ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে বিএনপি নেতা উধাও

প্রকাশিত: ০৪:২০, ৪ মে ২০১৭

বরিশালে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে বিএনপি নেতা উধাও

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ ডমিরো এগ্রো বিডি লিমিটেড নামের গরুর ফার্মের অনুকূলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার আশ্বাস দিয়ে এলাকার অসংখ্য ব্যবসায়ী ও গ্রাম্য সমিতির মাধ্যমে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে চার মাস আগে উধাও হয়ে গেছে প্রভাবশালী বিএনপি নেতা গাজী মাহবুব আলম। ঘটনাটি গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী গ্রামের। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সম্পূর্ণ প্রতারণার মাধ্যমে এলাকার ব্যবসায়ী ও সমিতির মাধ্যমে ৫০ লাখ টাকা ধার নিয়ে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে নিজ বাড়িতে ওই এগ্রো বিডি লিমিটেডের সুরম্য অফিস, সু-বিশাল গরুর ফার্ম, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, গো-খাদ্যের জন্য নেপিয়ার ঘাস চাষ করা হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় গরু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কয়েকদিনের জন্য বেশ কিছু গরু ফার্মে এনে লালনপালন করা হয়েছে। এরই মাঝে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার প্রতারণায় ব্যাংকের ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন অব বাংলাদেশের কর্মকর্তা এটিএম আহামেদুর রহমান সরেজমিনে কথিত ডমিরো এগ্রো বিডি লিমিটেডের কার্যালয়সহ পুরো ফার্ম পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তার দেয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওই গরুর ফার্মের অনুকূলে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ দেয়া হলেও তা কথিত গরুর ফার্মের চেয়ারম্যান আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে বিএনপি নেতা মাহবুব আলমের আত্মগোপনের পর পাওনাদারদের অব্যাহত চাপের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তার অসহায় পরিবার। ব্যাংকের কাছে গচ্ছিত ১৩ ওয়ারিশের বাড়িঘরের ৩২০ শতক জমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন বিএনপি নেতার অন্যান্য ওয়ারিশরা। জানা গেছে, চাঁদশী গ্রামের চাঁদশী ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী মাহবুব আলম তার বোন জামাতা নজরুল ইসলাম রতন ও আগৈলঝাড়ার সাবেক মন্ত্রী সুনীল গুপ্তের ছেলে কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা অশোক গুপ্ত ছেলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার জন্য গরুর ফার্ম করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই মতে, ২০১৪ সালে অশোক গুপ্তর স্ত্রী বাসন্তী গুপ্তকে চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত করে ডমিরো এগ্রো বিডি লিমিটেড নামের গরুর ফার্মের কার্যক্রম শুরু করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে বিএনপি নেতা গাজী মাহবুব আলম তার পৈত্রিক সূত্রে রেখে যাওয়া ১৩ ওয়ারিশের বাড়িঘরের প্রায় ৩২০ শতক জমি পাওয়ার অব এ্যাটনির মাধ্যমে নিজে এককভাবে মালিক হয়ে পুরো কাগজপত্র মটগেজ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখেন। পরবর্তীতে এলাকার পরিচিত বন্ধুবান্ধব, ব্যবসায়ী ও গ্রাম্য সমিতির কাছ থেকে বিভিন্ন অঙ্কের ৫০ লাখ টাকা ধার বাবদ নিয়ে ডমিরো এগ্রো বিডি লিমিটেডের সুরম্য অফিস, সু-বিশাল গরুর ফার্ম, বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, গো-খাদ্যের জন্য বাড়ির সামনে নেপিয়ার ঘাস চাষ ও বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করেন। কটকস্থল গ্রামের ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম দিপু জানান, ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্কে গাজী মাহবুব আলম তার কাছ থেকে এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার কথা বলে ১০ লাখ টাকা ধার নেন। এ জন্য তাকে নিজের স্বাক্ষরিত ব্যাংকের চেক প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে টাকা পরিশোধ না করে মাহবুব আলম নানা টালবাহানা শুরু করেন। পরবর্তীতে ব্যাংকে যোগাযোগ করে চেক ডিজঅনার করে মাহবুব আলমকে উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছে। একই ভাবে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী খায়রুল ইসলামের কাছ থেকে সাত লাখ, নয়ন তালুকদারের কাছ থেকে তিন লাখ, স্থানীয় সমিতির মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকাসহ একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। এসব টাকা পরিশোধ করতে না পেরে গত চার মাস আগে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপন করেছেন বিএনপি নেতা গাজী মাহবুব আলম। সরেজমিনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপি নেতার সহোদর অপু গাজী বলেন, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রথম কিস্তিতে ৭০ লাখ, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪২ লাখ, তৃতীয় দফায় ৪০ লাখ ও সর্বশেষ ২৮ লাখ টাকা ছাড় করানো হলেও পুরো টাকা চেয়ারম্যান বাসন্তী গুপ্ত আত্মসাত করেছেন। এ জন্যই আমার ভাই মাহবুব আলমকে পাওনাদারদের চাপের মুখে বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অতিসম্প্রতি বাসন্তী গুপ্তকে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে আমার ভাই গাজী মাহবুব আলমকে চেয়ারম্যান করে বাংলাদেশ ব্যাংকে কাগজপত্র জমা দিয়ে ঋণের বাকি টাকা ছাড় করানোর চেষ্টা চলছে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিএনপি নেতার মা শেফালী বেগম বলেন, একদিকে পাওনাদারদের অব্যাহত চাপ অন্যদিকে বাড়িঘরের কাগজপত্র ব্যাংকে বাধা রাখায় পুরো সম্পত্তি বেহাত হওয়ার আশঙ্কায় তারা এখন চরম হতাশার মাঝে দিনাতিপাত করছেন। বিএনপি নেতা গাজী মাহবুব আলমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা পারভীন আক্তার হতাশার সুরে বলেন, শুরুতেই আমি হঠাৎ কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন না দেখার জন্য মাহবুবের সকল কাজের বিরোধিতা করেও ব্যর্থ হয়েছি।
×