ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাবনাময় চা শিল্প

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

সম্ভাবনাময় চা শিল্প

সুমন্ত গুপ্ত ॥ শিল্পের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক পুরনো। কিন্তু পুরনো আর আজকের নতুনের মধ্যে অনেক ফারাক। হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে চা শিল্প আজ স্বাধীন দেশের একটি উন্নয়নশীল শিল্পের খাতায় নাম লিখাতে সক্ষম হয়েছে। অর্থকরী ও ঐতিহ্যবাহী চা শিল্পখাত এখন সম্ভাবনার নতুন দিগন্তে উপনীত হয়েছে। চায়ের অভ্যন্তরীণ ও রফতানি বাজার চাহিদাকে ঘিরেই এই উজ্জ্বল সম্ভাবনা রচিত হচ্ছে। এ শিল্পকে সঠিকভাবে তদারকি করতে পারলে দেশের জাতীয় অর্থনীতি আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে সামনের দিকে। বর্তমানে আমাদের দেশে যে পরিমাণ চা উৎপাদিত হয় তা আমাদের দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরের দেশে রফতানি হচ্ছে। এতে করে আমাদের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হচ্ছে। অপরদিকে এ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে দেশের অনেক বেকার যুবক। পরিমিত হারে বৃষ্টিপাত, উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক পদক্ষেপ, নতুন নতুন চা আবাদের এলাকা সম্প্রসারণ, উন্নততর ক্লোন চায়ের চারা লাগানোর হার বৃদ্ধি, সীমিত আকারে হলেও শ্রমিকদের প্রণোদনার ফলেই গত বছর বাম্পার পরিমাণ চা উৎপাদিত হয়েছে। আমাদের দেশে বর্তমানে চায়ের সোয়া ২ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে। ২০১৬ সালে সারাদেশে ৮ কোটি ৫০ লাখ কেজি চা উৎপাদন হয়েছে, যা ২০১৫ সালের চেয়ে ১ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার কেজি বেশি। এটি আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭ কোটি কেজি। ২০১৪ সালে উৎপাদন কিছুটা কমে ৬ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার কেজি, ২০১৩ সালে ৬ কোটি ৫২ লাখ ৬০ হাজার কেজি চা উৎপাদন হয়। ২০১২ সালে ৬ কোটি ১৯ লাখ ৩০ হাজার, ২০১০ সালে ৬ কোটি ৪ লাখ কেজি, ২০১৬ সালে ১ কোটি ৪৩ লাখ কেজি চা-পাতা আমদানি করা হয়। ২০১৫ সালে ১ কোটি ৫০ লাখ কেজি, ২০১৪ সালে প্রায় ৬১ লাখ কেজি চা আমদানি করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়েছে ১৯ কোটি ৫২ লাখ টাকার চা। একসময় চা রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। চায়ের হারানো গৌরব ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করছে বর্তমান সরকার। চা শিল্পের জন্য নেয়া কৌশলগত পরিকল্পনা ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়ন হলে দেশে চা উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ১০ কোটি কেজি। আর ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়িত হলে ২ কোটি কেজি চা রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। অবশিষ্ট ৮ কোটি কেজি চা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে পারবে। বর্তমানে হেক্টর প্রতি চা জাতীয় গড় উৎপাদন ১২৭০ কেজি এবং চা চাষে জমির গড় ব্যবহার মাত্র ৫১ দশমিক ৪২ শতাংশ। বাংলাদেশে চায়ের উৎপাদন বছরে প্রায় ৬০০ মিলিয়ন কেজি। চা উৎপাদনের দিক থেকে এগিয়ে আছে চীন, ভারত, কেনিয়া ও শ্রীলঙ্কা। এ তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম। চা একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল ও রফতানি পণ্য। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবছর ৫০ লাখ কেজি চা রফতানি হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশে চা বাগানের সংখ্যা ১৬৭টি। তার মধ্যে সিলেট জেলায় ২০টি, মৌলভীবাজার জেলায় ৯৩টি, হবিগঞ্জে ২২টি, চট্টগ্রামে ২৩টি, পঞ্চগড়ে ৭টি, রাঙামাটিতে ১টি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১টি বাগান রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২০টি বাগান আছে ব্রিটিশদের। দেশীয় মালিকানাধীন বাগানের সংখ্যা ১৩১টি, আর সরকার পরিচালিত বাগানের সংখ্যা ১৬টি। চা বাগানগুলোতে বর্তমানে স্থায়ীভাবে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। এর মধ্যে শতে ৭৫ শতাংশ নারী শ্রমিক। অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত আছে আরও ৩০ হাজার শ্রমিক। তবে চা শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সাড়ে ৩ লাখ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৭ লাখ মানুষ জড়িত। আমাদের দেশে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে বিবেচনায় নিলে ২০২৫ সাল নাগাদ চায়ের মোট চাহিদা দাঁড়াবে ১২৯ দশমিক ৪৩ মিলিয়ন কেজি এবং বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ওই সময়ে চায়ের উৎপাদন হবে মাত্র ৮৫ দশমিক ৫৯ মিলিয়ন কেজি।
×