রুমি নোমান ॥ ‘ঐ নতুনের কেতন উড়ে, কালবোশেখীর ঝড় তোরা সব জয়ধ্বনি কর’Ñ বিদ্রোহী কবির প্রলয়োল্লাস কবিতার সেই জয়ধ্বনি তুলতেই যেন নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর পুরো ক্যাম্পাস। শিক্ষা জীবনের ১২টি সিঁড়ি পার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন। উচ্চশিক্ষার এ বিদ্যাপীঠকে কেন্দ্র করে কতই না স্বপ্ন তাদের বুকে। কেউ গবেষক, কেউ প্রশাসক, কেউ আইনবিদ, কেউ প্রযুক্তিবিদ আবার কেউবা শিক্ষকতার মতো মহান পেশার স্বপ্নকে বুকে লালন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় যেন তাদের এ স্বপ্নগুলো পূরণে তাদেরকে আরও একধাপ এগিয়ে দিল। এখন বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে তাদের স্বপ্ন।
গত ৩০ জানুয়ারি ক্লাস শুরু হওয়ার মাধ্যমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যাালয়ের সবুজ প্রাঙ্গণে পা রেখেছে আরও একটি নতুন ব্যাচ। আড্ডা আর বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয়ে সবাই ব্যস্ত। ভর্তিযুদ্ধে জয়ী হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য দিনটি ছিল সত্যিই আনন্দের। চান্স পাওয়ার পর থেকেই তারা নতুন ক্যাম্পাস, নতুন পরিবেশ নিয়ে মনে মনে আঁকতে থাকে নানা স্বপ্ন। কিভাবে কাটবে প্রথম দিন? পুরনোরাও প্রস্তুতি নিতে থাকে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেয়ার জন্য। প্রস্তুতি শেষে ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে সেসব প্রকাশ পায়। আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হয়। প্রত্যেক বিভাগে পৃথকভাবে নবীনদের বরণ করে নেয়া হয়। গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বরণ করে নেয়া হয় নবীনদের। নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আব্দুল মান্নান। শিক্ষকরা নবীনদের রজনীগন্ধা ও গোলাপ ফুল উপহার দিয়ে তাদের ক্যাম্পাসে স্বাগত জানান। এ সময় তারা পরিচিতিমূলক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন নিয়মকানুন অবহিতপূর্বক সকলকে তা মেনে চলার আহ্বান জানান। সব শেষে সকলকে মিষ্টি মুখ করানো হয়। সবাই আনন্দের জোয়ারে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। পুরো ১৭৫ একরজুড়ে মেতেছিল নতুন আমেজে। তখন একটি কবিতাই মনে পড়ছিল, ‘এসেছে শত পুষ্পের দল, করছি তাদের বরণ, হাতে হাতে শোভা পাবে, তাদের দেওয়া মন।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ¯œাতক (সম্মান) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে এখন রঙিন স্বপ্ন। ইসলামের ইতিহাস বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী আব্দুস সামাদ। তার কাছে ভবিষ্যতের লক্ষ্য কি জিজ্ঞেস করলে সে বলল, ‘আমি ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করতে চাই এবং নিজের জায়গা থেকে দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করতে চাই।’ ক্যাম্পাসের ডায়না চত্বরের পাশে বসে আড্ডায় মেতেছিল বায়োটেকনোলজি এ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী কণা, তুহিন, জিনিয়া ও তৃষা। তাদের কাছে স্বপ্নের কথা জিজ্ঞেস করতেই তুহিন বলে উঠল ‘আমি চাই গবেষক হতে। নতুন উদ্ভাবনীর দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকে উজ্জ্বল করতে চাই।’ তার কথা শেষ না হতেই পাশ থেকে তৃষা বলল ‘আর্ম্্া ইচ্ছা ভাল রেজাল্ট করা আর পরবর্তীতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া। কারণ, একজন শিক্ষকই পারে জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে।’
নবীনরা আরও জানান, একটি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর এবার তাদের পথচলা স্বপ্নকে গড়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরিবেশ কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করতেই তারা জানান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেকে গড়ে তোলার ও নিজের স্বপ্নকে পূরণ করার সব সুযোগই রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের যেমন আন্তরিকতার অভাব নেই, তেমনি রয়েছে দক্ষ শিক্ষকবৃন্দ, সমৃদ্ধ পাঠাগার, গবেষণাগারসহ বড় ভাইবোনদের আন্তরিক সহযোগিতা। এছাড়া রয়েছে থিয়েটার, ডিবেটিং সোসাইটিসহ বহু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন। যাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে নিজেকে ব্যতিক্রমী হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে। ১৯৭৯ সালের ২২ নবেম্বর প্রতিষ্ঠার পর থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে এসেছে ৩৮টি বছর।
বর্তমানে ৫টি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগ, ১টি ইনিস্টিউট, প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছেন। যার সঙ্গে যোগ হলো আরও দেড় হাজার নতুন শিক্ষার্থী।
এই শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের দেশগড়ার কারিগর। তাই তারা এখন ব্যস্ত তাদের স্বপ্নপূরণে। তাদের মনে প্রাণে এখন ধ্বনিত হচ্ছে ‘আমরা করবো জয়, নিশ্চয় একদিন’।