ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতিতে সম্মতি

প্রকাশিত: ০৩:৩৪, ৪ মে ২০১৭

সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতিতে সম্মতি

সিরীয় যুদ্ধ বন্ধে অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসবিরোধী লড়াই নিয়েও কথা বলেন দুই নেতা। ট্রাম্প কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় বুধবার অস্ত্রবিরতি আলোচনায় একজন প্রতিনিধিও পাঠিয়েছেন। মাসখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় বিমান হামলার চালালে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটার পর দুই নেতা প্রথমবারের মতো ফোনালাপ করেন। খবর বিবিসি অনলাইন ও নিউইয়র্ক টাইমসের। আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানানো হয়েছে হোয়াইট হাউস ও ক্রেমলিনের বিবৃতিতে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা ও ভবিষ্যতে সরাসরি বৈঠকের সময় নির্ধারণসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে। সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ বিদ্রোহীদের ওপর রাসায়নিক হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠলে ট্রাম্প দেশটিতে বিমান হামলার নির্দেশ দেন। রাশিয়াও পাল্টা অভিযোগ করে, সিরীয় বিদ্রোহীরা অবৈধ বিষাক্ত নার্ভ গ্যাস ব্যবহার করেছে। হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ‘সিরিয়ায় ছয় বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব ও সংঘাত বন্ধে যা করা সম্ভব সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর তাই করা উচিত।’ খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা, উত্তেজনা হ্রাস সংক্রান্ত সব বিষয় এতে ছিল। স্থায়ী শান্তিু স্থাপনের লক্ষ্যে সিরিয়ায় কয়েকটি নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে ক্রেমলিনের বিবৃতিতে এ বিষয়ে আলোচনার কোন ইঙ্গিত করা হয়নি। ক্রেমলিন বিবৃতিতে জানায়, কীভাবে অস্ত্রবিরতি আরও স্থায়ী করা যায় সে বিষয়ে উপায় বের করতে দুই নেতা একমত হয়েছেন। সিরিয়ায় সত্যিকার শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবেশ তৈরির বিষয়টিও ছিল তাদের আলোচনায়। তবে হোয়াইট হাউস জানায়, কতটা ভালভাবে উত্তর কোরিয়ার বিপজ্জনক পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়, তা নিয়েও দুই নেতা কথা বলেন। লৌহ যবনিকার অন্তরালে থাকা কমিউনিস্ট রাষ্ট্র উত্তর কোরিয়া বারবার পরমাণু অস্ত্র ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানোয় এশিয়া প্রশান্তু মহাসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল সপ্তাহে ট্রাম্প বলেছিলেন, ব্যাপক সংঘাত সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। ক্রেমলিন বলেছে, কোরীয় উপদ্বীপে বিপজ্জনক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভøাদিমির পুতিন উত্তেজনা হ্রাস ও সংযমের আহ্বান জানিয়েছেন। জুলাইয়ের শুরুতে জার্মানির হামবুর্গে জি-২০ সম্মেলনের ফাঁকে বৈঠকের বিষয়েও দুই নেতা কথা বলেন। সিরিয়ায় আলাদা করে ‘বাফার অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠা করতে রাশিয়া, ইরান ও তুরস্ক কাজ করবে বলে আস্তানায় পুতিনের প্রতিনিধি প্রস্তাব দিবেন। তবে প্রেসিডেন্ট বাসার আল আসাদ সরকারের এ প্রস্তাবের বিষয়ে সংশয় রয়েছে। এটাকে রাষ্ট্রকে বিভক্ত করার প্রাথমিক চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। দুই নেতার মধ্যে এই আলোচনাকে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া কিছু তিক্ত ঘটনা ভুলে যাওয়া ও দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরই পুতিনের ব্যাপক প্রশংসা করেন এবং মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। কিন্তু গেল বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ এবং সাধারণ নাগরিকদের ওপর আসাদের রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় সম্পর্ক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে তাদের প্রাথমিক আশাবাদ তিক্ততা ও অনিশ্চয়তায় রূপ নিলে তারা পরস্পর বিপরীত স্রোতে চলে যান, সম্পর্কোন্নয়ন গতিতেও ভাটা পড়ে। তবে বড় ধরনের কোন রফা যখন আয়ত্তের বাইরে, তখন কোন কোন বিষয়ে একমত হবেন এবং কোন কোন বিষয়ে ভিন্নমত থাকবেন, তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছেন বিশ্বের শীর্ষ দুই নেতা। বিখ্যাত পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষক ভøাদিমির প্রোলভ বলেন, এরপরেও কিছুটা আশা, নিরাশা, উৎকণ্ঠা ও সতর্কতা রয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন আন্তর্জাতিকভাবে যে আচরণ করছেন, তা অনিশ্চিত, একতরফা। এরপরও কিছু চুক্তির ব্যাপারে তারা আশা জিইয়ে রাখছেন। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার সম্পর্ক সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে হলেও ট্রাম্প কখনও হাল ছাড়েননি। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ সদস্যরা সিরিয়ার বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে নার্ভ গ্যাস ব্যবহার করায় মস্কোর ওপর ক্ষেপে আছে। তবে রাশিয়ার প্রতি ট্রাম্প তার সুর আরও নরম করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে পুতিনের সমালোচনা করবেন না বলে নিশ্চয়তা দেন। পরবর্তীতে আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, দুই দেশের মধ্যে সবকিছু ভালভাবেই যাচ্ছে। গত জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক হওয়ার পর এটা ছিল ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে তৃতীয় ফোনালাপ। আলোচনার পর দুই তরফই ইতিবাচক বিবৃতি দিয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, খুবই চমৎকার একটি আলাপ হয়েছে। ক্রেমলিন বলেছে, আলোচনা হয়েছে খুবই কার্যকর ও গঠনমূলক। তবে কোন পক্ষ সিরিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার কিংবা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ নিয়ে কথা উঠাননি।
×