ফ্রান্সের নির্বাচনী নাটক যেন জমে উঠেছে। টান টান উত্তেজনার মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত এবং এর পরবর্তী সহিংসতা সব কিছু মিলিয়েই বিশ্ববাসীর নজর এখন ফ্রান্সের দিকে। নির্বাচনের প্রথম পর্বের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর চলছে দ্বিতীয় পর্বের প্রস্তুতি। কিন্তু এরই মধ্যে খবরের মধ্যমণি হয়ে গেছেন উগ্র ডানপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টির মেরিন লে পেন। সম্প্রতি তিনি তার দলীয় পদ ছেড়েছেন। যা নিয়ে এখন চলছে জল্পনা কল্পনা।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম দফার ফলাফল প্রকাশের পর প্যারিসে তুমুল বিক্ষোভ-সহিংসতা হয়েছে। ফলাফলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়ে অরাজপন্থী (এ্যানার্কিস্ট সমাজতন্ত্রী যারা সর্বার্থে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিলোপের পক্ষে), ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং অন্যরা রাস্তায় নেমে এলে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়।
রবিবার (২৩ এপ্রিল) নির্বাচনের প্রথম ধাপে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জয়ী হন নির্দলীয় মধ্যপন্থী ইমানুয়েল ম্যাক্রন ও উগ্র-ডানপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টির মেরিন লে পেন। ফ্রান্সের নির্বাচনী ব্যবস্থা অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথমে পর্বে যদি কোনও প্রার্থী ৫০ শতাংশ ভোট অর্জন করতে ব্যর্থ হন, তাহলে দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে অংশ নেন শীর্ষ দুই প্রার্থী। কিন্তু এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপে নির্বাচিত এ দুই প্রার্থীকে নির্বাচনের প্রথম ধাপে দেখতে রাজি নন অরাজপন্থী (অ্যানার্কিস্ট সমাজতন্ত্রী যারা সর্বার্থে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিলোপের পক্ষে), ফ্যাসিবাদবিরোধীরা।
রবিবার নির্বাচনের ফলাফল পাওয়ার পর শত শত বিক্ষোভকারী রাস্তায় নেমে আসলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম লে মন্ডের খবরে বলা হয়, শত শত বিক্ষোভকারী পুলিশের দিকে বোতল ও আতশবাজি ছুড়ে মারে।
স্থানীয় সময় রাত ৯টার দিকে বিক্ষোভকারীরা বোলভার্দ বোমার্শিজের দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে দোকানপাটের জানালা গুঁড়িয়ে দেন, বাস স্টেশন ও পুলিশের গাড়িতেও হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে পৌঁছানোর একদিন পরই উগ্র-ডানপন্থী পার্টি ন্যাশনাল ফ্রন্ট (এফএন) প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন মেরিন লে পেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রেঞ্চ টিভিকে তিনি জানিয়েছেন, তার দলীয় বিবেচনার উর্ধে থাকা দরকার। তবে তিনি বলেছেন, সাময়িক সময়ের জন্যই তিনি দলীয় পদ থেকে সরে যাচ্ছেন।
ফ্রেঞ্চ টিভিকে তিনি আরও বলেছেন, ‘এখন থেকে আমি ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রেসিডেন্ট নই। আমি ফরাসি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী।’ দেশকে এক ‘সন্ধিক্ষণে’ নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য এবং দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্যই তিনি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান।
দ্বিতীয় পর্বে লড়াইয়ের সুযোগ পাওয়ার পর তিনি বলেছেন, ‘আমরা জিততে পারি, আমরাই জিতব।’
তবে জনমত জরিপে দেখা গেছে, এখনও লে পেনের চেয়ে অনেক বেশি সমর্থন রয়েছে দ্বিতীয় পর্বে তার প্রতিদ্বন্দ্বী নির্দলীয় মধ্যপন্থী ইমানুয়েল ম্যাক্রনের। লে পেন যেখানে মাত্র ৩৮ শতাংশের সমর্থন পাচ্ছেন, সেখানে ম্যাক্রনের রয়েছে ৬২ শতাংশের সমর্থন।
প্রথম পর্বের নির্বাচনে ম্যাক্রন পেয়েছেন ২৩.৭৫ শতাংশ ভোট। লে পেন পেয়েছেন ২১.৫৩ শতাংশ। পরাজিত প্রার্থী ডানপন্থী রিপাবলিকান পার্টির নেতা ফ্রাঁসোয়া ফিলন পেয়েছেন ১৯.৯১ শতাংশ ভোট। অপর পরাজিত প্রার্থী কট্টর বামপন্থী জ্যঁ-লুক মেলেঁকন পেয়েছেন ১৯.৬৪ শতাংশের সমর্থন। অন্য সাত প্রার্থীর মধ্যে ছিলেন সোশ্যালিস্ট পাটির বেনয় হ্যামন, দুই ট্রটস্কিবাদী, তিন উগ্র-জাতীয়তাবাদী এবং এক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা।
২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে লে পেনই ন্যাশনাল ফ্রন্টের প্রধান রয়েছেন। এর আগে তার বাবা ও দলটির প্রতিষ্ঠাতা জ্যঁ-মেরি লে পেন দলের দায়িত্বে ছিলেন
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম পর্বে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর একজন হয়ে দ্বিতীয় পর্বের (রানঅফ) প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পৌঁছানোর একদিন পর সোমবার তিনি এ সিদ্ধান্ত জানান।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্বে তিনি উদার মধ্যপন্থী প্রার্থী এমানুয়েল মাক্রোঁর মুখোমুখি হবেন। প্রথম পর্বের ভোটাভুটিতে মাক্রোঁ সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়েছেন।
জনমত জরিপে আভাস পাওয়া গেছে, দ্বিতীয় পর্বের ভোটেও মাক্রোঁ স্পষ্ট ফেভারিট।
তারপরও জয়ের ব্যাপারে প্রত্যয় জানিয়ে লে পেন বলেছেন, ‘আমরাও জিততে পারি, আমরাই জিতব।’
তবে তার কথাবার্তায় ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তার দলীয় প্রধোনের পদ ছাড়ার বিষয়টি সাময়িক হতে পারে।
ফ্রেঞ্চ টু-কে তিনি বলেছেন, ফ্রান্স একটি ‘চূড়ান্ত মুহূর্তের’ দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রেসিডেন্টকে ফ্রান্সের সকল মানুষের মধ্যে মিলন ঘটাতে হবে, এই ‘গভীর প্রত্যয়বোধ’ থেকেই তিনি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন লে পেন।
‘তাই, এই সন্ধ্যা থেকে আমি আর ন্যাশনাল ফ্রন্টের সভাপতি না। আমি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট পদের প্রার্থী,’ বলেন তিনি।
গত ২৩ এপ্রিল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বশেষ ফলাফল হচ্ছে ইইউ পন্থি ম্যাক্রন ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেয়ে শীর্ষস্থান লাভ করেছেন। তার প্রতিপক্ষ কট্টর-ডানপন্থি প্রার্থী লে পেইন ২১ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পান। আগামী ৭ মে চূড়ান্ত পর্বে ম্যাক্রন আর পেইনের মধ্যে একজনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেছে নেবেন ফরাসিরা।
চলমান ডেস্ক
সূত্র : বিবিসি
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: