ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৮:৩৬, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার॥ চলতি মাসে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ শতাংশ। আমদানিনির্ভর বাংলাদেশের বাণিজ্যে এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে ডলারের দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। অর্থনীতিবিদরাও বলছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবদিক বিবেচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলারের দাম কমাতে উদ্যোগ নিতে হবে। আমদানি-রফতানির মতো বৈদেশিক বাণিজ্যের পাশাপাশি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় বিদেশী মুদ্রা মার্কিন ডলার। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে হঠাৎ করেই টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় মূল্য বাড়তে শুরু করে। বিশেষ করে আমদানিতে ব্যাংকে ঋণপত্র খুলতে ডলারের দাম ৮০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায়। দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর ডলারের দামে কেন এমন উর্ধগতি সে উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, মার্চ মাসে পণ্য আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশ, চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। এছাড়া রমজান উপলক্ষে ভোগ্য পণ্যের ঋণপত্র খোলার প্রবণতা বেড়েছে কয়েকগুণ। ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতার জন্য এসব বিষয় প্রভাব রাখছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযোগী দেশগুলোর মুদ্রা বিনিময় হারকে পর্যবেক্ষণে রেখে বৈদেশিক মুদ্রার দাম স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন সিপিডির গবেষক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। বাণিজ্যমন্ত্রীও শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখার পক্ষে মত দেন। এদিকে খোলাবাজারেও বিদেশী মুদ্রা বিনিময়কারীরা জানান, বাজারে ডলারের ঘাটতি না থাকলেও ব্যাংকের সঙ্গে মিল রেখে দাম কিছুটা বেড়ে বেচাকেনা চলছে ৮২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮৩ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে, হঠাৎ করে মার্কিন ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকও। তাই মার্কিন ডলার ৮২ টাকার নিচে নামিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর পরিপেক্ষিতে আন্তঃব্যাংক ডলারের গড় দরের সঙ্গে আমদানিতে ২ টাকার বেশি না নিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে ব্যাংকার্স সভায়। আমদানির তুলনায় রফতানিতে কম প্রবৃদ্ধি ও রেমিট্যান্সে নেতিবাচক প্রবাহের কারণে বেশ কিছুদিন ধরে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম সামান্য বেড়েছে। রমজান মাস সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের আমদানি দায় পরিশোধের চাপ বাড়ায় সম্প্রতি হঠাৎ করে ডলারের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ দশমিক ৬০ টাকায়। বৈঠক শেষে ডেপুটি গবর্নর এস কে সুর চৌধুরী বলেন, মার্কিন ডলারের দাম বাড়ার বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নজরে এসেছে। তাই ডলার ৮২ টাকার নিচে নামিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এখন থেকে ডলার কেনা ও বিক্রিতে পার্থক্য ২ টাকার বেশি হতে পারবে না। ফলে ডলারের দাম কমে আসতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে ২০ মিলিয়ন ডালারের স্টক আছে। তাই ডলারের দাম বাড়ার কোন যৌক্তিক কারণ নেই। আগামী সপ্তাহেই ডলারের দাম ৮২ টাকার নিচে নেমে আসবে। এস কে সুর চৌধুরী বলেন, আমদানির কারণে বাড়তি চাহিদা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ডলার সরবরাহ করতে প্রস্তুত রয়েছে। এরই মধ্যে বাজারে কিছু ডলার বিক্রি করা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরও বিক্রি করা হবে। তিনি আরও বলেন, উন্মুক্ত বিনিময় হার ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বা কোন বৈদেশিক মুদ্রার দাম ঠিক করে দিতে পারে না। এছাড়া ডলারের দাম স্বাভাবিক রাখতে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করলেও বাংলাদেশ ব্যাংক মাঝে মধ্যে বিভিন্ন উপায়ে নৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, রফতানি ও রেমিট্যান্স আয়ের সঙ্গে আমদানি ব্যয়ের একটা অসামঞ্জস্য হয়ে গেছে। এর ফলে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ৮২ টাকার একটা সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে, এখন দাম কমে আসবে। এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার পর বৃহস্পতিবারই মার্কিন ডলারের দাম দুই টাকা কমে যায়। অর্থাৎ প্রতি ডলার ৮৪ টাকা থেকে ৮২ টাকায় নেমে আসে। এতে প্রমাণিত হয় যে, কয়েকটি ব্যাংক কারসাজি করে ডলারের দাম বাড়িয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকও নজর রাখছে। ফলে রবিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া নতুন সপ্তাহে ডলারের দাম স্থিতিশীল হয়ে আসবে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
×