ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু অপহরণ ॥ মাবাবা ও ভাই আটক

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১ মে ২০১৭

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে শিশু অপহরণ ॥ মাবাবা ও ভাই আটক

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের শিশুকন্যাকে অপহরণের নাটক সাজিয়ে স্বামী-ছেলেসহ ফেঁসে গেছে বগুড়ার এক গৃহবধূ। শনিবার সকালে অপহরণ হয় চার বছরের শিশু মেঘলা মানতাসা নকশি। অপহরণের অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশের টানা অভিযানে রাতে উদ্ধার হয় শিশুটি। এ ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে শিশুটির মা নিলুফা শারমিন রিতা (৩৫), বাবা মিঠু আহম্মেদ (৩৫) ও ভাই স্কুলছাত্র ফাহিম নুরে আলম নক্ষত্র (১৪)। গ্রেফতার তিনজনই শিশুটিকে অপহরণ করেছিল বলে পুলিশের নিকট স্বীকারোক্তি দিয়েছে। অপহৃত শিশুকে উদ্ধার এবং এ ঘটনায় জড়িত তার বাবা-মা ও ভাইকে গ্রেফতারের পর রবিবার বগুড়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান দুপুরে গ্রেফতারকৃতদের তথ্যানুযায়ী অপহরণ ও শিশু উদ্ধারের ঘটনাটি তুলে ধরেন। পুলিশ জানায়, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ফুলদীঘি এলাকার নিলুফা শারমিন রিতার সঙ্গে প্রথম স্বামীর বিচ্ছেদ হয় প্রায় ১৪ বছর আগে। এরপর তার দ্বিতীয় বিয়ে হয় মিঠু আহম্মেদের সঙ্গে। তবে রিতা তার বাবার বাড়িতেই থাকতেন। স্বামী ঢাকার আদাবর এলাকায় ব্যবসা করেন। প্রথমপক্ষের একটি ছেলে ও দ্বিতীয়পক্ষের দুটি মেয়ে রয়েছে। পুলিশ জানায়, পারিবারিক বিষয় নিয়ে রিতার ভাতিজাদের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ কারণে তাদের হেনস্তা ও ফাঁসাতে রিতা ও তার স্বামী নিজের শিশুকন্যাকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে রিতা পাঁচ বছরের শিশু মেঘলাকে নিয়ে ফুলদীঘি মডেল কিন্ডারগার্টেনে যান। মেঘলা প্লে শ্রেণীর শিক্ষার্র্থী। স্কুল থেকে রিতা মেয়ে মেঘলাকে তুলে দেয় তার ছেলে নক্ষত্রের হাতে। নক্ষত্র অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। পরে নক্ষত্র মায়ের পরিকল্পনা অনুযায়ী সৎবোন মেঘলাকে শহরের পৌর পার্ক এলাকায় এসে বাবা মিঠু আহম্মেদের কাছে দেয়। মিঠু ঢাকায় থাকলেও শুধু সাজানো অপহরণের জন্য বগুড়ায় আগেই এসে অবস্থান নেয় বলে পুলিশ জানায়। মেয়েকে নিয়ে সে স্ত্রী রিতার বোনের বাড়ি দুপচাঁচিয়া উপজেলায় যায়। অপরদিকে রিতা শাজাহানপুর থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে। তিনি পুলিশকে জানান, স্কুলের মাঠে মেয়েকে রেখে স্কুল পরিচালকের অফিসে তিনি গিয়েছিলেন। এরপর তার মেয়েকে কোথাও পাচ্ছেন না। পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পর দ্রুত তদন্ত ও অভিযান শুরু করে। প্রথমে সন্দেহমূলকভাবে অপহৃত শিশুর ভাই নক্ষত্র ও পরে মা নিলুফা শারমিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। একপর্যায়ে স্কুলছাত্র কিশোর নক্ষত্র অপহরণের বিষয়ে তথ্য দেয়। পুলিশের অভিযানের মুখে রাত সাড়ে ১১টার দিকে অপহৃত শিশুটিকে তার নানার বাড়ির সামনে ছেড়ে দেয়া হয়। সেখান থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার ও পরে তার বাবা মিঠু আহম্মেদকেও গ্রেফতার করে। পুলিশ জানায়, রিতা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে নিজের মেয়েকে অপহরণের ঘটনা সাজায়। পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়ার কারণে শিশুটি আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেয়েছে ।
×