ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পপি দেবী থাপা

সবুজ গৃহ সবুজ নগরী

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১ মে ২০১৭

সবুজ গৃহ সবুজ নগরী

অপার সৌন্দর্যে ঘেরা প্রকৃতি তার মনোমুগ্ধকর রূপের ডালি নিয়ে ভুবন এবং ভবনের শোভা বর্ধনে স্বমহিমায় মানবেরে করিয়েছে তার রূপসাগরে অবগাহন। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ কখনও বা তার হৃদয়াবেগকে প্রকাশিতে ছুটে গেছে প্রকৃতির দ্বারে আবার কখনও বা প্রকৃতিকে তুলে এনেছে সম্মুখে। আবদ্ধ করেছে নিজস্ব পরিসীমায়। প্রকৃতির রঙে রাঙিয়ে তুলেছে তার চারপাশ। দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে ছেঁয়ে গেছে তার আবাস ভবন। প্রকৃতিতে এমন কিছু গুল্ম জাতীয় বৃক্ষ রয়েছে যা আপনার ভবনের বহিরাংশের (ফটক, জানালা, ব্যালকনি, প্রাচীর) শোভা বাড়িয়ে দেয়। আপনার ভবনটিকে সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে উপস্থাপন করে অনান্য ভবন থেকে আলাদা করে তোলে। আর আমরা সবাই এপথ অনুসরণ করলে আমাদের প্রিয়নগরী হয়ে উঠবে দৃষ্টিনন্দন সবুজ। মাধবীলতা : যুগ যুগ ধরে কবি হৃদয়কে আলোড়িত করে চলেছে মাধবীলতা। লেখকের লেখনীর ছন্দে নেচে উঠেছে মাধবীলতার প্রতিটি পাঁপড়ি। কখনও কবিতায় কখনও গানে প্রকাশ পেয়েছে তার মন ভোলানো রূপের বন্যা। বাড়ির সামনের গেট সাজাতে মাধবীলতা খুব উপযোগী। ১/২ তলা বড়ির ছাদের ওপরে টবে কোন এক কর্নারে গাছ রেখে ছাদের রেলিং বরাবর নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিলে সবুজ পাতাসহ মাধবীলতার রঙের সমন্বয়ে যে সৌন্দর্যের সৃষ্টি হবে তা বাড়িকে আরও সুন্দর করে তোলে। মাধবীলতা সাধারণত গোলাপি, সাদা, হলুদ রঙের হয়ে থাকে। আবার এ সব রঙের সমন্বয়ে ভিন্ন একটি নতুন রঙেরও সৃষ্টি হয়। রঙের বৈচিত্র্যে ভরা মাধবীলতা আপনার হৃদয়ে এঁকে দেবে রঙিন আল্পনা একই সঙ্গে রাঙিয়ে তুলবে অন্যের দৃষ্টিকেও। বাতাসের দোলায় দোদুল্যমান মাধবীলতার নিচ দিয়ে আপনার আগমন এবং প্রস্থান হবে রোমাঞ্চকর। বাগান বিলাস : অনেক আগে থেকেই গেট সাজানোর কাজে বাগান বিলাস ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাগান বিলাসের ফুলগুলো বিভিন্ন রঙের হয়ে থাকে যেমন গোলাপি, সাদা, লাল, হলুদ রঙের। সাধারণত আমরা গোলাপি রঙের বাগান বিলাস বেশি দেখে থাকি। গেটের দুপাশ দিয়ে ভিন্ন রঙের বাগান বিলাস গাছ তুলে দিলে দুটো ভিন্ন রঙের বাগান বিলাসের সমন্বয়ে আপনার গেটের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত ডালপালা এবং পাতার দ্বারা যেন ঝোপঝাড়ের সৃষ্টি না হয়। এ কারণে কিছু দিন পরপর পাতা ও ডাল কেটে গেটের আকারে সেপ দিয়ে