ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গুলি লুট আগুন

ফরিদপুরে আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১ মে ২০১৭

ফরিদপুরে আওয়ামী  লীগের দুপক্ষের  সংঘর্ষে নিহত ১

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ৩০ এপ্রিল ॥ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফরিদপুরের সালথায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় একজন নিহত হয়েছে। এ সময় ২৪টি দোকান ও বাড়ি ভাংচুর লুটপাট করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হয়েছে ৩১ জন। রবিবার সকাল সাড়ে ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা ও পরে শটগানের ৪০টি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালপাড়া গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আটঘর ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হাসান খান সোহাগের সঙ্গে একই গ্রামের আওয়ামী লীগ সমর্থক কাওসার মাতুব্বরের বিরোধ চলে আসছিল। এ বিরোধের জেরে শনিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে শহীদুল হাসানের সমর্থক সুজন শেখের সঙ্গে কাওসার মাতুব্বরের সমর্থক নিশান খানের কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। ঘটনার জের ধরে রবিবার ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে কাওসারের সমর্থনে পাশের গট্টি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওদুদ মাতুব্বর এবং ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান ও কানাইপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফকির বেলায়েত হোসেনের সমর্থকরা রামখ-, রণকাইল, তেঁতুলিয়া, গট্টি, খোয়াড়, খাগৈড়সহ সালথার আটঘর ও গট্টি এবং পাশের ফরিদপুর সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় চার শতাধিক ব্যক্তি গোয়ালপাড়া গ্রামে ইউপি চেয়ারম্যান শহীদুল হাসান খানসহ তার সমর্থকদের বাড়িতে, দোকানে হামলা করে। হামলার সময় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। হামলার খবর পেয়ে সালথা থানা ও ফরিদপুর পুলিশ লাইন থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। হামলা ঠেকাতে গিয়ে চার পুলিশ সদস্য আহত হন। এ সময় হামলাকারীদের ধারাল অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন শহীদুলের সমর্থক জিয়া শেখ (২৭)। জিয়ার ডান পাজরে ধারাল অস্ত্রের দুটি কোপ রয়েছে। জিয়াকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সদরের কানাইপুর ইউনিয়নের রামখ- এলাকায় মৃত্যুবরণ করে। জিয়া একজন কৃষক এবং গোয়ালপাড়া গ্রামের শাহাজদ্দিন শেখের ছেলে। আট মাস আগে বিয়ে করেছিলেন জিয়া, তার স্ত্রী বর্তমানে সন্তান সম্ভাবা। হামলাকারীরা শহীদুলের বাড়িসহ তার ছয় সমর্থকের সাতটি বাড়ি ভাংচুর ও লুটপাট করে। এ সময় শহীদুলের দুটি পাটখড়ির স্তূপ, একটি পেঁয়াজের মাচা ও তার এক সমর্থকের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। হামলাকারীরা গোয়ালপাড়া বাজারে চা ও মুদির দোকনসহ ১৭টি দোকান ভাংচুর করে। এ সংঘর্ষের সময় শহীদুলের ২৭ সমর্থক আহত হন। এর মধ্যে ৮ জনকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকিদের স্থানীয় পর্যায়ে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আটঘর ইউপির চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম খান জানান, রবিবার ভোরে গট্টি ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওদুদ মাতুব্বর ও পার্শ্ববর্তী কানাইপুর ইউপির চেয়ারম্যান ফকির বেলায়েত হোসেনের সমর্থকরা দেশী অস্ত্র নিয়ে অতর্কিতে আমার ও আমাদের সমর্থকদের বাড়িঘর ও দোকানে হামলা করে। এ সময় জিয়া শেখ নিহত হন। হামলায় জাহাঙ্গীর হোসেন, মোতালেব মোল্লা, মোশারফ, মহাসিনসহ ২৭ জন আহত হয়েছে। ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুর ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ফকির বেলায়েত হোসেন বলেন, এ হামলার সঙ্গে আমার কিংবা আমার কোন লোক জড়িত নয়। তিনি বলেন, আটঘর ইউপি সালথা উপজেলায় তাদের সঙ্গে আমার কোন বিরোধ নেই। ‘আমার সমর্থকরা ওখানে হামলা করতে যাবে কেন?’ প্রশ্ন করে ফকির বেলায়েত বলেন, হামলার খবর জানার পর আমি আমার সমর্থকদের পরামর্শ দিয়েছিলাম তারা যেন ওখানে না যায়। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র সাহা বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় জিয়া শেখ নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় হামলাকারীরা কয়েকটি বাড়ি ও দোকান ভাংচুর করে। পুলিশ প্রথমে লাঠিপেটা ও পরে শটগানের ৪০টি গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।
×