ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনার চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৪ মে ২০১৭

নেত্রকোনার চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল ॥ যুদ্ধাপরাধী বিচার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক (ফরমাল চার্জ) অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হবে কি না এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ১৪ জুন দিন ধার্য করা হয়েছে। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ময়মনসিংহের আব্দুল সালামসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ফরমালচার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিলের জন্য ১৯ জুন পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। এদিকে পটুয়াখালীর ইসহাক সিকদারসহ ৫ আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রথম সাক্ষী মোঃ আইয়ুব আলী মাতাব্বরের জেরা শেষ করেছে আসামি পক্ষের আইনজীবী। পরবর্তী সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য ২২ মে দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ বুধবার এ আদেশগুলো প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউশন পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর হৃষিকেশ সাহা, প্রসিকিউটর রানা দাস গুপ্ত, আবুল কালাম, রেজিয়া সুলতানা চমন ও তুরিন আফরোজ। আসামিপক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট আব্দুস সাত্তার পালোয়ান, এ্যাডভোকেট মাসুদ রানা। নেত্রকোনার চার আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক (ফরমাল চার্জ) অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- নেত্রকোনার দুর্গাপুর থানার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের সহোদর ভাই, মোঃ খলিলুর রহমান (৭২) ও আজিজুর রহমান এবং (৬৫), আশোক আলী (৮২) এবং মোঃ শাহনেওয়াজ (৮৮)। আসামি খলিলুর রহমান ছাড়া বাকিরা গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আদেশের পর প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার এই চারজন আসামির বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগ দাখিল করা হয়। এর আগে আসামিদের বিরুদ্ধে ৫৪৬ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে গত ৩০ জানুয়ারি প্রসিকিউশনের কাছে দাখিল করে তদন্ত সংস্থা। আসামিদের বিরুদ্ধে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে তদন্ত শুরু হয়ে গত ৩০ জানুয়ারি শেষ হয়। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা থানা এলাকায় অবৈধভাবে আটক, নির্যাতন, অপহরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণের চেষ্টা, ধর্ষণ, হত্যা ও গণহত্যার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ২২ জনকে হত্যা, একজনকে ধর্ষণ, একজনকে ধর্ষণের চেষ্টা, অপহৃত চারজনের মধ্যে দুইজনকে ক্যাম্পে নির্যাতন, ১৪/১৫টি বাড়িতে লুটপাট এবং ৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগে অভিযোগ রয়েছে। ময়মনসিংহের ৯ আসামি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ময়মনসিংহের আব্দুল সালামসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ফরমালচার্জ (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) দাখিলের জন্য ১৯ জুন পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। নয় আসামির মধ্যে মোঃ আব্দুল সালাম, সুরুজ আলী ফকির, মোঃ ময়েন উদ্দিন ফারুকী, মোঃ আব্দুর রহিম ওরফে মোঃ আব্দুর রহিম মাস্টার ওরফে নূর বিএসসি, মোঃ জালাল উদ্দিন ও মোঃ রুস্তম আলী গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছে। অন্যদিকে পলাতক রয়েছেন তিন আসামি। পলাতকদের নাম প্রকাশ করেনি প্রসিকউশন। প্রসিকিউটর আবুল কালাম সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৯ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এই নয় রাজাকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বুধবার আদালতে (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) ফরমাল চার্জ দাখিলের জন্য আরও এক মাস সময় চেয়ে আবেদন করি। পরে ট্রাইব্যুনাল ফরমাল চার্জ দাখিলের জন্য সময় আবেদন মঞ্জুর করে এই দিন নির্ধারণ করেন। ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা থেকে ৯ জনের বিরুদ্ধে আনা চূড়ান্ত প্রতিবেদনে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক, অপহরণ, অগ্নিসংযোগসহ মোট ৮ অভিযোগ পাওয়া গেছে। ময়মনসিংহের ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অপহরণ, আটক, অগ্নিসংযোগসহ আট ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত ২০১৬ সালের ১৭ মে থেকে শুরু হয়ে চলতি ২৯ মার্চ শেষ হয়েছে।
×