ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণে-

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৪ মে ২০১৭

সমুদ্র সম্পদ সংরক্ষণে-

বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাই সমুদ্রবেষ্টিত। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের আধার এই সমুদ্রকূল। দেশের সম্পদের বিশাল উৎসও এই সমুদ্রসীমা। এ সীমানার মধ্যে শুধু বিশাল মৎস্য ভা-ার নয়, রয়েছে অফুরন্ত প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের ভা-ারও। কিন্তু এই সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকার। সোমবার জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে সমুদ্র সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আর্থিক সক্ষমতা, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ জনশক্তি, সমুদ্র নিরাপত্তা, সমুদ্রে বিনিয়োগ ইত্যাদি চ্যালেঞ্জ এখনও সরকারকে মোকাবেলা করতে হচ্ছে। অথচ সমুদ্রসীমা নিয়ে ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সালিশীর মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে বাংলাদেশ ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার বেশি সমুদ্র এলাকা তথা ‘টেরিটোরিয়াল সি’র অধিকারী হয়েছে। পেয়েছে ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার। এই সমুদ্র-ভূমি তলদেশ থেকে তুলে আনা সম্ভব অতি মূল্যবান খনিজ সম্পদ, যার মধ্যে রয়েছে ইউরেনিয়াম আর থোরিয়ামের মতো মহামূল্যবান খনিজ জ্বালানি সম্পদ। ‘ব্লু ইকোনমি’ নামে বহুল উচ্চারিত এই নীল সমুদ্রের অর্থনীতির হাতছানির সংবাদটি এসেছে আমাদের ‘বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের’ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন থেকে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার কিছু কিছু অংশে ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম পাওয়া গেছে। বঙ্গোপসাগরের ১৩টি স্থানে ভারি খনিজ বালু আছে। এই বালু ইলমেনাইট, গার্নেট, সিলিমানাইট, জিরকন, রুট হিল ও ম্যাগনেটাইট সমৃদ্ধ। সমুদ্রের ১৪০০ থেকে ৩৭০০ মিটার গভীরে আছে কোবাল্ট, ভানডিয়াম, মলিবডেনাম ও প্লাটিনামে গঠিত ম্যাঙ্গানিজ ক্রাস্ট। রয়েছে তামা, সিসা, জিংক। কেবল খনিজ সম্পদ পূর্ণ নয়, বঙ্গোপসাগরের তলদেশ, এর ৩০ থেকে ৮০ মিটার গভীরতায় সন্ধান মিলেছে এক ধরনের ‘ক্লে’-এর। অর্থাৎ মাটি জাতীয় পদার্থের। অগভীর সমুদ্রের এই ‘ক্লে’ উপাদানটি উত্তোলন করা হলে বাংলাদেশের সিমেন্ট শিল্পে এক অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটতে পারে। কারণ, ‘ক্লে’ সিমেন্ট তৈরির অন্যতম কাঁচামাল। এক সময়ের দরিদ্র আরব রাষ্ট্রসমূহের সামগ্রিক অর্থনীতির রূপ, মরুভূমির বুকে তরল সোনা জ্বালানি তেল পাওয়ার পর যেভাবে বদলে গিয়েছিল, আমাদের সমুদ্র সম্পদের বদৌলতে তেমনি বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের সার্বিক অর্থনীতিও। বিশ্বের সমুদ্র উপকূলীয় প্রতিটি দেশ তাদের সমুদ্রসীমায় সম্পদের জরিপ, গবেষণা, অনুসন্ধান ও সম্পদ আহরণে ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে। সে অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলাদেশও তার সমুদ্র সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশই তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শেষ দিগন্ত হিসেবে উন্নয়ন কর্মসূূচী অব্যাহত রাখছে। বাংলাদেশের মতো একটি উপকূলীয় দেশের জন্যও সমুদ্র পরিবহন ও বন্দর সহযোগিতা বৃদ্ধি, মৎস্য আহরণ, মৎস্য রফতানি, পর্যটন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণ সর্বোপরি জীববিজ্ঞান ও সমুদ্রবিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রে উন্নয়নের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হওয়ার বহু সম্ভাবনা রয়েছে। এই লক্ষ্য পূরণে আমাদের দরকার হবে সমুদ্রতলের মূল্যবান সম্পদরাজি শনাক্তকরণ ও উত্তোলনের জন্যে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি, কারিগরি সক্ষমতা এবং দক্ষ মানবসম্পদ। মূল কথা, আমাদের সমুদ্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। এর সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবহারের দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।
×