ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মূল কমিটির আলোচনাসভা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্মৃতি পুরস্কার প্রদান

জাহানারা ইমামের আন্দোলন সফল করতে ঐক্য চাই

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ৪ মে ২০১৭

জাহানারা ইমামের আন্দোলন সফল করতে ঐক্য চাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাস্তবায়ন করতে হলে মুক্তিযুদ্ধের শত্রুদের নির্মূল করতে হবে। ২৫ বছর আগে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম সেই আন্দোলনই শুরু করেছিলেন। তার সেই আন্দোলনকেই আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জাহানারা ইমামের সেই আন্দোলন সফল করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। বুধবার শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ধানম-ির ডব্লুভিএ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলনের ২৫ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্মৃতি পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বক্তারা আরও বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা সম্পর্কে জানি। তবে মুজাহিদ বাহিনী সম্পর্কে অনেকেই জানে না। আজকে যারা হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে কর্মকা- পরিচালনা করছে, তারাই একাত্তরে মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে দেশের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। জামায়াতের সঙ্গে সঙ্গে সেইসব মুজাহিদ বাহিনীর সদস্যদেরও নির্মূল করতে হবে। তারা বলেন, স্বাধীনতা বিরোধী চক্র দেশে নানাভাবে জঙ্গীবাদ মৌলবাদ ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। ওইসব ষড়যন্ত্রকারীকে প্রতিহত করতে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির সহ সাধারণ সম্পাদক ডাঃ নুজহাত চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির। এ সময় বক্তব্য রাখেন, সংগঠনটির সহ-সভাপতি শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহম্মদ শফিকুর রহমান। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর থেকেই এই পুরস্কার চালু করল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। এবার নাটোরের স্থানীয় দৈনিক প্রান্তজন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার কামাল হোসেনকে এই পুরস্কার দেয়া হয়। পুরস্কার বিজয়ীকে নগদ ৫০ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও বই প্রদান করা হয়। শাহরিয়ার কবির জানান, আগামী বছর থেকে জাতীয় দৈনিক, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া ও স্থানীয় দৈনিক এই তিনটি ক্যাটাগরিতে এই পুরস্কার দেয়া হবে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের আন্দোলনের এই ২৫ বছরে অনেক প্রাপ্তির পাশাপাশি অনেক আকাক্সক্ষাও রয়েছে। তিনি বলেন, ’৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে অন্ধকার নেমে আসে। সেই অন্ধকারেই স্বাধীনতা বিরোধী চক্র স্বাধীন বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল। ৭৫-৮০ সাল পর্যন্ত সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন হয়েছিল। বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিও ওঠে। তবে জাতীয় ভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি তোলা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, ’৯১ সালে স্বৈরশাসকের পতনের পর জাতীয়ভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রথম দাবি তোলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। গণআদালতে বিচার করেন যুদ্ধাপরাধীদের। ওই সময় থেকেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে এই আন্দোলন চলতে থাকে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এই আন্দোলনে সমর্থন দিলেও সব সময়ই এর নেতৃত্বে ছিল একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এই আন্দোলনে যুক্ত হয়ে অনেক ভূমিকা রাখেন। মন্ত্রী বলেন, বিএনপি বার বার প্রমাণ করেছে তারা যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থন করে। ’৯১ সালে যখন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গণআদালতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেন তখনও তিনি এর বিরুদ্ধে ছিলেন। আবার ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় বারের মতো ক্ষমতায় এসে যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য সংসদে বিল উত্থাপন করে তখনও বিএনপি সংসদের বাইরে গিয়ে এর বিরোধিতা করে। খালেদা জিয়া দুই দুইবার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নামক অগ্নি পরীক্ষায় ফেল করেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া যেমন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিরোধিতা করছেন, তেমনি এখন জঙ্গীবাদ নির্মূলের কার্যক্রমেরও তিনি বিরোধিতা করে আসছেন। খালেদা জিয়া ও বিএনপি বার বার প্রমাণ করেছে তারা কখনও বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না, বরং দেশের বিরোধীদেরই সমর্থন দিয়েছেন।
×