ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

‘সাংবাদিক বজলুর রহমান ভাইয়া স্মৃতি পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে তোয়াব খান

নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাংস্কৃতিক চিন্তাবোধ প্রবাহিত করতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩ মে ২০১৭

 নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাংস্কৃতিক চিন্তাবোধ প্রবাহিত করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বরেণ্য সাংবাদিক দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খানকে ‘সাংবাদিক বজলুর রহমান ভাইয়া স্মৃতি পদক’ ও অনলাইন পোর্টাল বিবার্তার আয়োজনে ‘গুণীজন সম্মাননা-২০১৭’ প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার পৃথক অনুষ্ঠানে দেশের কিংবদন্তি এই সাংবাদিকের হাতে পুরস্কার দুটি তুলে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সাংবাদিক তোয়াব খানসহ চার বিশিষ্ট ব্যক্তিকে সাংবাদিক বজলুর রহমান ভাইয়া স্মৃতি পদক প্রদান করা হয়। আর সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য তোয়াব খানকে ‘গুণীজন সম্মাননা-২০১৭’ প্রদান করে বিবার্তা। সাংবাদিক বজলুর রহমান ভাইয়া স্মৃতি পদক প্রাপ্ত অন্যরা হলেন- অধ্যাপক নিরঞ্জন অধিকারী, শিল্পী সৈয়দ আবুল বারক আলভী ও লেখক-গবেষক মফিদুল হক। বিবার্তা স্বর্ণপদক প্রাপ্ত অন্যরা হলেন শিল্প-সংস্কৃতিতে লায়লা হাসান ও সৈয়দ হাসান ইমাম, রাজনীতিতে ডাঃ দিপু মনি, প্রবাসে মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হিসেবে এমএ গনি, অদম্য নারী ক্যাটাগরিতে মাহবুব আরা গিনি, আইসিটিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, অর্থনীতিতে মোঃ ইফতিখার উজ জামান, ক্রীড়ায় মাবিয়া আক্তার সীমান্ত, সফল উদ্যোক্তা ক্যাটাগরিতে জেএমআই গ্রুপের এমডি মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ও গবেষণায় সানিয়া বিনতে মাহবুব। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে খেলাঘরের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান শুরু হয়। সাংবাদিক বজলুর রহমান ভাইয়া স্মৃতি পদক প্রাপ্ত ও আমন্ত্রিত অতিথিরা এসময় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বালন করেন। এছাড়াও ‘আমরা তো সৈনিক শান্তি সৈনিক’ ও ‘ধন ধান্যে পুষ্প ভরা’ গানের সুুর দর্শকদের হৃদয় কেড়ে নেয়। পরে শিশু-কিশোররা অতিথিদের স্কার্ফ প্রদান করেন। খেলাঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সাংবাদিক বজলুর রহমান ভাইয়া স্মৃতি পদক প্রদান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকীকরণের বিরুদ্ধে খেলাঘরই সারা দেশে একযোগে মানববন্ধন করেছে। নতুন অধ্যাদেশ করে হলেও পাঠ্যপুস্তক থেকে যেসব লেখা বাদ দেয়া হয়েছে তা পুনঃসংযোজন করা হোক। খেলাঘরের নতুন ভবন স্থাপনের জন্য সরকারের কাছে জমি বরাদ্দের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সারা দেশে আমাদের সাড়ে ছয় শ’ শাখা আছে। খেলাঘরের মতো সংগঠনের নিজস্ব কোন ভবন নেই, অথচ যাদের ভবন আছে তাদের সংগঠন নেই। সরকারের কাছে দাবি সাংস্কৃতিক আন্দোলন পরিচালনার জন্য খেলাঘর যাতে ছোট একটি জায়গা পায়। স্বাগত বক্তব্যের পর পদকপ্রাপ্তদের জীবনী থেকে পাঠ করা হয়। তুলে ধরা হয় তাদের জীবনের বর্ণিল কর্মযজ্ঞ। নিরঞ্জন অধিকারীর জীবনী থেকে পাঠ করেন গোবিন্দ বাগচী, আবুল বারক আলভীর জীবনী থেকে পাঠ করেন হাফিজুর রহমান মিন্টু, মহিফুল হকের জীবনী থেকে আসমা আব্বাসী উর্মী ও সাংবাদিক তোয়াব খানের জীবনী পাঠ করেন সুনীল কুমার সরকার মিন্টু। এ সময় পদকপ্রাপ্তদের হাতে পদক তুলে দেন খেলাঘরের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার ও খেলাঘরের শিশু কিশোররা। পরে পদকপ্রাপ্তরা তাদের অনুভূতি তুলে ধরেন। