ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন আবৃত্তি শিল্পী কাজী আরিফ

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

চলে গেলেন আবৃত্তি শিল্পী কাজী আরিফ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রিয় পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা স্থপতি কাজী আরিফ। কাজী আরিফ যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই সেন্ট লুকাস হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় শনিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রথমে তাঁকে ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়ার পর এই বাচিকশিল্পীকে আনুষ্ঠানিক মৃত ঘোষণা করা হয়। ওই হাসপাতালে ২৫ এপ্রিল কাজী আরিফের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। অপারেশনও সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু আইসিইউতে থাকা অবস্থায় তিনি চলে গেলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী প্রজ্ঞা লাবণী ও দুই মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। কাজী আরিফের মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে নেমে আসে শোকের ছায়া। আবৃত্তিশিল্পী, মুক্তিযোদ্ধা ও স্থপতি কাজী আরিফের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ। আবৃত্তি ও সংস্কৃতিকর্মীদের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করে তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবৃত্তিশিল্পী হাসান আরিফ জানান, কাজী আরিফের মেয়ে অনুসূয়া সকালে মোবাইলে একটি খুদে বার্তার মাধ্যমে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ২৫ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই সেন্ট লুকাস হাসপাতালে কাজী আরিফের ওপেন হার্ট সার্জারি হয়। তার শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে পড়লে তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। নিউইয়র্কে অবস্থানরত বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আহ্কাম উল্লাহ্ জানান, বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে দশটায় মাউন্ট সিনাই সেন্ট লুকাস হাসপাতালের চিকিৎসকরা তাকে ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’ ঘোষণা করেন। পরে রাতে তার লাইফ সাপোর্ট খুলে দেয়ার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক মৃত ঘোষণা করা হয়। দেশে অবস্থানরত কাজী আরিফের বড় মেয়ের স্বামী জাবের চৌধুরী জানিয়েছেন, বাবার মরদেহ কবে আসবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। আশা করছি সোম, মঙ্গলবারের মধ্যে আসবে। আবৃত্তিশিল্পী জাসকুর এ সাত্তার কল্লোল জানান, কাজী আরিফের মরদেহ দেশে আসার পর সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। আবৃত্তিশিল্পী শিমুল মুস্তাফা বলেন, তার অন্তিম ইচ্ছে অনুযায়ী উত্তরায় মায়ের কবরে তাকে সমাহিত করা হবে। কাজী আরিফ ১৯৫২ সালের ৪ সেপ্টেম্বর রাজবাড়ী জেলা সদরের কাজীকান্দা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বড় হয়েছেন চট্টগ্রামে। বাবা কাজী আজিজুল ইসলাম পাকিস্তান ইউনাইটেড ব্যাংকে চাকরি করতেন। মা কাজী নিন্নি ইসলাম। ৬ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। স্কুল-কলেজ জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তারপর ভর্তি হন বুয়েটে। সাংস্কৃতিক পরিম-লে পদচারণা সেই কলেজ জীবন থেকে। ১৯৭১ সালে তিনি মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১ নম্বর সেক্টরে মেজর রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদের সভাপতিম-লীর সদস্য ও মুক্তকণ্ঠ আবৃত্তি একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা। কাজী আরিফের সতেরোটি আবৃত্তির অডিও এ্যালবাম রয়েছে। আলোচিত আবৃত্তি এ্যালবামগুলোর মধ্যে ‘পত্রপুট’ ও ‘তাম্রলিপি’ অন্যতম। বাহার রহমান আশির দশকের মাঝামাঝি নতুনদের কবিতা নিয়ে একটি এ্যালবাম করেন। তারপর বেরোয় ‘এখনো রবীন্দ্রনাথ’Ñদুই খ-ে, ‘আজো নজরুল’। এছাড়াও তার বেশ কয়েকটি আবৃত্তির অডিও এ্যালবাম রয়েছে। আবৃত্তিতে বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পেয়েছেন ফোবানা পুরস্কার, আমরা সূর্যমুখী পুরস্কার, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ছেলে কাজী সব্যসাচীর নামে প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘সব্যসাচী পুরস্কার’ অন্যতম। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমৃত্যু তিনি রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চে নিয়মিত আবৃত্তি করেছেন। স্থপতি হিসেবেও নামডাক ছিল গুণী এই মানুষটির। তার প্রতিষ্ঠান ডেক্সট্রাস কলসালটেন্স লিমিলেড থেকে করা স্থাপত্যগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিআইপি টার্মিনাল, বিমান ভবন, ডেইলি স্টার ভবন, বিজিএমইএ ভবন, ইনডোর স্টেডিয়াম, গলফ ক্লাব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ই-লাইব্রেরি ইত্যাদি।
×