ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ দুর্বল হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩ মে ২০১৭

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ দুর্বল হবে

সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষার নামে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গত ২৭ জানুয়ারি মুসলমানপ্রধান ৭টি দেশ থেকে তার দেশে অভিবাসী আগমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন। তখন বিশ্বজুড়ে এর প্রবল প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। মুসলমানদের এককভাবে টার্গেট করা এ পদক্ষেপ তীব্র সমালোচিত হয়েছিল দেশ-বিদেশে। গত ৬ মার্চ ট্রাম্প আইনগত চ্যালেঞ্জ সামাল দেয়ার লক্ষ্যে ওই নির্বাহী আদেশের সংশোধিত রূপটিতে স্বাক্ষর দেন। তাতে ইরাককে বাদ দিয়ে ৭টির বদলে ৬টি দেশকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাখা হয়। ইরাকীরা এখন আগের মতো অবাধে যুক্তরাষ্ট্রে আসা-যাওয়া করতে পারবে। ট্রাম্পের প্রথম আদেশটি ইরাকীরা মোটেই ভালভাবে নেয়নি। ওই দেশটির সশস্ত্র বাহিনী ইসলামী রাষ্ট্রের (আইএস) যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে মার্কিন সমর্থনে আক্রমণাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আইএসকে মসুল থেকে হটানোর জন্য ইরাকী বাহিনী এখন প্রায় পাঁচ হাজার মার্কিন সৈন্যের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে লড়ছে। লোকশূন্য মসুলই হচ্ছে আইএসের নিয়ন্ত্রণাধীন সবচেয়ে বড় শহর। ট্রাম্পের আগের আদেশে অন্তত একজন ইরাকী কমান্ডারের ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্র্যাটেজি সেশনের জন্য যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। ২০০৩ সালের মার্কিন হামলার পর থেকে যেসব ইরাকী নাগরিক মার্কিন সামরিক বাহিনীতে দোভাষী ও ঠিকাদার হিসেবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছিল তাদেরকে তাদের পরিবার থেকে পৃথক করা হয়। অনেকে এ পদক্ষেপকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যে দেশটি আমেরিকার অনুগত অংশীদার হিসেবে থেকেছে তার প্রতি অপমান হিসেবে গণ্য করে। মসুল অভিযানে অংশ নেয়া এক ইরাকী সেনা কমান্ডার মেজর জেনারেল নাজিম আল-জাবুরি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞাটা নিশ্চয়ই আমাদের প্রাপ্য নয়। আইসিসের বিরুদ্ধে আমেরিকানদের সঙ্গে আমরা কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে লড়েছি।’ জাবুরির অফিস রুমটা নানা ধরনের সার্টিফিকেটে পূর্ণ, যা তিনি যুক্তরাষ্ট্রে সামরিক প্রশিক্ষণ লাভের জন্য পেয়েছিলেন। আমেরিকান অফিসারদের সঙ্গে তার তোলা ছবিও আছে ওই অফিস রুমে। জানুয়ারির ওই নির্বাহী আদেশটি পরিবর্তিত হয় মার্কিন কর্মকর্তাদের ওপর ইরাকীদের জোর লবিংয়ের পর। প্রথম আদেশটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ২৭ জানুয়ারি। তার একদিন পর ইরাকী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিনিধি দল বাগদাদে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডগলাস সিলিম্যানের সঙ্গে দেখা করে। ইরাকী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আহমদ জামাল জানান, ‘আমরা তাদের বলেছি অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসবাদ রফতানিকারক দেশ ইরাক নয়।’ ওদিকে ইরাকী পার্লামেন্টে ইরাকে মার্কিন নাগরিকদের প্রবেশের ওপর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার দাবি জানিয়ে ৩০ জানুয়ারি একটি প্রস্তাব পাশও হয়। ইরাক সরকার অবশ্য ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি। তবে করলে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত আন্তর্জাতিক সামরিক কোয়ালিশনের জন্য বিভ্রাট-বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতোÑ বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রধানরা যেখানে ইরাকে মার্কিন সৈন্য সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবছেন। ইরাক থেকে আইসিসকে হটানোর অভিযান যখন একটা গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে, সে সময় দু’দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন দূর হয়ে আবার সুসম্পর্ক ফিরে এলো ট্রাম্পের ৬ মার্চের আদেশের ফলে। মসুলের এক বিরাট ভূখ- আইএসের হাত থেকে পুনরুদ্ধার করার পর ইরাকের সামরিক বাহিনী গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক নতুন পর্যায়ের অভিযান শুরু করে। তারা টাইগ্রিস নদীর পশ্চিমের এলাকায় ঢুকে পড়ে। এ পশ্চিমাংশ দখলের লড়াইটা এক জটিল নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হয়। কারণ ৮ লাখ সিভিলিয়ান মধ্য ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেখানে আটকা পড়েছিল বলে জাতিসংঘ সূত্রে জানা যায়। সামনে আরও কঠিন লড়াই আসছে। এ অবস্থায় ইরাকীদের মার্কিনীদের ওপর আস্থা নষ্ট হলে কিংবা তাদের প্রতি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হলে লড়াইয়ের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ট্রাম্প আগের নির্বাহী আদেশ সংশোধন করার পরও অন্যান্য স্থানে ইসলামী উগ্রবাদের বিরুদ্ধে লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ ওই আদেশে ইরান, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন, সিরিয়া ও লিবিয়ার নাগরিকদের নতুন ভিসা দেয়ার ওপর ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা এবং যে কোন দেশের উদ্বাস্তুদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর ১২০ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। ওই ৬টি দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ ওই নিষেধাজ্ঞাকে মুসমানদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বলে গণ্য করছে। এতে মুসলিমপ্রধান দেশগুলির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিষেধাজ্ঞায় ইরানের রক্ষণশীলদের অবস্থান সুদৃঢ় হবে এবং সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে, ইয়েমেনে আল কায়েদার বিরুদ্ধে এবং লিবিয়ায় এদের মিত্র চরমপন্থী গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে মার্কিন সমর্থনপুষ্ট অভিযান জটিল রূপ ধারণ করতে পারে। সূত্র : টাইম
×