ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মঙ্গলবার ঢাকায় আসবে কাজী আরিফের মরদেহ

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

মঙ্গলবার ঢাকায় আসবে  কাজী আরিফের মরদেহ

অনলাইন রিপোর্টার ॥ জাতীয় পতাকায় আচ্ছাদিত মুক্তিযোদ্ধা ও আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফের কফিনে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশিরা। শনিবার নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে বিপুলসংখ্যক প্রবাসী এই শিল্পীর জানাজায় অংশ নেন। ম্যানহাটানের মাউন্ট সিনাই সেন্ট লিউক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার এই আবৃত্তিকারের মৃত্যু হয়। পেশায় স্থপতি কাজী আরিফের বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি মিথুন আহমেদ জানান, নিউ ইয়র্ক সময় রবিবার রাত ১১টায় এমিরেটস এর একটি ফ্লাইটে কাজী আরিফের মরদেহ দেশে পাঠানো হবে। ঢাকায় কফিন পৌঁছাবে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৯টায়। নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের ভাইস কন্সাল জেনারেল শাহেদ আহমেদ জানান, রাষ্ট্রীয় খরচে কাজী আরিফের মরদেহ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হবে। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনসহ প্রবাসীদের অনেকেই এসেছিলেন কাজী আরিফের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। জানাজার আগে কাজী আরিফের ভগ্নিপতি আব্দুল করিম সবার কাছে দোয়া চেয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। কাজী আরিফের মেয়ে অনুসূয়াও উপস্থিত ছিলেন এ সময়। জানাজার পর কাজী আরিফের কফিন জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের সামনে রাখা হলে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, নির্বাহী সদস্য শাহানারা রহমান, খোরশেদ খন্দকার, উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান; সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ; অভিনেতা জামালউদ্দিন হোসেন; চলচ্চিত্র নির্মাতা কবীর আনোয়ার; বাংলাদেশ আবৃত্তি পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ। গণজাগরণ মঞ্চের গোপাল সান্যাল, শরাফ সরকার, সেমন্তি ওয়াহেদ, ওবায়দুল্লাহ মামুন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির যুক্তরাষ্ট্র সভাপতি ফাহিম রেজা নূর ও সেক্রেটারি স্বীকৃতি বড়ুয়া ও সাংস্কৃতিক সংগঠক গোপন সাহাও এসেছিলেন শ্রদ্ধা জানাতে। যুক্তরাষ্ট্র মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ড. এম এ বাতেন ও আব্দুল মুকিত চৌধুরী, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের যুক্তরাষ্ট্র ইউনিটের আহ্বায়ক রাশেদ আহমেদ, যুগ্ম আহবায়ক লাবলু আনসার ও সদস্য সচিব রেজাউল বারী এবং প্রবাসী আবৃত্তিশিল্পী, নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতিক সংগঠক, নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা পত্রিকাগুলোর সাংবাদিকরাও ফুল দিয়ে কাজী আরিফের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান। কাজী আরিফের জন্ম ১৯৫২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, রাজবাড়ী সদরের কাজীকান্দা গ্রামে। বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রাম শহরে। পড়াশোনা, রাজনীতি, শিল্প-সাহিত্য এসব কিছুরই হাতেখড়ি হয় সেখানে। আবৃত্তির পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন তিনি, সক্রিয় ছিলেন সাংস্কৃতিক আন্দোলনে। চিকিৎসার জন্য নিউ ইয়র্কে যাওয়ার পর বাংলাদেশে মুক্তমনা লেখক হত্যার প্রতিবাদে প্রবাসীদের মানববন্ধনেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কাজী আরিফ। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরপরই স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দেন তিনি। ১৯৭১ সালে ১ নম্বর সেক্টরে মেজর রফিকুল ইসলামের কমান্ডে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন কাজী আরিফ। এরপর যুদ্ধ শেষে বুয়েটে লেখাপড়া শুরু করেন আর সাথে সমান তালে এগিয়ে যেতে থাকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। ১৯৭৩ সালে প্রথম বিটিভি ও বেতারে আবৃত্তি করলেও কাজী আরিফের প্রথম অ্যালবাম ‘পত্রপুট’ বের হয় ১৯৮০ সালে। মোট ১৭টি কবিতার অ্যালবাম বেরিয়েছে তার। মুক্তকণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা কাজী আরিফ বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।
×