ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

হাজার কণ্ঠে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩ মে ২০১৭

হাজার কণ্ঠে ‘বিদ্রোহী’ কবিতার শিল্পিত উচ্চারণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কথা ছিল, লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হবে কাজী নজরুলের কালজয়ী ‘বিদ্রোহী’ কবিতা। আয়োজকদের কথা অনুযায়ী লাখো কণ্ঠে উচ্চারিত হয়নি সেই কবিতা। তবে জাতীয় কবির প্রতি ভালবাসা জানিয়ে কবিতাটি পাঠ করেন প্রায় হাজার পাঁচেক কাব্যপ্রেমী মানুষ। বৈশাখী বিকেলে তাদের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে সেই অমর চরণ ‘বল বীর, বল উন্নত মম শির’। আর সেই সম্মিলিত কণ্ঠের মাধুর্যে রচনার ৯৬ বছর পর ভিন্ন উপস্থাপনায় ধরা দিল সাম্যের কবি নজরুলের বিদ্রোহী কবিতাটি। জয়-জয় রাজটিকায়, লাখো ললাট তাই যেনো ছিল দীপ্ত জয়শ্রীর। দরাজ কণ্ঠে কেউ ছিল চিরদূর্দম, কেউবা দুর্বিনীত, দুর্বার। ভুলোক দ্যুলোক গোলক ভেদিয়া কেউবা ছিল মহাপ্রলয়ের নটরাজ। সোমবার মহান মে দিবসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ‘লাখো কণ্ঠে বিদ্রোহী কবিতা’ শীর্ষক এ আয়োজন করে নজরুল চর্চাকেন্দ্র বাঁশরী ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)? আয়োজকরা জানান, এবার শুধু রাজধানীতে হলেও ভবিষ্যত দেশ ও দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও হবে এ আয়োজন। তাদের প্রত্যাশা, দ্রোহের চেতনা ছড়ানো এই কবিতার পঙ্্ক্তিমালা আগামীতে ছড়িয়ে পড়বে সারা বাংলায় কোটি কণ্ঠে। বাঁশরীর প্রশিক্ষক রেজাউল হোসাইন টিটুর নির্দেশনায় বিকেল ৪টা ৩৬ মিনিটে আবৃত্তি শুরু হয়। আবৃত্তি শেষ হয় ৪টা ৫০ মিনিটে। অনুষ্ঠানে বিএনসিসির সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষকসহ সাধারণ মানুষ আবৃত্তিতে অংশ নেন। আবৃত্তির আগে ছিল সংক্ষিপ্ত আলোচনা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বক্তব্য রাখেন বিএনসিসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম ফেরদৌস ও বাঁশরীর সভাপতি প্রকৌশলী ড. খালেকুজ্জামান। উপস্থিত ছিলেন কবির দুই নাতনী খিলখিল কাজী ও অনিন্দিতা কাজী। সঞ্চালনা করেন নজরুলসঙ্গীত শিল্পী সুজিত মোস্তফা। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, জাতীয় কবির বিদ্রোহী, সাম্যবাদী, অন্যায়, প্রেমের আদর্শ ধারণ করে আমরা অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনে কাজ করছি। ১৯৪৭ সালে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞানহীন ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন। সে পথ ধরেই একাত্তরে আমরা স্বাধীনতা লাভ করি। ইনু আরও বলেন, তারুণ্যই পারে পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলতে। সমাজের মধ্যে সংস্কার করতে গেলে, কেউ না কেউ সে পথে বাধা দেবে। আর তখনই বিদ্রোহ করে সংস্কার ঘটাতে হয়। তথ্যমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকরা করুণার পাত্র নয়, তারা বিদ্রোহ করতে জানেন। যে সমাজে বিদ্রোহ হয় না, সে সমাজ এগুতে পারে না। তাই বাঙালীরাও বিদ্রোহের মাধ্যমে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের স্বাধীনতা, নব্বইয়ের স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছে। আজ বিদ্রোহ চলছে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদের বিরুদ্ধে। চলছে বৈষম্য, ধর্মনিরপেক্ষতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। দেশ আজ এক বাঁকে, নব ইতিহাস সৃষ্টির মুখে, পুনর্জাগরণের পথে। সামরিক শাসকদের চাপিয়ে দেয়ার রাজনীতি ও অর্থনীতি, সামরিক শাসকদের চাপিয়ে দেয়ার পুনর্বাসিত যুদ্ধাপরাধী চক্র, সামরিক শাসকদের লালিত মৌলবাদ, জঙ্গীবাদÑ এসবের বিরুদ্ধে একটা বিদ্রোহ চলছে। আমার সঠিক যাত্রা শুরু করেছি উল্টো পথের বিরুদ্ধে। আ আ ম স আরেফিস সিদ্দিক বলেন, বিদ্রোহের মাধ্যমে শ্রমিকরা তাদের অধিকার আদায় করেছেন। আজও সমাজে কোন না কোন বিষয়ে বিদ্রোহ করছেন শ্রমিকরা। নজরুল আমাদের জাতীয় কবি, যিনি আমাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার শিক্ষা দেন। আবৃত্তি শেষে খিলখিল কাজী বলেন, এখন বিদ্রোহী কবিতাকে অনুবাদের মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই আমরা এ কবিতার মাহাত্ম্য বুঝতে পারব। অনিন্দিতা কাজী বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম চলে গেছেন, কিন্তু রেখে অসংখ্য সাহিত্যসম্ভার। কবিতার মধ্য দিয়েই তিনি সমাজ, জাতি, ও রাষ্ট্রকে বার্তা দিয়ে গেছেন। অগ্রজের সঙ্গে অনুজের যুগলবন্দী স্বরে বিদ্রোহী কবিতা পাঠের পর সবার অভিমতটি ছিল এ রকমÑ ১৩৯ লাইনের এই পঙ্্ক্তিমালা আজ শুধু একটি কাব্যভাষ্য নয়, বরং একটি সচল নমুনা। ফারহিন খান জয়িতার ‘কত মধুসমীরে’ প্রকাশিত হলো তরুণ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ফারহিন খান জয়িতার সঙ্গীত সংকলন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানে সাজানো এ্যালবামটির শিরোনাম ‘কত মধুসমীরে’। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন নিবেদিত এ্যালবামটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সিডির মোড়ক উন্মোচন করেন সঙ্গীতজ্ঞ, শিক্ষক ও গবেষক ড. সন্জীদা খাতুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জয়িতার মা প্রখ্যাত রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক। প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ফারহিন খান জয়িতা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। সব মিলিয়ে সঙ্গীত সংকলনটিতে ঠাঁই পেয়েছে আটটি রবীন্দ্রসঙ্গীত। এগুলো হলোÑ মোরে বারে বারে ফিরালে, চরণধ্বনি শুনি তব, প্রচ- গর্জনে আসিল একি দুর্দিন, সুখহীন নিশিদিন পরাধীন হয়ে ভ্রমিছ দীনপ্রাণে, হৃদয়বাসনা পূর্ণ হল আজি মম পূর্ণ হল, আমার মন যখন জাগলি না রে, বাজে বাজে রম্যবীণা বাজে ও খেলার সাথী, বিদায়দ্বার খোলো।
×