ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বহুপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে ভারতের অস্বস্তি বাড়ালেন এরদোগান

কাশ্মীর নিয়ে নতুন বিতর্ক

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৩ মে ২০১৭

কাশ্মীর নিয়ে নতুন বিতর্ক

কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের মধ্যস্থতার প্রস্তাব তৈরি হয়েছে বিতর্ক। রবিবার দু’দিনের ভারত সফরে এসে এরদোগান ওই প্রস্তাব দেন। নিজ দেশে বিতর্কিত গণভোটে জয়ের পরে এই প্রথম বিদেশ সফর তার। সফরের শুরুতে ভারতের আগে একটি নিউজ চ্যানেলকে এরদোগান বলেন, ‘কাশ্মীরে আর হানাহানি চলতে দেয়া যায় না। বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এর স্থায়ী সমাধানে আমরা আলোচনায় অংশ নিতে পারি।’ তিনি বলেন, তুরস্ক পাকিস্তানেরও মিত্র দেশ। তাই তিনি কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে মধ্যস্থতায় আগ্রহী। খবর বিবিসি ও ডয়েচ ভেলের। এরদোগানের কাশ্মীরে মধ্যস্থতার প্রস্তাব ছায়া ফেলেছে তার ভারত সফরে। ভারত এই প্রস্তাব কার্যত খারিজ করে দিয়েছে। প্রকাশ্যে অবশ্য ভারত এ নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সরকারের শীর্ষ সূত্রে জানা গেছে এর আগে কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে আমেরিকার মধ্যস্থতার প্রস্তাব ভারত সরাসরি খারিজ করে দিয়েছিল। নয়াদিল্লীর বক্তব্য, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কাশ্মীরের যে অংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে মুক্ত করার জন্য ভারত ইসলামাবাদের সঙ্গেই আলোচনা করবে। এ নিয়ে কোন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা চায় না দিল্লী। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এরগোদানের মন্তব্যকে কোন রকম গুরুত্ব দেয়নি। ডব্লিউআইওএন চ্যানেলকে এরদোগান বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলছে যা উদ্বেগজনক। তিনি বলেন, ‘কাশ্মীরে আর হানাহানি চলতে দেয়া যায় না। বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে এর স্থায়ী সমাধানে আমরা আলোচনায় অংশ নিতে পারি।’ তিনি বলেন, কাশ্মীর ইস্যুটি আমাদের উৎকণ্ঠিত করে। কাশ্মীর উপত্যকায় অব্যাহত রক্তপাত বিশ্ব শান্তির জন্যও হুমকি স্বরূপ। কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভারত বরাবর তৃতীয় কোন পক্ষের হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে এসেছে। অন্যদিকে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ বা এনএসজির সদস্য পদ লাভের জন্য তুরস্কের সমর্থন ভারতের প্রয়োজন। কিন্তু এরদোগান বলেছেন, তার দেশ এক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তান দু’দেশেরই অন্তর্ভুক্তিকে সমর্থন করবে। স্পষ্টতই এরদোগানের এ বক্তব্য নয়াদিল্লীকে সন্তুষ্ট করেনি। ওই টিভি চ্যানেলকে এরদোগান বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই এনএসজির সদস্য হওয়ার অধিকার রাখে।’ উল্লেখ্য, ৪৮ জাতি সংস্থা এনএসজি পরমাণু অস্ত্র বিস্তার মোকাবেলায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই উদ্দেশ্যে সংস্থাটি পরমাণু অস্ত্র উপকরণ রফতানি, বিক্রি বা পাচার প্রতিরোধের বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে থাকে। সোমবার বিকেলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও এরদোগান যখন পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ভাষণ দেন তখন তারা কেউ অবশ্য কাশ্মীর শব্দটি উচ্চারণও করেননি। কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তুর্কী প্রেসিডেন্টের এই সফর থেকে ভারতের কূটনৈতিকভাবে অবশ্য খুব বেশি কিছু অর্জন করতে পারেনি। তুরস্ক বরাবরই পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত, কিন্তু কাশ্মীর প্রসঙ্গে এরদোগান যে এত স্পষ্ট মনোভাব দেখাবেন তা ভারত ধারণা করতে পারেনি। প্রসঙ্গটি সফরে আলোচিত হচ্ছে কি না, নয়াদিল্লীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তার সরাসরি জবাবও এড়িয়ে যান। মোদি বলেন, ‘সন্ত্রাসবাদের বিপদ ভারত ও তুরস্ক উভয়কেই দুশ্চিন্তায় রেখেছে। এ নিয়ে এরদোগানের সঙ্গে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে এবং আমরা একমত হয়েছি যে কোন কারণ বা কোন লক্ষ্য, কোন যুক্তি দিয়েই সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করা যায় না। জঙ্গী নেটওয়ার্ক নির্মূল করতে, তাদের অর্থায়ন বন্ধ করতে, সীমান্ত পারাপার বন্ধ করতেও আমরা একযোগে কাজ করব।’
×