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক সাংবাদিক তোয়াব খান বলেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে সাংস্কৃতিক চিন্তাবোধ প্রবাহিত করে দিতে হবে। শিশু-কিশোরদের মনটাকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে খেলাঘর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে খেলাঘরের বিরাট অবদান রয়েছে। অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, খেলাঘরের কা-ারী বজলুর রহমান ভাইয়ার নামে পদক পেয়ে আমি অভিভূত। তোয়াব ভাইয়ের সঙ্গে পুরস্কার গ্রহণ করছি এটা আমার চরম সৌভাগ্য। তিনি বলেন, খেলাঘর আমাদের প্রেরণার উৎস। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উৎসাহিত করতে হবে। শিশু-কিশোরদের সুস্থ বিকাশের জন্য ব্যাপক জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। পদকপ্রাপ্তির কথা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, এটি জীবনের খুব বড় পাওয়া, যেন জীবনচক্রটা পূরণ হলো। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা থাকছে না। নতুন ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। এ আইনে ৫৭ ধারার বিষয়ে পরিষ্কার করা হবে। বর্তমান সরকারের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার যে কোন ইচ্ছে নেই, তা এ আইনে প্রমাণ করে দেয়া হবে। তিনি বলেন, হাইকোর্টের সামনে যে ভাস্কর্য, এটা কোন ধর্মের ভাস্কর্য নয়। এটা লেডি জাস্টিসের ভাস্কর্য। একটি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কারণ লেডি জাস্টিস শাড়ি পরতেন না। আর এজন্যই সরকার এর বিরোধিতা করছে। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিলুপ্ত করতে দেশের একটি কুচক্রী মহল অপতৎপরতা চালাচ্ছে। পাঠ্যপুস্তকে পরিবর্তন এবং বতর্মান হালদশার জন্যও তারা দায়ী। এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। যেমনটা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার সময়। আমাদের সময় দেন, আমরা দোষীদের বিচারের মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে গড়ে তুলব। অনুষ্ঠানে অধ্যাপিকা পান্না কায়সারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন টঙ্গী পৌরসভার সাবেক মেয়র আজমত উল্লাহ খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ ও সাংবাদিক শ্যামল দত্ত। এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে গুণীজন সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠিত হয়। অনলাইন নিউজ পোর্টাল বিবার্তা ২৪ ডট নেট এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, গুণীজনদের সম্মান না জানালে গুণী মানুষ সৃষ্টি হয় না। বীরকে সম্মান না দিলে বীর তৈরি হয় না। জঙ্গীবাদ দমনের যুদ্ধে দেশপ্রেমী গুণীজন দরকার। দেশপ্রেম বর্জিত গুণীজন বাংলাদেশের জন্য বোঝা। তিনি বলেন, গুণীজনরা নানাভাবে দেশ ও সমাজের সেবা করছেন। দেশে সমস্যা তৈরি হলে জনগণ তাদের শরণাপন্ন হন। এ সময় গুণীজনরা দেশের কল্যাণে এগিয়ে আসেন। গুণীজনদের সম্মান জানাতে না পারলে দেশ স্বাভাবিক নিয়মে পিছিয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, দেশ আজ জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। জঙ্গীরা দুর্বল হয়ে গেলেও আত্মসমর্পণ করেনি। একাত্তরের পরের এই যুদ্ধে আমাদের অবশ্যই জিততে হবে। জঙ্গীবাদ দমনের যে যুদ্ধ চলছে সে যুদ্ধে গুণীজনদের বুদ্ধি দিয়ে, পরামর্শ দিয়ে, সাহস দিয়ে, প্রেরণা দিয়ে ভূমিকা রাখতে হবে। নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক তোয়াব খান বলেন, দেশের বর্তমানে তথ্যপ্রবাহ ও তথ্য প্রচারে অবাধ স্বাধীনতা বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের ডাক দিয়েছেন। তবে এ স্বাধীনতাকে ধরে রাখতে হবে। তোয়াব খান আরও বলেন, দেশে সাংবাদিকতা বিকাশের জন্য সরকারী পর্যায়ের বাইরেও কিছু প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। বিশেষ করে এ পেশার মানুষেরাই এগিয়ে আসছে, এটা খুবই ভাল বিষয়। সম্মাননা অনুষ্ঠানে বিবার্তা সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসিসহ পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ বক্তব্য রাখেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ১০টি ক্ষেত্রে ১১ গুণীজনকে সম্মাননা দিয়েছে বিবার্তা।
×