ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান বিচারপতির কাছে অভিযোগ

ঘুষের দুই লক্ষাধিক টাকা ফেরত

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ৩ মে ২০১৭

ঘুষের দুই লক্ষাধিক টাকা ফেরত

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ একটি মামলার রায় পাল্টে দিতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বেশি পাওয়ায় গ্রহণকৃত দুই লাখ বিশ হাজার টাকা (ঘুষ) এক মাস পর ফেরত দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাও নগদ নয়, ব্যাংক চেকের মাধ্যমে মামলার বাদী মহিলাকে এ টাকা ফেরত দেন সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের পেশকার নজরুল। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আদালতপাড়ায় বিভিন্ন কানাঘুষা চলছে। ওই চেকের অবিকল কপিসহ দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছেন বাদী ঈদগাঁও জাগিরপাড়ার প্রবাসীর স্ত্রী ছায়েরা খাতুন। ছায়েরা খাতুন ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বসবাস করে সদরের ঈদগাঁও এলাকায়। তার স্বামী ইসহাক আলী সৌদি আরবে প্রবাস জীবনে থাকায় তার ছয় শতক জমির প্রতি দৃষ্টি পড়ে কয়েক ব্যক্তির। জমির সব কাগজপত্রও ঠিকঠাক। তারপরও স্থানীয় মুরুব্বিরা তিনি জমি পাবেন না বলে এক তরফা সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়। এতে উপায়ন্তর না দেখে সিনিয়র আইনজীবী গুরুপদ ঘোষের সঙ্গে দেখা করলে কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করে স্বত্ব ঠিক আছে জানিয়ে বণ্টন মামলা করার পরামর্শ দেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কক্সবাজার সিনিয়র সহকারী জজ অসীম কুমার দে’র আদালতে বিভাগের আবেদন দায়ের করার পর সামাজিক বিচার নামে অত্যাচার থেকে কিছুটা রেহাই পান বাদী। তবে বিবাদীরা সময়ের আবেদন করে মামলাকে দীর্ঘায়িত করে। আট বছর ধরে মামলায় আসা-যাওয়া করতে হয় অসহায় এ মহিলাকে। ছায়েরা খাতুন প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, বারবার তারিখ পড়ায় বছরের পর বছর মামলায় হাজিরা দিয়ে আসছেন তিনি। একদিন আদালতের পেশকার নজরুল ওই মহিলাকে ডেকে বলেন, এভাবে চললে মামলার রায় বাদীর পক্ষে আসবে না। জজ সাহেব তাকে খবর দিতে বলেছেন। এ মামলার ডিগ্রী পেতে হলে সাহেবের জন্য ২ লাখ এবং পেশকারের জন্য বিশ হাজার টাকা যোগাড় করতে হবে। বাদী ছায়েরা বলেন, তার কথা মতে দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা পেশকার নজরুলের হাতে বুঝিয়ে দেয়া হয়। নির্ধারিত তারিখে মামলার রায় প্রচার না হওয়ায় পেশকারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি বিবাদী পক্ষ আদালতের পিয়ন শওকতের মাধ্যমে আরও বেশি টাকা অফার করায় কিছুটা জটিলতা হয়েছে জানান। এতে ওই মহিলার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। পেশকার আরও বলেন, তারা তিন লাখ বিশ হাজার টাকা প্রদান করায় মামলাটি খারিজ করে দেয়া হয়েছে। তাই পেশকার তাকে এবি ব্যাংক কক্সবাজার শাখার নিজের হিসাব থেকে ২ লাখ বিশ হাজার টাকার চেক লিখে দেন। ঘটনাটি বাদীর পক্ষে আইনী সহায়তাকারী আইনজীবী আ জ ম মঈন উদ্দিন ও বারের সভাপতি মোহাম্মদ ইসহাককে অবহিত করলে এ বিষয়ে জেলা জজ সাহেবকে জানানো হবে বলে আশ্বস্ত করেন। সহকারী জজ আদালতে বাদীর সঙ্গে যা করা হয়েছে, তার বিচার দাবি করে প্রধান বিচারপতির কাছে লিখিত অভিযোগে ছায়েরা খাতুন উল্লেখ করেন, আমি ন্যায় বিচার প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে চরম হতাশ। আর কোন অসহায় গৃহবধূর চোখের পানি ও বোবা কান্নায় আদালতের বাতাস যেন ভারি হয়ে না উঠে, এজন্য প্রধান বিচারপতির ন্যায় বিচারের হাত প্রসারিত হলে তিনি ন্যায় বিচার পাবেন বলে আকুতি জানিয়েছেন।
×