ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বেজিংয়ে বেল্ট এ্যান্ড রোড সামিটে আমন্ত্রিত সাত মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩ মে ২০১৭

বেজিংয়ে বেল্ট এ্যান্ড রোড সামিটে আমন্ত্রিত সাত মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেজিংয়ে ‘বেল্ট এ্যান্ড রোড সামিটে’ অংশ নেয়ার জন্য বাংলাদেশের সাত মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রী চীন সফরে যাচ্ছেন। আগামী ১৪ ও ১৫ মে চীনের বেজিংয়ে এই সামিট অনুষ্ঠিত হবে। এতে অংশ নেয়ার জন্য বাংলাদেশের সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন সরকার। সম্মেলনটি উদ্বোধন করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বাংলাদেশের যে সাত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীকে চীন এই সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে, তারা হলেনÑ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জোনায়েদ আহমেদ পলক। চীন সরকারের পাঠানো আমন্ত্রণপত্র এরই মধ্যে ঢাকার চীনের দূতাবাস মন্ত্রীদের হাতে পৌঁছে দিয়েছে। তবে সম্মেলন চলাকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকবেন বলে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এছাড়া চীনের একটি কোম্পানি রেল ও যোগাযোগ মন্ত্রী মুজিবুল হককে ‘বেল্ট এ্যান্ড রোড সামিট’-এ অংশ নেয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। গত বছরের অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ঢাকা সফর করেন। তার উপস্থিতিতে ১৬ অক্টোবর একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে চীনের ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশীদার হয় বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে, ১৪-১৫ মে চীনে বেজিংয়ে অনুষ্ঠেয় ‘বেল্ট এ্যান্ড রোড ফোরাম অব ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন’ নামের এই সামিটে’ যোগ দেয়ার জন্য বাংলাদেশের মন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন। সূত্র জানায়, ব্যস্ততার কারণে দু’একজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী এই সম্মেলনে যোগদান নাও করতে পারেন। ‘ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড ইনিশিয়েটিভ’-এর অংশীদার হিসেবে ওই সম্মেলনে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য প্রতিনিধিত্ব থাকবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বেজিংয়ের কূটনৈতিক সূত্র জানায়, এই সম্মেলনে বিশ্বের ২৮ দেশের শীর্ষ নেতারা যোগ দিচ্ছেন। এদের মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে, ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো, ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট ত্রাণ দেই কোয়াংসহ বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। চীন অবশ্য বিশ্বের সব দেশকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে না। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্প্রতি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বিশেষ উন্নতি হওয়ায় চীন এই সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। চীনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর আগ্রহ ছিল। কিন্তু শেখ হাসিনা কিছুদিন আগেই চীন সফর করেছেন। এছাড়া গত বছর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিংও ঢাকা সফর করেছেন। সে কারণেই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে চীন। এদিকে মঙ্গলবার সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের এই বছরের কূটনৈতিক কর্মসূচীর সবচেয়ে বড় উদ্যোগ হলো এই বেল্ট এ্যান্ড রোড সামিট। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোর শীর্ষ নেতারা এই সামিটে অংশগ্রহণ করবেন। এই সামিটের মধ্যে দিয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বেশ কয়েকটি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। সম্মেলনে ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশের সরকার প্রধানও অংশগ্রহণ করবেন। এর মধ্যে হাঙ্গেরি, ইতালি, চেক রিপাবলিক, সুইজারল্যান্ড, স্পেন ইত্যাদি দেশের সরকার প্রধানরা অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া আফ্রিকা থেকে কেনিয়া ও ইথিওপিয়ার প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। ২০১৩ সালে চীনের ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড উদ্যোগ তুলে ধরেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এরপর থেকে এই উদ্যোগকে ঘিরেই চলছে দেশটির অর্থনৈতিক কূটনীতি। এই উদ্যোগ শুরুর পর থেকে বিদেশে অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে আসছে চীন। সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট এবং একুশ শতকের মেরিটাইম সিল্ক রোডকে সংযুক্ত করে নেয়া এই উদ্যোগের আওতায় এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগুলোকে একটি বাণিজ্য ও অবকাঠামো নেটওয়ার্কে সম্পৃক্ত করতে চাইছে চীন, যার মধ্য দিয়ে কার্যত প্রাচীন সিল্ক রোড রুটকে পুনরায় ফিরে পাওয়ার প্রত্যাশা। উদ্যোগের মূলে অন্যান্য দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের লক্ষ্য রয়েছে।
×