ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনা সভায় ফখরুল

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আর একতরফা খেলতে দেব না

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৪ মে ২০১৭

একাদশ সংসদ নির্বাচনে আর একতরফা খেলতে দেব না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ জয় ঘরে তুললেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একতরফা আর খেলতে দেয়া হবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ছাড়া এ নির্বাচন হবে না। বুধবার দুপুরে রাজধানীর শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে কল্যাণ পার্টি আয়োজিত ‘রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন এবং আগামী নির্বাচন’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে ফখরুল বলেন, খবর বেরিয়েছে ১০ বছরে সাড়ে তিন লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। আমাদের প্রধান বিচারপতি বলেছেন, দেশে আইনের কোন শাসন নেই। প্রতি পদে পদে বিচার বিভাগের ওপর প্রশাসনিক প্রভাবের চেষ্টা করা হচ্ছে। আপীল বিভাগকে অচল করে দেয়া হচ্ছে। এটা অত্যন্ত বড় একটা অভিযোগ। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তিনটি প্রধান স্তম্ভ। তার মধ্যে একটি যার ওপর আমরা নির্ভর করি সেটা হচ্ছে বিচার বিভাগ। আরেকটি হচ্ছে প্রশাসনিক বিভাগ অর্থাৎ সরকার বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিচ্ছে না। মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের মন্ত্রীরা দেশকে বিনোদনের জায়গা মনে করেন। তাই সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা তারা ভাবেন না। আজ দেশে চালের দাম সবচেয়ে বেশি। কিন্তু চালের দাম কমানোর কোন উদ্যোগ নেই। তিনি বলেন, হাওড়াঞ্চলে অনেকদিন পর গেলেন প্রধানমন্ত্রী। ফিরে এসে তিনি আবার বিএনপিকে দোষারোপ করলেন। তাদের কাজই হচ্ছে বিএনপিকে দোষারোপ করা। বিএনপি মহাসচিব বলেন, হাওড়াঞ্চলের মানুষের হাহাকার আজও কমেনি। গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অস্ট্রেলিয়া গেছেন। এর আগে হাওড় উন্নয়ন অধিদফতরের ডিজি বিদেশে ছিলেন। তারা এই দেশটাকে মনে করছেন এটা বিনোদনের জায়গা। এ দেশে টাকা উপার্জন করবে আর বিদেশে ঘুরবে, বিনোদন করবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বীকার করেছেন যে, ক্ষমতা হারালে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। তাই দলকে ক্ষমতায় রাখতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। সেই নির্বাচন নাকি সংবিধান অনুয়ায়ী হবে। প্রশ্ন হচ্ছে কোন সংবিধান? যে সংবিধান আওয়ামী লীগ ভেঙ্গেচুরে, কেটে ছিন্নভিন্ন করে ফেলেছে। এটা সংবিধান নয়। এটা আওয়ামী লীগ মনগড়া কাগজ তৈরি করেছে। সেখানে আমাদের নির্বাচন করতে বলছেন, নির্বাচন হলে কি করবেন? আপনারা সেখানে রেফারি ও লাইন্সম্যান। সুন্দরভাবে খেলে যাবেন, অন্য কাউকে খেলতে দেবেন না। আপনারা একতরফা গোল দিয়ে যাবেন, ওভাবে কী খেলা হবে? একতরফা খেলা হবে না। এ সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়া কঠিন এটা প্রমাণ হয়ে গেছে। সে জন্য আমরা বলেছি নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রয়োজন হবে। কিন্তু কীভাবে হবে? সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আসুনÑ আমরা সবাই মিলে সংলাপ করি, কথাবার্তা বলি, সমস্যার সমাধান করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করি। আসুন বিএনপির প্রস্তাবগুলো নিয়ে কথা বলেন, আলোচনা করেন। জানি তাও করবেন না। কারণ কথা বলতে গেলেই সত্যটা চলে আসবে। সত্য মেনে নিতে হবে সেই অনুয়ায়ী নির্বাচন দিতে হবে। কিন্তু আপনারা সেটা করবেন না। সেটা করলে আপনাদের পরাজয় হবে। তিনি বলেন, দেশে এখন এক দলের শাসন চলছে, এক ব্যক্তির শাসন চলছে। সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, আপনি মুখে বলবেন গণতন্ত্রের কথা। আর বাস্তবে করবেন অগণতান্ত্রিক কাজ। জঙ্গীবাদ দমন করছেন। অথচ এখন পর্যন্ত একজন জঙ্গীকে ধরে সত্য উদ্ঘাটন করতে পারেননি। বরং যাদের জঙ্গী সন্দেহে আটক করেছেন তাদের প্রত্যেককে গুলি করে মেরে ফেলছেন। এই নিয়ে গোটা জাতি একটি রহস্য ও ধূম্রজালের মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, যাদের হাতে গণতন্ত্র এসেছে তাদের হাতেই গণতন্ত্র বাবার নিহত হয়েছে। দুঃখজনক হলো আওয়ামী লীগ ১৯৭১ সালে গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল। তারাই আবার গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল করেছে, ভিন্নমত দমন করেছে। এখনও করছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা তিস্তা নদীর পানির সমস্যা সমাধান হবে। কিন্তু সেই সমস্যা সমাধান হয়নি। সম্ভাবনাও নেই। যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা দরকষাকষি করতে পারতাম সেগুলো আগেই দিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ কথাগুলো বললেই আমরা ভারতবিরোধী? আমরা স্পষ্ট করে বলছি আমি, আমার দল ও জোট ভারতবিরোধী নই। ভারত আমাদের প্রতিবেশী, বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছে। তার অর্থ এই নয় নতজানু হয়ে আমাদের সবকিছু বিলিয়ে দেব। ১ মে সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রসঙ্গ টেনে ফখরুল বলেন, বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হয় না। আমরা জেলাগুলোতে কর্মিসভা ও সম্মেলন করতে হলরুম পাই না। কনফারেন্স রুমের জন্য অনুমতি নিতে হয় তা না হলে বলে বিএনপি নাশকতা করছিল। এভাবে দেশ চলতে পারে না, রাষ্ট্র চলতে পারে না। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ দলটির মহাসচিব এম এম আমিনুর রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা আজাদ মাহবুব, মোঃ ইলিয়াস, সাহিদুর রহমান তামান্না প্রমুখ। পরে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ সরকার সংবাদপত্রকে নিয়ন্ত্রণ করছে। দুর্ভাগ্য আমাদের যে আওয়ামী লীগ ও মুক্ত গণমাধ্যম একসঙ্গে যায় না। তারা যতবার ক্ষমতায় এসেছে প্রথম আক্রমণ করেছে গণমাধ্যমের ওপর। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ দেশে না আছে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, না আছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা, না আছে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। সবকিছুই একটা বিশেষ গোষ্ঠীর হাতে চলে গেছে। তাদের বাইরে এখানে কেউ কিছু করতে পারবে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি শওকত মাহমুদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক নেতা রুহুল আমিন গাজী, এম এ আজিজ, এম আবদুল্লাহ, আবদুল হাই শিকদার, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, আবদুস শহীদ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কাদের গণি চৌধুরী, মোদাব্বের হোসেন, খোরশেদ আলম, সাখাওয়াত হোসেন বাদশা, মোরসালীন নোমানী, এ কে এম মহসীন, ইলিয়াস খান প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতনের ওপর একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিএনপি মহাসচিব।
×