ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম দেয়ার দায়ে মমতাজের ঘর ভাঙছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১ মে ২০১৭

প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম দেয়ার দায়ে মমতাজের ঘর ভাঙছে

নিজস্ব সংবাদদাতা, কুষ্টিয়া, ৩০ এপ্রিল ॥ শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে বলতেন ‘তুই অপয়া, পোকাড়ে বেগুন জন্ম দিয়েছিস’। এর দায়ভার তোকেই নিতে হবে। ওর চিকিৎসা করে আর কি হবে। উঠতে-বসতে আমাকে নানা নির্যাতন সইতে হয়েছে। স্বামী সেলিম রেজা বিদেশে গিয়ে বাবা- মায়ের কথা গুনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। গরিব পিতার বাড়িতে এখন আমার খেয়ে না খেয়ে কোনমতে দিন কাটছে। এভাবেই নিজের দুর্বিষহ জীবনের কথা বলছিলেন মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কাজিপুর গ্রামের গৃহবধূ মমতাজ বেগম। তার অপরাধ সে প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম দিয়েছে। এ অপরাধে মমতাজ বেগমকে শ্বশুর- শাগুড়ির গাল-মন্দসহ সইতে হয় শারীরিক নির্যাতন। তার দায়ের করা নির্যাতনের ওই মামলায় শ্বশুর-শাশুড়ি এখন জেলহাজতে। অসহায় মমতাজ তার দাম্পত্য জীবনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। মমতাজ বলেন, আয়-রোজগার নেই। ছেলের চিকিৎসা করতে পারছি না। প্রতিদিন ছেলের জন্য ওষুধ ও ভাল খাবার লাগে। একমাত্র বুকের ধন না খেয়ে বিনা চিকিৎসায় মরতে বসেছে। বর্তমানে তিনি দিনমজুর বাবার বাড়ি বেতবাড়ীয়া গ্রামে অবস্থান করছেন। নির্যাতনের মামলায় গ্রেফতার করে তার শ্বশুর-শাশুড়িকে আদালতে সোপর্দ করেছে গাংনী থানা পুলিশ। মামলা তুলে নিতে মমতাজকে হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তার পরিবারের। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, কাজিপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে সেলিম রেজার সঙ্গে নয় বছর আগে বিয়ে হয় মমতাজ বেগমের। সেলিম তার আপন খালাত ভাই। তখন সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। সে সময় মমতাজের সঙ্গে বিয়ে না হলে বিষপানে আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দেয় সেলিম। মমতাজের বাবা-মার আপত্তি থাকা সত্ত্বেও বিয়ে হয়। বিয়ের পর তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। ২০১০ সালে তার শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলে সাবিদের জন্ম হয়। এখন তার বয়স সাত বছর। হাঁটাচলা করতে পারে না। মায়ের কোলে বসেই তার আহারসহ যাবতীয় কার্যাদি চলে। মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হয়। উঠে দাঁড়াতে পর্যন্ত পারে না। সাবিদের জন্মের পর থেকেই মমতাজের দাম্পত্য জীবনের সুখে ছেদ পড়তে শুরু করে। স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির কটু কথা শুনতে হয়। সাবিদের এই অবস্থার জন্য তারা মমতাজকে দায়ী করে। এভাবেই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মধ্যেই দাম্পত্য জীবনের সময় পার হতে থাকে। সাত মাস আগে তার স্বামী সেলিম রেজা ওমানে পাড়ি জমায়। বিদেশ যাওয়ার জন্য মমতাজের বাবা ঋণ করে দেড় লাখ টাকাও দেন জামাইকে। মেয়ের সুখের জন্য তিনি ধারদেনা করতে পিছপা হননি। কিন্তু সুখের বদলে তার জীবনে নেমে আসে অন্ধকারের অমানিশা।
×