ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শুদ্ধাচার পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ৩ মে ২০১৭

শুদ্ধাচার পুরস্কার

সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এবার সরকার প্রণয়ন করেছে ‘শুদ্ধাচার পুরস্কার প্রদান নীতিমালা ২০১৭’। এর প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো সরকারী চাকরিরতদের শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদান। ব্যক্তি ও চাকরিজীবনে শুদ্ধাচার চর্চার নানাদিক রয়েছে। এর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৮টি সূচক, যেগুলোর মধ্যে রয়েছে পেশাগত জ্ঞান ও দক্ষতা, নীতিনৈতিকতা, আদর্শ, কর্তব্যনিষ্ঠা, শৃঙ্খলাবোধ, দায়িত্বশীলতা, সহকর্মী ও অধঃস্তনদের প্রতি আচরণ, সেবা গ্রহীতার প্রতি আচরণ, ঘুষ-দুর্নীতি পরিহার, মিতব্যয়িতা, উদ্ভাবন চর্চা ইত্যাদি। এসব সূচকের জন্য রয়েছে ৯০ নম্বর। এর সঙ্গে মন্ত্রণালয়-বিভাগসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থায় ধার্যকৃত ১০ নম্বরসহ মোট ১০০ নম্বর বিবেচিত হবে। কোন চাকরিজীবীর গুণাবলীর সূচকের বিপরীতে প্রাপ্ত সর্বমোট নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ন ও নির্বাচিত করা হবে সেরা কর্মকর্তা-কর্মচারী। পুরস্কার হিসেবে একটি সার্টিফিকেট এবং এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ দেয়া হবে। মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সচিব ও সচিবসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-১০ ভুক্ত একজন কর্মচারী এবং গ্রেড-১১ থেকে গ্রেড-২০ ভুক্ত একজন কর্মচারী পাবেন এই পুরস্কার। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন মাঠপর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে জাতীয় শুদ্ধাচার উপদেষ্টা পরিষদ এবং অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুদ্ধাচার চর্চায় উৎসাহ প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এই নীতিমালা। সরকারের উর্ধতন মহলে এ রকম চিন্তা-ভাবনা চলছিল দীর্ঘদিন থেকেই। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বিক মান ও দক্ষতা ভাল নয়। ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে, তবে সততা ও নিয়মনিষ্ঠাসহ কর্ম-সংস্কৃতি বা ইংরেজীতে ওয়ার্ক কালচার বলতে যা বোঝায়, তা এখন পর্যন্ত গড়ে উঠতে পারেনি। অন্যান্য সূচকের কথা বাদ দিলেও প্রতিদিন এমনকি সময়মতো অফিসে আসা এবং ঘড়ির কাঁটা ধরে অফিস ত্যাগের বিষয়টিও মানা হয় না অধিকাংশ ক্ষেত্রে। সম্প্রতি সরকারী অফিসেই ভুয়া ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেখিয়ে মাসের পর মাস অফিসে উপস্থিত এমনকি ওভারটাইম নেয়ারও নজির মিলেছে। আর নীতি-নৈতিকতার কথা যত কম বলা যায়, ততই বোধকরি ভাল। কেননা, ঘুষ-দুর্নীতি-অনিয়ম প্রায় সর্বত্রই পরিলক্ষিত হয় অন্তত সরকারী অফিস-আদালতের ক্ষেত্রে। সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতা ও কর্মব্যনিষ্ঠা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। অতি সম্প্রতি সুনামগঞ্জে সুবিস্তীর্ণ হাওড় অঞ্চলে অতিবর্ষণ, পাহাড়ী ঢল ও অকাল বন্যায় যে ব্যাপক ফসল ও মৎস্যহানি হলো, তা নিয়ে পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বহীনতা নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। সুনামগঞ্জবাসীসহ সুনামগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পর্যন্ত অভিযোগ তুলেছেন এই বলে যে, পাউবোর প্রতি কৃষক ও মানুষের আর আস্থা নেই। অদূর ভবিষ্যতে এই সংস্থাকে দিয়ে ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ আর না করার আহ্বানও জানানো হয়েছে। অন্যদিকে দুর্যোগকালে হাওড় ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় কর্মকর্তা দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে এসব অনিয়ম-অনাচার-দুর্নীতি ও দায়িত্বহীনতা অনতিবিলম্বে দূর করতে হবে। সরকারের নবপ্রণীত শুদ্ধাচার পুরস্কার যদি এসব ক্ষেত্রে কিছু মাত্র ইতিবাচক অবদান রাখতে সক্ষম হয় তাহলেই এর সাফল্য ও সার্থকতা।
×