ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শস্য ও মৎস্যভান্ডা

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ৪ মে ২০১৭

শস্য ও মৎস্যভান্ডা

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৪০ অধিক উপজেলার সম্ভাবনাময় নিম্নাঞ্চল নিয়ে হাওড় অঞ্চল। এর ভূ-ভাগ ‘শস্যভা-ার এবং নিম্নভাগ মৎস্যভা-ার’ নামে পরিচিত। পাহাড়ী ঢল এবং বিগত ৩৫ বছরের তুলনায় ১১৯ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হওয়ায় হঠাৎ করেই দুর্যোগের কবলে পড়ে হাওড়বাসী। সুনামগঞ্জে সর্বশেষ পাগনার হাওড়ের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় হাওড় এলাকার শতভাগ ফসল পানির নিচে। ধানের পাশাপাশি তাদের জীবন-জীবিকার অন্যতম উৎস মাছ, হাঁস, মুরগিতে লেগেছে মড়ক। অকাল প্লাবনে গরু, ছাগলও বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। ফলে কৃষকের সোনালীস্বপ্ন হয়েছে চুরমার। আকাশে বাতাসে ভেসে আসছে করুণ আর্তনাদ। সারা বছরের খাদ্য, সন্তানের লেখাপড়া, বিয়ে, চিকিৎসা সবই নির্ভর করত ফসলের ওপর। ফসল ভাল হলে হাওড়বাসীর আনন্দের সীমা থাকত না। কিন্তু এবার সেই স্বপ্ন রূপ নিয়েছে আহাজারিতে। ফসল ডুবে এবং মাছের মড়কের কারণে ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে হাওড়বাসী। সহায়সম্বল হারানো বিশ লক্ষাধিক পরিবারের এই কঠিন পরিণতি কাছ থেকে না দেখলে তাদের অবস্থা অনুভব করা অত্যন্ত কঠিন। হাওড় এলাকায় প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও বরাদ্দকৃত সরকারী অর্থ হাওড়পাড়ে কৃষকদের ভাগ্য পরিবর্তনে তেমন কাজে আসেনি। অন্যদিকে হাওড়ে যখন মহাবিপর্যয় খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ সারা বাংলাদেশের মানুষ উদ্বিগ্ন তখন ‘বাংলাদেশে হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদফতরের’ মহাপরিচালকসহ ৯ কর্মকর্তা বিদেশ সফর করছেন। ফলে এই মহাবিপর্যয়ে কার্যত কোন ভূমিকা গ্রহণ করতে পারেনি অধিদফতর। যার মধ্য দিয়ে হাওড় এলাকায় অধিদফতরের ভাবনার প্রকৃত অবস্থাই ফুটে ওঠে। যে কারণে বিপর্যয় রূপ নেয় মহাবিপর্যয়ে। হাওড়গুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য পাহাড়ী ঢলে পানি উপচে পড়ে হাওড়ে অকাল বন্যা হয়। হাওড়গুলো থেকে জলরাশি নেমে যাওয়ার জন্য যে নদী-খাল ছিল সেগুলো অনেকই আজ নিশ্চিহ্ন। সাংহাই, হোয়ংহো এবং পীত নদীকে চীনের দুঃখ বলা হতো। কমরেড মাও সে তুং লং মার্চের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে জনগণের স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে নদীগুলোকে যেখানে খনন করা দরকার সেখানে খনন করেন এবং যেখানে বাঁধ নির্মাণ করা দরকার যেখানে বাঁধ নির্মাণ করেন। ফলে নদ-নদীগুলো চীনের আর্শীবাদ হয়ে যায়। এক কথায় নদী শাসনের ফলে চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো। হাওড় এলাকাগুলোকে চীনের অভিজ্ঞা কাজে লাগিয়ে মানুষের শাসনে হাওড়গুলো নিয়ে আসলে ক্ষুদা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। হাওড় এলাকায় কৃষকদের পূনর্বাসন করে আগামী মৌসুমের জন্য বিনামূল্যে সার-বীজ সরবরাহ কতে হবে। না হলে দেশের এক-পঞ্চমাংশ ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে, বিপর্যয় ঘটতে বিপুল মৎস্যভা-ারে। এরকম অবস্থায় বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের উচিত হাওড়পাড়ের মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে দীর্ঘমেয়াদী ভূমিকা গ্রহণ করা। কালীহাতি, টাঙ্গাইল থেকে
×