ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রাণিসম্পদের ভূমিকা

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে প্রাণিসম্পদের ভূমিকা

শেখ রাশেদুজ্জামান রাকিব ॥ যে স্বপ্ন ও আকাক্সক্ষার মূলমন্ত্র নিয়ে ত্রিশ লাখ বাঙালীর আত্মাহুতি ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের অলঙ্কার বিসর্জিত হয়েছে সেই স্বপ্নের পুরোপুরি বাস্তবায়ন না ঘটলেও এর নৈকট্যতার পথে ক্রমশ হাঁটছে এদেশ। স্বাধীনতাত্তোর অবকাঠামোগত ভঙ্গুর বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও আত্মউন্নয়নের জন্য নিরলস প্রচেষ্টা বিশ্ব উন্নয়ন সূচকে ক্রমাগত ঈর্ষার জায়গা দখল করছে। আর এ উন্নয়নের পথ প্রশস্ততার পেছনে স্ফুরণের প্রথমকাল থেকেই অবিচ্ছেদ্য অংশের ভূমিকা পালন করছে প্রাণিসম্পদ। বাংলাদেশ সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রতিষ্ঠার যে প্রতিযোগিতায় নেমেছে তার গতিকে ক্রমান্বয়ে বেগবান করছে প্রাণিসম্পদের বাণিজ্যিক বিস্তরণ। শিল্প বহির্ভূত ও গ্রামীণ অর্থনীতিনির্ভর এদেশ নানা সময়ে উন্নয়নের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। কয়েকটি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা ছাড়াও স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার আওতাধীন সাম্প্রতিক সময়ে প্রণীত প্রজেক্ট ‘ভিশন ২০২১ ও ভিশন ২০৪১’ ঘোষণা করেছে। এর মূল লক্ষ্য ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রত্যাশা। আর এ প্রত্যাশা পূরণের পথে হাঁটছেও উপযোগী ছন্দে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উপর ভিত্তি করে। প্রাণিসম্পদ নানা ভূমিকায় অধিষ্ঠিত একটি সমৃদ্ধ খাত। কেননা, জনগণের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ ও আর্থিক উন্নয়নে মোট জাতীয় উৎপাদনের ২.৯% জোগান দেয় এবং এর বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৫.৫%। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়; এ সূচকের ক্রমবিকাশ ঘটছে দুর্বার গতিতে। গ্রামীণ ও শহুরে অনেক পতিত জমি গো ও মহিষ চারণের আওতায় এনে এ খাত বৃদ্ধির নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আকস্মিক কোন বিপর্যয় না ঘটলে অদূর ভবিষ্যতে এ সম্পদ আরও সম্প্রসারিত হয়ে আমাদের অর্থনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। প্রাণিসম্পদ এ দেশের মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা মেটাচ্ছে দুধ, মাংস ও ডিমের যোগান দিয়ে। ২০২১ ও ২০৪১ ভিশন বাস্তবায়নে দক্ষ মানবসম্পদ প্রযোজ্য যা এ পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণের মাধ্যমেই সম্ভব। এ দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জীবিকার মুখ্য মাধ্যম এ প্রাণিসম্পদ। বিশেষ করে ঐতিহাসিক পর্ব থেকে অদ্যাবধি গ্রামীণ মানুষের অর্থনীতির ও জীবনযাপনের মূল চালিকাশক্তি এ সম্পদ। এক জরিপ অনুযায়ী, দেশের সর্বত্র ২৫.৭ মিলিয়ন গরু, ০.৮০ মিলিয়ন মহিষ, ১৪.৮ মিলিয়ন ছাগল, ১.৮ মিলিয়ন ভেড়া, ১১৮.৭ মিলিয়ন মুরগি এবং হাঁস ৩৪.১ মিলিয়ন। প্রতি হেক্টর জমিতে এসব প্রাণীর ঘনত্ব ৭.৩৭। এই কর্মসূচীর আওতায় ২০% মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে যা দেশের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশ। এছাড়া এ খাতে ১ টাকা বিনিয়োগ করে ১.৪২-৩.১৫ টাকায় রূপান্তর সম্ভব এক বার্ষিকীতে। এই বৃহৎ লভ্যাংশ আমাদের দুইটি ভিশন বাস্তবায়নের পথে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী লগ্নে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের ঐতিহাসিক কালপর্বের যে স্বপ্ন তা পূরণের জন্য গৃহীত হয়েছে নানা প্রজেক্ট। যেমন ‘জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার রূপকল্প ২০২১’ এর উদ্দেশ্য প্রণীত হয়েছে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৮-এর কোটায় দাঁড় করানো। এছাড়া সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় ও ২০২১ ভিশনে প্রযুক্তি খাতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, গ্রামীণ প্রাণিসম্পদের সম্প্রসারণের জন্য সরকারী ও বেসরকারী উভয়ের সমন্বিত পদক্ষেপ গৃহীত হলেও এর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ সৎভাবে ওইসব নিম্নমূল মানুষের কাছে পৌঁছায় না। বরং তা কুক্ষিগত করে নেয় স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ও কুচক্রী ব্যক্তি। তাই এ ক্ষেত্রে নজর দেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।
×