগ ধরে রোমাঞ্চের খোরাক হয়ে থাকবে সকল ভক্তপ্রেমীর হৃদয়ের গহীনে।আশির দশকে বহু মহিলার ফ্যান্টাসি ছিলেন তিনি। বাবা পাকিস্তানের পেশোয়ারের কিষানচাঁদ খান্না, মা কমলার সংসারে তিন মেয়ের পর ১৯৪৬-এর ৬ অক্টোবর ছেলে বিনোদের জন্ম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা সপরিবারে মুম্বাই চলে আসেন। এখনকার সিডেনহাম কলেজে কর্মাসে পড়া চলাকালীন সময় থেকে সিলভার স্ক্রিনের প্রেমে পড়েন তিনি। আর এ প্রেমের রেশ বয়ে চলেছেন অতি মাত্রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত। অভিনেতা, প্রযোজক, এবং একজন সফল রাজনীতিবিদ হিসেবে জীবনের প্রতিটি স্থরে সাফল্য করেছে তার চরণচুম্বন। ১৯৬৮ সালে ‘মন কি মিত’-দিয়ে বলিউডে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। শুরুর দিকে হয় সহঅভিনেতা নতুবা ভিলেনের চরিত্র দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। এ চরিত্রাভিনয়েও সফল্যের সঙ্গে নিজের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছিলেন তিনি। ম্যাটিনি আইডল বিনোদ এ্যাকশন রোলেও ছিলেন দুর্দান্ত। এরপর ১৯৭১। লিড হিরো হিসেবে প্রথম ব্রেক ‘হাম তুম অর উও’-ছবিটিতে। কখনও যোগিতা বালি, কখনও রেখা, কখনও সাবানা আজমী, মাধুরী, কখনও ডিম্পল কপাডিয়ার সঙ্গে জুটি বেঁধে একের পর এক বক্স অফিস হিট দিয়েছেন ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিকে। তাঁর যোগ্যতার ভিত্তিতে ১৯৭৪ থেকে ১৯৮২-র মধ্যে কখনও জিতেন্দ্র, কখনও বা অমিতিাভ বচ্চনের থেকেও অধিক পারিশ্রমিক পেয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকা অবস্থাতে ১৯৮২ সালে হঠাৎ করে অভিনয় থেকে নিজেকে গুঁটিয়ে নেন। ও সময় তিনি ধর্মগুরু ওশো রজনীশের আশ্রমে থাকেন। এবং পাঁচ বছর পর আবারও ফিরে আসেন সগৌরবে, উপহার দেন ‘ন সাফ’ এবং ‘সত্যমেব জয়তু’–এর মতো সুপার হিট সিনেমা। শুধু অভিনয়ে নয় রাজনীতিতেও শক্তিশালী অবস্থান গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন বিনোদ খান্না। ১৯৯৭-এ তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর কেন্দ্রের বিজেপি সাংসদ ছিলেন তিনি। ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ এবং ২০১৪ থেকে আমৃত্যু গুরুদাসপুর থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তার নির্বাচিত এলাকার মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত ছিলেন এ মহান পুরুষ। তাই তো নিজের অসুস্থতার কথা সর্বসম্মুখে প্রকাশ না করলেও তার নির্বাচনী এলাকার জনগণ তা জেনে গিয়েছিলেন চলতি বছরের শুরুতে। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে দীর্ঘদিন পর তাঁর নির্বাচনী এলাকায় গেলে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’ এ প্রশ্নের জবাবে নিজের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান তিনি। সে সময়ে তিনি তাদের জানিয়েছিলেন ছয় বছর আগে তার ক্যান্সার আত্রান্ত হওয়ার কথা। তিনি অবশ্য এও দাবি করেন যে ক্যান্সোরের সঙ্গে যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন তিনি ও তার পরিবার, তার ক্যান্সার আশি ভাগ প্রতিকার হয়েছে। আরও বলেন, রাজনীতিবিদ না হলে নিজের অসুস্থতার কথা কাউকে জানাতেন না তিনি। তবে রাজনৈতিক কেরিয়ারের সাফল্য তার ফিল্মি কেরিয়ার কে ছুঁতে পারেনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় ১৪১টি ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। অমর আকবর এন্থনি, মুকাদ্দর কা সিকান্দর, কুরবানি, ফেরা ফেরি, দাবাং, দিলওয়ালের মতো ছবি সমৃদ্ধ হয়েছিল তার অভিনয়ে। এ বলিউড তারকা ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহ করেন দুবার। তাঁর রয়েছে তিন ছেলে এক মেয়ে। প্রথম স্ত্রী গীতাঞ্জলী পরে কবিতা। কবিতার সঙ্গে তিনি তার জীবন অতিবাহিত করেন। সন্তানদের মধ্যে অক্ষয় খান্না আর রাহুল খান্না ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিতে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। আরও দুই সন্তান সাক্ষী খান্না, শ্রদ্ধা খান্না। তাঁর মৃত্যুতে বলিউড ফ্লিম ইন্ডাস্ট্রিতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। এ শোক বার্তা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে গেছেন অমিতাভ বচ্চন, ঋষি কাপুর, ড্যানি, কবীর বেদী, সরোজ খানসহ একঝাঁক বলিউড ব্যক্তিত্ব। তার মৃত্যুতে শোকের সাগরে ভেসেছে ভারত। নিজ জীবনে অর্জন করেছেন অসংখ্য সম্মান। তার মতো করে ভক্তদের ভালবাসা আর নির্বাচনী এলাকার জনগণের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছেন একজীবনে খুব কম মানুষ। তার চেয়েও বড় অর্জন বলিউড সিনেমার আজ যে বিশ্বব্যাপী রমরমা বাজার তৈরির অন্যতম কারিগর ছিলেন বিনোদ খান্না। তার মৃত্যুতে আমাদের নিবেদনÑ ‘তুমি রবে নীরবে হৃদয়ে মম’।
×