ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন ভ্যাট আইনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ অনেক বেশি সুরক্ষিত

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১ মে ২০১৭

নতুন ভ্যাট আইনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ অনেক বেশি সুরক্ষিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নতুন ‘মূল্য সংযোজন ও সম্পূরক শুল্ক আইন-২০১২’-এর আওতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সুরক্ষা পাবে বলে দাবি করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির ৩৮তম সভায় এমন মন্তব্য করেছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও এফবিসিসিআই যৌথভাবে এ সভার আয়োজন করে। এনবিআর জানিয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ভ্যাটের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকারী রাজস্বের সিংহভাগ আসে ভ্যাট আইন-১৯৯১-এর অধীন আরোপিত ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক থেকে। আমদানি পর্যায়ের ভ্যাট এবং সম্পূরক শুল্ক হিসাবে নিলে অর্ধেকেরও বেশি সরকারী রাজস্বের যোগান দেয় ভ্যাট আইন-১৯৯১। এ আইনের আওতায় ছোট-বড় সবাইকে বিভিন্ন নামে ভ্যাট দিতে হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, সাধারণভাবে ৮০ লাখ টাকার কম আয় হয় এমন ব্যবসায়ীরা ৩ শতাংশ টার্নওভার কর দেন। কোন ব্যবসায়ী যদি বছরে এক টাকাও বিক্রি করেন, তবু তাকে টার্নওভার কর বা ভ্যাট দিতে হয়। আইনে স্বাভাবিকভাবে ৮০ লাখ টাকার নিচের সবার জন্য ৩ শতাংশ টার্নওভার কর দেয়ার সুযোগ থাকলেও একটি বিশেষ ক্ষমতায় যে কোন ব্যক্তিকে টার্নওভার নির্বিশেষে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে বাধ্য করতে পারে সরকার। প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে টার্নওভার যাই হোক না কেন, সবাইকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেয়ার বিধান জারির সুযোগ রয়েছে। সেই ক্ষমতাবলে অর্থাৎ ১৯৯১ সালের আইনের আওতায় ঢাকা (উত্তর), ঢাকা (দক্ষিণ) এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকার সব উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে টার্নওভার নির্বিশেষে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। তাছাড়া দেশব্যাপী অসংখ্য পণ্য এবং সেবাকে টার্নওভার নির্বিশেষে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। কিন্তু নতুন আইনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সম্পূর্ণভাবে করের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। আবার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর সংজ্ঞাও ব্যাপকভাবে প্রসারিত করা হয়েছে। নতুন অনলাইন ভ্যাটের আওতায় যাদের ব্যবসার বার্ষিক বিক্রি ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত তাদের কোন ধরনের নিবন্ধন নিতে হবে না, কোন ধরনের ভ্যাট দিতে হবে না। আর নতুন আইনে সরকারকে এর ব্যতিক্রম করার ক্ষমতা দেয়া হয়নি। ফলে এনবিআর চাইলেও আইন পরিবর্তন না করে শুধু প্রজ্ঞাপন দিয়ে কারও জন্যই এ সুযোগ প্রত্যাহার করতে পারবে না। নতুন আইনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ অনেক বেশি সুরক্ষিত হয়েছে। অন্যদিকে, বার্ষিক মোট করযোগ্য বিক্রি অনুর্ধ ৮০ লাখ টাকা হলে তাদের মাঝারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মাত্র ৩ শতাংশ হারে টার্নওভার কর দিতে হবে তাদের। জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক মূল্যবোধের বিষয় বিবেচনায় শুধু সিগারেট এবং মদের েেত্র এর ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। এ দুটি খাত ছাড়া অন্য যে কোন মাঝারি ব্যবসায়ী এ সুযোগ পাবেন। তাদের এ সুবিধার ব্যতিক্রম করার মতাও আইনে এনবিআরকে দেয়া হয়নি। ফলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, নতুন আইন ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়ের ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা তথা এসএমই খাতের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এফবিসিসিআই সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের সভাপতিত্বে পরামর্শক সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় এফবিসিসিআইসহ দেশের সব ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
×