ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রেলের নিয়োগ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১ মে ২০১৭

রেলের নিয়োগ কমিটি নিয়ে প্রশ্ন

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে চলছে ২০টি ক্যাটাগরির ১৫৬৪ শূন্য পদের নিয়োগ পরীক্ষা। ইতোমধ্যে বেশকিছু পদের পরীক্ষা গ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নির্বাচনী বা নিয়োগ কমিটি গঠন করা হয়নি বলে খোদ রেল কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন। স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ কমিটিতে আহ্বায়ক থেকে শুরু করে সদস্য পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে এই নিয়োগ পক্রিয়ায়। ফলে কমিটি নির্ধারণ ও অনুমোদন প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগ রয়েছে, এ কমিটিতে স্থান পেতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লবিংসহ অর্থ লেনদেন করতে হয়েছে। গত কয়েক দফার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কমিটি নির্ধারণে চলে আসছে অনিয়মের মধ্য দিয়ে। এদিকে, রেল মন্ত্রণালয়ের জনপ্রশাসন-১ ও মহাপরিচালক দফতরের প্রেরিত চিঠির নির্দেশনা অনুযায়ী বাছাই কমিটি ও নিয়োগ কমিটি নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়ে অনুমোদনকারী হিসাবে রেলের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের জিএমদ্বয়কে পদাধিকারবলে ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। কমিটি নির্ধারণের পর কয়েক কর্মকর্তাকে সদস্য পরিবর্তনের ঘটনা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। তবে দুটি কমিটি অনুমোদনের জন্য চীফ পার্সোনেল অফিসারের অজয় কুমার পোদ্দারের পক্ষ থেকে প্রস্তাবনা দেয়ার পাশাপাশি অনুমোদিত কমিটির দফতরাদেশ দেয়া হয়। এ দফতারাদেশে কমিটির কার্য পরিধিতে বেশ কয়েকটি শর্তও জুড়ে দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের জিএমদ্বয়ের অনুমোদনক্রমে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও তিন সদস্যের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও সংশ্লিষ্টতা কিভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে এর কোন ব্যাখ্যা দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। নিয়োগ ক্যাটাগরি অনুযায়ী নিয়োগ কমিটি নির্ধারণে অভিজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যেও রয়েছে চরম অসন্তোষ। কারণ, বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নিয়োগের বিপরীতে আহ্বায়ক ও সদস্যদের কিসের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে ও আদৌ নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার যোগ্যতা ও সংশ্লিষ্টতা এসব কমিটির সদস্যদের রয়েছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয়, নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক থেকে সদস্য পর্যন্ত প্রত্যেকে জিএম থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত ম্যানেজ করে কমিটিতে ঠাঁই পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে কমিটিতে স্থান পেতে জেলাভিত্তিক যেমন তদবির রয়েছে, তেমনি রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাবও। তাছাড়া স্বজনপ্রীতির সূত্র ধরে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার মতো ঘটনাও ঘটছে রেল মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন-১ শাখার প্রজ্ঞাপনে ২০১৬ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ১৫টি দফতরাদেশ দেয়া হয়েছে কমিটি নির্ধারণে। নিয়োগ প্রার্থীদের আবেদন যাচাই বাছাইয়ে যেমন কমিটি রয়েছে, তেমনি ইস্যুকৃত ইন্টারভিউ কার্ডের বিপরীতে মৌখিক অথবা লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের নির্বাচনে রয়েছে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবসহ ৫ সদস্যের কমিটি। নির্বাচনী কমিটি যাচাই বাছাই কমিটির আবেদনপত্র রেজিস্ট্রার ও অন্যান্য দলিলাদি গ্রহণের পর বাছাই কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে সঠিক আবেদনকারীদের অনুকূলে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র ইস্যু করা। লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের ব্যবস্থাসহ লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের অনুকূলে মৌখিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র ইস্যু করা। রেলের নিয়োগ বিধিমালা ও সরকারী নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী প্রচলিত নিয়মে সরাসরি নিয়োগের যাবতীয় বিধিবিধান, পদ্ধতি, সরকারী আদেশ, নির্ধারিত জেলা ও অন্যান্য কোটা বিন্যাস করা কমিটির কাজের আওতাভুক্ত। এছাড়াও স্বল্প সময়ের মধ্যে চাকরি প্রার্থী নির্বাচনের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মহাব্যবস্থাপকদ্বয় বরাবর দাখিল করতে হয় কমিটিকে। এ ধরনের দফতরাদেশ উভয় জোনের জিএম বরাবর দাখিল করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয় চীফ পার্সোনেল অফিসারকে। যিনি মহাব্যবস্থাপকের পক্ষ হয়ে কাজ করেন। এক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও ৩ সদস্যের নাম, পদবি ও কর্মস্থলসহ উল্লেখ করে রেলের মহাপরিচালকের একান্ত সচিব, উভয় জোনের জিএম, নিয়োগ ক্যাটাগরি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রধান, পরিচালক সংস্থাপন, চীফ পার্সোনেল অফিসার (পূর্ব ও পশ্চিম) এবং নির্বাচনী কমিটির আহ্বায়কসহ সংশ্লিষ্ট সদস্যবৃন্দের কাছে দফতরাদেশ প্রেরণের দায়িত্ব চীফ পার্সোনেল অফিসারের। এ ব্যাপারে পূর্বাঞ্চলীয় জিএম ও নিয়োগ কমিটির অনুমোদনকারী আবদুল হাই জনকণ্ঠকে জানান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়মেই কমিটি নির্ধারিত হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক, সদস্য সচিব ও তিন সদস্যসহ ৫ সদস্যের কমিটিগুলো কিভাবে নির্বাচন করা হয়েছে এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নিয়োগ কমিটি নির্ধারণে আমার অনুমোদন থাকতে হয়। এক্ষেত্রে কোন ধরনের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয় না। প্রার্থী নির্বাচনে কমিটির সদস্য সংশ্লিষ্ট দফতরের কিনা এমন প্রশ্নে তিনি কোন উত্তর করেননি। এ বিষয় জানতে তিনি পূর্বাঞ্চলীয় এডিশনাল জিএম, সিপিও, সিইও’কে নিজ দফতরে হাজির করেন। এমনকি তথ্য অধিকার আইনের ফরমেট অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন।
×