ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদে অর্থ প্রতিমন্ত্রী

টাকা পাচারের তথ্য তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৪ মে ২০১৭

টাকা পাচারের তথ্য তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ থেকে ‘এক বছরে ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার’ সংক্রান্ত ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) প্রকাশিত প্রতিবেদন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংককে ইতোমধ্যেই বিষয়টি তদন্ত বা খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনটির সত্যতা সম্পর্কে পরিষ্কার না হলেও সরকার বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছে না। অর্থ চুরি কিংবা পাচার রোধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নেবে, আইন প্রয়োগে কখনই পিছ পা হবে না। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের অনুপস্থিতিতে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান জবাব দিতে গিয়ে এসব কথা বলেন। অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, যে ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তা বিশাল অঙ্কের টাকা। বর্তমানে উন্মুক্ত তথ্য প্রবাহের যুগে আমরা অনেক তথ্য পেয়ে থাকি। সেখানে অনেক ভাল তথ্যের পাশাপাশি অনেক প্রশ্নবিদ্ধ তথ্যও থাকে। তবে আমরা জিএফআই’র প্রকাশিত তথ্যকে আমরা উড়িয়ে দিচ্ছি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিট রয়েছে, তাদের কাজই হচ্ছে এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা, তদন্ত ও খোঁজখবর নেয়া। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই আমরা এই চুরির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছি। সরকার তাতে সার্বিক সহায়তা ও নির্দেশনা দেবে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের চুরি না হয়। তবে একটি কথা বলব যে- চুরি অহরহ হবেই, তবে আমাদের সাবধান হতে হবে। তবে আইন প্রয়োগে আমরা পিছু পা হব না। এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, অর্থ পাচার রোধে বর্তমানে বাংলাদেশে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১৩ বলবৎ রয়েছে, যা সর্বশেষ ২০১৫ সালের ২৬ নবেম্বর সংশোধিত হয়। এ আইনের বিধান অনুসারে বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পত্তি নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিদেশে পাচার মানিলন্ডারিং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই আইনে অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন চার বছর এবং সর্বোচ্চ ১২ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং এর অতিরিক্ত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ বা ১০ লাখ টাকা অর্থদ-ের বিধান রয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত আইনের প্রয়োগে কোন সমস্যা/ প্রতিবন্ধকতা পরিলক্ষিত হলে তা ভবিষ্যতে সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। আবদুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংক কর্তৃক গত ৫ বছরে (২০১২-১৬) মোট ২ হাজার ৪১ কোটি ২৫ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে জনতা ব্যাংক সর্বাধিক ১ হাজার ৩৮১ কোটি টাকার সুদ মওকুফ করেছে। সবচেয়ে কম সুদ মওকুফ করেছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। তিনি জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গ্রাহক মওকুফোত্তর পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে সুদ মওকুফ সুবিধা বাতিল হয়ে যায়। সরকারী দলের আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যেমন- ডাল, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুন, সকল ধরনের বীজ, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ প্রভৃতি আমদানিতে শুল্ক-কর মওকুফ করা আছে। অর্থমন্ত্রীর কাছে জবাব চেয়েছেন ॥ বাদল সংসদ রিপোর্টার ॥ গত ৮/৯ বছরে ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা কিভাবে পাচার হলো সে বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে জবাব চেয়েছেন জাসদ একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দীন খান বাদল। পাশাপাশি এই পাচার বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে জাতীয় সংসদও অর্থপাচারকারীদের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে বলে তিনি সতর্ক করেন। বুধবার রাতে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অর্থপাচার সম্পর্কিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে অর্থমন্ত্রীর কাছে এই জবাব চান। বাদল বলেন, এত বড় বিষয় চোখ এরিয়ে গেলে দেশের সর্বনাশ হবে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে, গত ১০ বছরে ৬ লাখ ৬ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা পাচার হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালেই ৯১১ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তাঁর নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই ধরনের গর্ত যদি থাকে তবে সেই গর্ত সব খেয়ে ফেলবে। এতে দেশের চূড়ান্ত বিপর্যয় দেখা দেবে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে এই সংসদও অর্থপাচারকারীদের হাতে জিম্মি হয়ে যাবে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলে থাকেন এদের হাত অনেক লম্বা। আপনার (অর্থমন্ত্রী) কাছে তো এই জবাব চাইব না। আমি একজন এমপি হিসেবে আপনার কাছে পরিষ্কার জবাব চাই।
×