ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ রফিকুল ইসলাম

চরম দুর্ভোগে মানুষ

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ৪ মে ২০১৭

চরম দুর্ভোগে মানুষ

বাংলাদেশের কৃষি মৌসুমী বায়ুর ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। মৌসুমী বায়ুর অনুকুল ও প্রতিকুল প্রভাবের উপর এদেশের কৃষির ভাল-মন্দ নির্ভর করে থাকে। কিন্তু, সেই প্রতিকুলতা নজীরবিহীন হলে, আক্রান্ত এলাকার জনগণ হয়ে পড়ে বিপন্ন, উদ্বিগ্ন ও দিশেহারা। যা এবার ঘটেছে আগাম অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ী বণ্যায় ৮লাখ ৫৮হাজার ৪৬০ হেক্টর কৃষিভূমির হাওড় এলাকা জুড়ে। ‘একফসলী ধান, হাওড়বাসীর প্রাণ’- সেই প্রাণকে বিপন্ন করে ডুবে গেছে আবাদী ৯০% এলাকা। ফলে সৃষ্টি হয়েছে বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক ক্ষতি- ফসল ডুবি, মাছের মড়ক, হাঁসের মড়ক, গবাদি পশুখাদ্যের সংকট ইত্যাদি। শুধু বর্তমানে নয়, যার কারণে হতে পারে সুদূরপ্রসারী আর্থ-সামাজিক নেতিবাচক প্রভাব। তাই হাওড়বাসীর চোখে-মুখে আজ বোবা কান্না ও করুণ আর্তনাদ। কারণ, শুধু বর্তমান ফসলটিই যায়নি, চলে গেছে আগামী ফসল উৎপাদনের পুঁজি, মরে গেছে বংশবিস্তারকারী ডিমওয়ালা মা মাছটিও। গোচারণভূমি ও খাদ্যের অভাবে বিক্রি করতে হচ্ছে গবাদি পশু, যা দিয়ে তাৎক্ষণিক পরিশোধ করতে হচ্ছে মহাজনী ঋণের আসল ও চড়া সুদ। অথচ, প্রাকৃতিক প্রতিকুলতা জয়ের যুগে বাংলাদেশ যখন অপার সম্ভাবনার দিকে এগুচ্ছে- তখন তো এমন ভয়াবহ অবস্থার কথা ছিল না। হাওড়াঞ্চলে আগাম বৃষ্টি-বন্যা তো নতুন কিছু নয়। তারপরেও কেন ৫.২৩ মিলিয়ন টন খাদ্য উদ্পাদন কারী হাওড় এলাকা আজ বিধ্বস্ত? পুর্ব-অভিজ্ঞতা এবং বৃষ্টি-প্লাবনের সর্বোচ্চ রেকর্ড বিবেচনায় নিয়ে হাওড়ের ফসল রক্ষা বাঁধগুলো সময়োপযোগী ও কার্যকরভাবে নির্মাণ করলে এবং নদীগুলো ড্রেজিং করে দু’পাড়ে বাঁধ নির্মাণ করে দিলে এমনটা নাও হতে পারতো। এজন্যে হাওড় রক্ষা প্রক্রিয়ায় ‘চৈতের গীত বৈশাখে গাওয়ার’ রীতি এবং সকল প্রকার দুর্নীতি বন্ধে সুসমন্বিত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া অতি জরুরী। বর্তমান সমস্যা মোকাবেলায় ত্রাণসামগ্রী ও সাহায্য-সহযোগিতা যেন প্রকৃত ও বেশি দুর্দশাগ্রস্ত জনগণের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছায় তার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। অন্য এলাকা থেকে ডিমওয়ালা মাছ জরুরী ভিত্তিতে হাওড়ে অবমুক্ত না করলে মাছেরও আকাল দেখা দেবে, হাওড়বাসী ও সমগ্র দেশবাসীর জীবিকা ও মাছের সঙ্কট বাড়বে। সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ মুহূর্তে সদয় হয়ে বিনাসুদে ঋণ সরবরাহ করার পাশাপাশি অতীতের ঋণ বা ঋণের সুদ মওকুফের ব্যবস্থা নিলে হাওড়বাসী ভরসা পেতো। হাওড়ের আগাম-আচমকা প্লাবনজনিত সমস্যার সমাধান এবং জীবিকা ও কর্মসংস্থানের জন্য গতানুগতিক ভাবনা থেকে সরে এসে পরিবেশ বান্ধব ও টেকসই উৎপাদনমূলক খাতের কথা ভাবতে হবে। হাওড় এলাকার টেকসই বন্যা প্রতিরক্ষা বাধঁগুলোতে স্থানোপযোগী শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা সম্ভব হলে হাওড়বাসী অবসর ও আপদকালীন সময়ে অর্থনৈতিক সংকটে পড়বে না। ভবিষ্যত সংকট মোকাবেলায় হাওড়বাসীরা তাদের সুদিনে ফুডব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে খাদ্য এবং অর্থসঞ্চয়ের ব্যবস্থা করতে পারে। এরকম সংকট মোকাবেলায় এদেশে শষ্যবীমা চালুকরণ অতিজরুরী। সর্বোপরি, সমগ্র বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় কার্যকর ভুমিকা না রাখলে এরকম বিপদ আমাদের পিছু ছাড়বে না। সুসঙ্গ মহাবিদ্যালয়, দুর্গাপুর নেত্রকোণা থেকে
×