সাজিয়ে রাখা উচিত। কিছু বাগান বিলাসের পাতায় হলুদ রঙের ছোঁপ ছোঁপ আকৃতি থাকে যা ফুল পাতার মধ্যে বাড়তি একটি রঙের সমন্বয় যোগ করে তৈরি হয় রঙের জলতরঙ্গ। আর এ রঙের আভায় উজ্জ্বলতা পায় আপনার আবাসন ও তার চারপাশ। আরমানডা : আরমানডা গাছের ফুল মূলত হলুদ রঙের হয়ে থাকে। লতিয়ে বেড়ে ওঠা এ গাছটি আপনার আবাসনের প্রবেশদ্বার, বাড়ির ছাদের রেলিং দিয়ে নিচের দিকে ঝুলিয়ে দিলে তা বাড়ির শোভা বাড়িয়ে তোলে। এক তলা বিশিষ্ট বাড়ির বারান্দার গ্রিলেও এ গাছ আকর্ষণীয়। গ্রামে কিছু কিছু বাড়ি থাকে যার চারপাশের প্রাচীর থাকে বাঁশের তৈরি অথবা বেড়া দেয়া। এ জাতীয় প্রাচীরের ওপর দিয়ে গাছটি সহজে লতিয়ে চলতে পারে। পাতায় ও ফুলে পরিপূর্ণ হলে তা পূর্ণাঙ্গ একটি প্রচীর এ রূপ নেয়। মর্নিংগ্লোরি : আপনার আবাসনকে প্রকৃতির রঙে রাঙানোর জন্য ব্যালকনির একটি টবে মর্নিংগ্লোরি গাছ রেখে গ্রিলের সঙ্গে জড়িয়ে দিলে বা বাড়ির প্রাচীরের উপরের অংশের গ্রিল বা কাঁটাতার বেয়ে এ গাছ উঠিয়ে দিলে লতিয়ে চলা গাছটি প্রাচীরের শোভা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়িয়ে তোলে আপনার আবাসস্থলের সৌন্দর্য। আমরা সচারাচর বেগুনি রঙের মর্নিংগ্লোরি দেখে থাকি তবে এ ফুল নীল, সাদা ও হলুদ রঙেরও হয়ে থাকে। প্রাচীর ঘেড়া মর্নিংগ্লোরির বৈচিত্র্যময় রং এবং রূপ সহজেই আকৃষ্ট করে প্রকৃতিপ্রেমীকে। এ্যারোমেটিক জুঁই : গাছটির ছোট পাতা আর সাদা রঙের ছোট ছোট ফুলগুলো যে কারও হৃদয় হরণ করতে পারে। আপনার ব্যালকনি অথবা জানালাকে সুন্দর করে তুলতে গাছটি এনে দেবে এক ভিন্ন মাত্রা। অপরাজিতা : ডিম্বাকৃতি পাতা আর নীল রঙের ফুলের এ গাছটি আমাদের প্রায় সকলের পরিচিত। টবে লাগানো গাছটি জানালার সানসেট এ রেখে গাছের বেড়ে ওঠা কচি লতাটিকে জানালার গ্রিলের সঙ্গে জড়িয়ে অথবা বাড়ি যদি এক তলা হয় সে ক্ষেত্রে বাড়ির বাইরে জানালার সোজাসুজি মাটিতে বেড়ে ওঠা গাছটি লাঠির সঙ্গে পেঁচিয়ে জানালা বরাবর উঠিয়ে দিলে বাড়ির বহিরাংশ এবং জানালা দুটির শোভা বাড়িয়ে তোলে। মানিপ্ল্যান্ট : সহজে বেড়ে ওঠা গাছটির বাহারি রঙের পাতা তার আকর্ষণ। আর এ রং বাহারি পাতা আপনার গৃহের জানালা ও ব্যালকনিকে সাজিয়ে তুলবে তার নয়নাভিরাম রঙের ছটায়। ওয়াল কার্পেট : ছোট ছোট সবুজ রঙের পাতা বিশিষ্ট এ গাছটি আপনার বাড়ির বাইরের প্রাচীরকে করে তোলে আকর্ষণীয়। বাহির থেকে দেখে মনে হয় সবুজ গালিচায় ঘেরা সমগ্র বাড়িটা। চারপাশে সবুজের সমারোহ আপনার মনকে করে তুলবে চির সবুজ। ফুলের নানান রং রাঙিয়ে তুলবে হৃদয়কে। এ যেন প্রকৃতির সঙ্গে বসবাস। বুকভরা অক্সিজেন আর পরিচ্ছন্ন মানসিকতা নিয়ে সুস্থ থাকবেন আপনি।
×