ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১ মে ২০১৭

কক্সবাজারে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ পেকুয়া মগনামা চেপ্টাখালী নাশি থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ১.২৫ কিলোমিটার অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এতে টেকসই বেড়িবাঁধ বঞ্চিত হচ্ছে মগনামার ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষ। ফলে উপকূলবাসীকে রক্ষার সরকারী উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সরকার দলীয় স্থানীয় নেতার সহায়তার ওপর ভর করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ অনিময় ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে। ফলে স্থানীয়রা দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না বলে জানা গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, পেকুয়া উপজেলার ১২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত মগনামা, উজানটিয়া ও রাজাখালী ইউনিয়নের ২০ কিলোমিটার অংশে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেয়া হয়। এজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে একশ’ ৯০ কোটি টাকা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে ওই ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে সংস্কার কাজ চলছে মাত্র ৭ কিলোমিটার অংশে। বাকি ১৩ কিলোমিটার এখনও রয়েছে অরক্ষিত। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দায়িত্বশীলরা বলছেন, আগামী বছরের বর্ষা মৌসুমের আগে শেষ হবে বেড়িবাঁধের বাকি অংশের কাজ। সরেজমিন দেখা যায়, মগনামা চেপ্টাখালী নাশি থেকে কাকপাড়া পয়েন্ট পর্যন্ত (২.৭ কিলোমিটার) বেড়িবাঁধ অংশে দুইটি স্কেভেটর দিয়ে মাটি ভরাটের কাজ করা হচ্ছে। বেড়িবাঁধের চেপ্টাখালী নাশি থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত (১.২৫ কিলোমিটার) অংশে লিভার সাইটে (বাঁধের বাইরের অংশ) ব্লক বসানোর কাজ চলছে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ বেড়িবাঁধের চেপ্টাখালী নাশি থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত অংশে নির্মাণ কাজ ব্যাপক অনিয়মের মাধ্যমে তড়িঘড়ি করে শেষ করা হচ্ছে। স্থানীয় আবু তাহের ও ইসমাঈল বলেন, চেপ্টাখালী নাশি থেকে কাকপাড়া পয়েন্ট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ অংশে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন স্টেশনের জন্য নির্ধারিত হওয়ায় এর নির্মাণ কাজে পরোক্ষ নজরদারি রাখছে নৌবাহিনী। তাই এ অংশে অনিয়ম খুব একটা হচ্ছে না বলেও স্থানীয়দের অভিমত। যে পরিমাণ টেকসই কাজ সেখানে হচ্ছে, তার অর্ধেক টেকসই কাজ হচ্ছে না তার উল্টো পাশে চলমান অপর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। কয়েকজন স্থানীয় ব্যক্তি ও জনপ্রতিনিধি বলেন, চেপ্টাখালী নাশি থেকে মগনামা লঞ্চঘাট পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মাণ কাজে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। কাজের সিডিউল অনুযায়ী করা হয়নি মাটি ভরাট ও কম্প্যাক্ট। যার কারণে ইতোমধ্যে তাদের ব্যবহৃত ভারী বাহন চলাচলে মাটির কাজ শেষ করে ব্লক দেয়ার পর্যায়ে থাকা বেড়িবাঁধটি দেবে যেতে বসেছে। তারা বলেন, চেপ্টাখালী নাশি থেকে কাকপাড়া পয়েন্ট অংশে যেসব স্কেভেটর কাজ করছে, তা উঠালে ধসে যাবে ওই বেড়িবাঁধ। এছাড়া সিডিউল অনুসারে রাখা হয়নি লিভার সাইটের দৈর্ঘ্য, ডাউন সাইটের দৈর্ঘ্য এবং বেড়িবাঁধের টপের প্রস্থ, তড়িঘড়ি করে যেনতেন কাজ করে সরকারী অর্থ লোপাটের চেষ্টায় মেতেছে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আতিকুল ইসলাম বলেন, কুচক্রী মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এখনও আমরা কাজ শেষ করিনি। তার আগে কাজ নিয়ে অভিযোগ তোলার কোন সুযোগ নেই। আমরা কাজ শেষ করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবশ্যই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিডিউল অনুযায়ী কাজ বুঝে নেবেন।
×