ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন আজ

বিদায়যাত্রায় ভালবাসায় সিক্ত কাজী আরিফ ॥ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৩ মে ২০১৭

বিদায়যাত্রায় ভালবাসায় সিক্ত কাজী আরিফ ॥ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে একাত্তরে হাতে তুলে নিয়েছিলেন রাইফেল। জীবনবাজি রেখে দেশের স্বাধীনতা আনার পর কণ্ঠে ধারণ করেছিলেন কবিতার পঙ্ক্তিমালা। মুক্তিযোদ্ধা থেকে আবৃত্তিশিল্পীর পরিচয় ধারণ করে নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন সম্প্রীতির স্বদেশ গড়ার সাংস্কৃতিক লড়াইয়ে। শনিবার থেমে যায় সেই মুক্তিযোদ্ধা আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফের জীবনের স্পন্দন। মঙ্গলবার সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলোÑ সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ এ শিল্পীর মরদেহ। দেশপ্রেমিক শিল্পীকে জানানো হলো বিন¤্র ভালবাসা। শুভাকাক্সক্ষী ও গুণগ্রাহীরা উচ্চারণ করেছেন আবৃত্তিশিল্পকে প্রতিষ্ঠিত করাসহ দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার ভূমিকার কথা। তাদের কথার সূত্র ধরে উঠে আসে, এ দেশে কাজী আরিফের কণ্ঠেই প্রথম এ্যালবামবন্দি হয়েছিল কবিতা। তার সৃজনশীল কর্মপ্রবাহকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এ মুক্তিযোদ্ধা, বাচিকশিল্পী ও স্থপতিকে। যে দেশের জন্য তিনি জীবনবাজি রেখেছিলেন, সে দেশেরই লাল-সবুজ পতাকায় আবৃত করে দেয়া হলো রাষ্ট্রীয় সম্মান। শিল্পকে হাতিয়ার করে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য লড়ে যাওয়া মানুষটিকে জানানো হলো অকৃত্রিম ভালবাসা। ঢাবির কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মেয়ে অন্তরা বিনতে আরিফের ধানম-ির বাসায়। সেখানেই ফ্রিজার এ্যাম্বুলেন্সে শিল্পীর মরদেহ রাখা হয়। আজ বুধবার কাজী আরিফের আরেক মেয়ে আনুশকা বিনতে আরিফ দেশে ফেরার পর বেলা তিনটায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে। মঙ্গলবার সকাল পৌনে নয়টায় কাজী আরিফের মরদেহবাহী এ্যামিরেটসের ফ্লাইটটি ঢাকায় অবতরণ করে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ গ্রহণ করেন আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল ও তার পরিবারের সদস্যরা। মরদেহের সঙ্গে ঢাকায় আসেন শিল্পীর মেয়ে অনুসূয়া বিনতে আরিফ। সেখান থেকে সরাসরি বেলা পৌনে ১২টায় মরদেহ এসে পৌঁছে ভাষাশহীদদের স্মৃতির স্মারক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে। সেখানে ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় সম্মান গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষে সম্মাননা জানান নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রবীন্দ্র চাকমা। বিউগলে ভেসে বেড়ায় শোকার্ত সুর। মরদেহবাহী কফিনটি ঢেকে দেয়া হয় লাল-সবুজের জাতীয় পতাকায়। এ সময় তার বাবা কাজী আজিজুল ইসলাম, ছেলে তেপান্তর বিনতে আরিফ, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর উপস্থিত ছিলেন। এরপর শহীদ মিনারের গগন শিরষী বৃক্ষতলে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে রাখা হয় কাজী আরিফের মরদেহ। আর মরদেহের ডান পাশে আরেকটি গাছের নিচে শিল্পীর প্রতি ভালবাসা জানাতে খোলা হয় শোক বই। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে উঠে এসেছিলেন কাজী আরিফ। তাই তার কণ্ঠে সব সময়ই ছিল এ দেশ ও এ দেশের মানুষের কথা। বহু বছর আমরা হেঁটেছে আবৃত্তির পথ ধরে। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, জাসদের পক্ষে দলের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার। সাংগঠনিক ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষে শ্রদ্ধা জানায় বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, জাতীয় কবিতা পরিষদ, কণ্ঠশীলন, মহিলা আওয়ামী লীগ, মহিলা পরিষদ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বুয়েট এ্যালামনাই এ্যাসোসিয়েশন, উদীচী, কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, স্বরশ্রুতি, প্রাচ্যনাট্য, মুক্তকণ্ঠ, জাতীয় বসন্ত উদ্্যাপন পরিষদ, মিরপুর সাংস্কৃতিক ঐক্য ফোরাম, চারুকণ্ঠ, ¯্রােত, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী প্রভৃতি। ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন আশরাফুল আলম, রামেন্দু মজুমদার, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, শিমুল মুস্তাফা, শংকর সাঁওজাল, কাজী মদিনা, রোকেয়া প্রাচী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, মাহিদুল ইসলাম, মসিহউদ্দিন শাকের, রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
×