ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আনন্দ উচ্ছ্বাসে উদযাপিত আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

আনন্দ উচ্ছ্বাসে উদযাপিত আন্তর্জাতিক নৃত্য  দিবস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অন্যসব শিল্পের মতোই নৃত্যের ভাষাও আন্তর্জাতিক। সব ভাষার মানুষই বোঝে নাচের ভাষা। অভিব্যক্তির সঙ্গে মুদ্রার মেলবন্ধনে প্রকাশিত শিল্পমাধ্যমটি তাই সহজেই মোহিত ও অনুপ্রাণিত করে নৃত্যানুরাগীদের। শনিবার ছিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবস। আনন্দ-উচ্ছ্বাসে উদ্্যাপিত হয়েছে দিবসটি। সকাল থেকেই নৃত্য দিবসের রকমারি আনুষ্ঠানিকতায় দীপ্ত হয়ে ওঠে রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন। ‘মম এক হাতে বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ তূর্য’ সেøাগানে দিবসটি উদ্যাপনে ২৩ এপ্রিল থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা। শনিবার নৃত্য দিবসের সমাপনী অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সকালে। নৃত্যশিল্পীর নূপুরের নিক্বণধ্বনিতে সরব হয়ে ওঠে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তন। মঙ্গল নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে শুরু আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের কার্যক্রম। এরপর বের করা হয় আনন্দ শোভাযাত্রা। সংস্থার শিল্পীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে বাদ্যযন্ত্রের সুরের সঙ্গে নৃত্যের ছন্দে শোভাযাত্রাটি প্রদক্ষিণ করে শিল্পকলা একাডেমির চারপাশ। শোভাযাত্রা শেষে বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় গৌড়ীয় নৃত্যবিষয়ক সেমিনার। একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনারকক্ষে অনুষ্ঠিত সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মহুয়া মুখার্জী। আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক আবদুস সেলিম ও অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। রাতেরবেলায় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ছিল প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পীদের মন মাতানো পরিবেশনা। এভাবেই নৃত্য দিবসে সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পর্যন্ত চলে রকমারি আনুষ্ঠানিকতা। সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ছিল আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের আলোচনা সভা। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিশিষ্ট নৃত্যজন মোঃ ইলিয়াস হায়দারকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল হক ও আইটিআই বাংলাদেশ কেন্দ্রের সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ। সভাপতিত্ব করেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এদিকে শনিবার সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে আন্তর্জাতিক নৃত্য দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নৃত্য সংগঠন নৃত্যাঞ্চল। উন্মুক্ত মঞ্চটি মুখরিত হয়ে ওঠে নূপুরের ধ্বনিতে। এ আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিবন্ধী ও মানবাধিকার আন্দোলনের নেতা দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মনসুর আহমেদ চৌধুরী। উদ্বোধনী আয়োজন শেষে ‘আয় ছেলেরা আয় মেয়েরা দেখবি যদি আয়’ গানের সঙ্গে ছোট শিশুদের নৃত্য পরিবেশনা দিয়ে শুরু হয় এ আয়োজন। তারপর ‘প্রজাপতিটা’ গানের সঙ্গে শিশুদের আরেকটি নৃত্য পরিবেশিত হয়। তারপর ‘সোহাগ চাঁদ বদনী’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেবেশন করে রমনা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিস্টিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও এ আয়োজনে নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাঞ্চল স্কুলের শিক্ষার্থীরা। পহেলা মে লাখো কণ্ঠে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি এবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি লাখো কণ্ঠে আবৃত্তি হবে। পহেলা মে সোমবার বিকেল ৪টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এ অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তারুণ্যকে জাগিয়ে তোলার প্রত্যাশায় ‘লাখো কণ্ঠে বিদ্রোহী কবিতা’ শিরোনামে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে নজরুল চর্চা কেন্দ্র ‘বাঁশরী’ ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)। শনিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান আয়োজকরা। সংবাদ সম্মেলনে বাঁশরীর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার খালেকুজ্জামান বলেন, নজরুল ছিলেন জনমানুষের কবি, গণমানুষের কবি, চেতনার কবি। বাংলাদেশের সব মানুষ যাতে নজরুল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়। মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো মানে অন্যকে অবজ্ঞা করে নয়। আমরা উন্নত ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ চাই। তিনি বলেন, আগামী পহেলা মে সোমবার বিকেল ৪টায় ঢাবির শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র মাঠে লাখো কণ্ঠে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তির উদ্যোগ নিয়েছি। এতে এক লাখের বেশি মানুষ একসঙ্গে নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করবেন। তিনি বলেন, যদিও একসঙ্গে এত মানুষ যোগাড় করা সম্ভব নয়। আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি লাইভ করার চেষ্টা করব। এছাড়া দেশের ৬৪টি জেলাসহ সারাবিশ্বের মানুষ সেদিন একসঙ্গে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে পারবেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুজিত মুস্তাফা বলেন, নজরুলের চেতনাকে ছড়িয়ে দিয়েই যাতে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি সে লক্ষ্যে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে যেভাবে নজরুলকে বিভাজিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, আমরা সেটাকে ভেঙ্গে দিতে চাই। কবির নাতনি অনিন্দিতা কাজী বলেন, নজরুল ছিলেন অন্যায় ও কলুষিতের বিরুদ্ধে। তার কণ্ঠে সাধারণ মানুষের কথা ফুটে উঠেছে। এরপরও নজরুলের দুর্গতির কমতি ছিল না। আজ অনেকে বলেন নজরুলের সঠিক মূল্যায়ন করা হয়নি কেন? তখনই মনে হয় আসলে নজরুল এমন একটা মানুষ- তিনি তো মানুষের কবি হতে চেয়েছিলেন। তিনি অন্যায় ও কলুষিতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন। দৃক গ্যালারিতে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের চিত্রকর্ম প্রদর্শনী তারা সবাই সুবিধাবঞ্চিত শিশু। তবে সুযোগ পেলে এ শিশুরাও ঘটাতে পারে তাদের সৃজনশীলতার প্রকাশ। তেমনই একঝাঁক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে প্রদর্শনী শুরু হলো ধানম-ির দৃক গ্যালারিতে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুল সুইচ বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীদের চিত্রিত ছবিতে উঠে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, পরিবেশ, প্রকৃতি, আবহমান গ্রামবাংলার নৈসর্গিক সৌন্দর্যসহ নানা বিষয়। সুবিধাবঞ্চিত এ খুদে শিল্পীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সহযোগিতায় বুয়েট, ডিএমসি এবং ঢাবির শিক্ষার্থীরা গত তিন মাস ধরে মুক্তিযুদ্ধ, প্রকৃতি ও বাংলার সংস্কৃতি সম্পর্কে হাতে-কলমে শিক্ষা দিয়েছে। ওই কর্মশালা থেকে আঁকা ছবিগুলোই ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। শনিবার দুপুরে প্রধান অতিথি হিসেবে দিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন লেখক ও গবেষক ড. মুনতাসীর মামুন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হাসান এম সাদেক। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টাম-লীর সদস্যসহ অতিথিবৃন্দ। ‘জাতিগত চেতনা বিনির্মাণে ভূমিকা রেখেছেন হুমায়ুন আজাদ’ প্রথাবিরোধী লেখক হিসেবে অভিহিত করা হলেও জাতিগত চেতনা বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন হুমায়ুন আজাদ। তিনি সব সময় গুরুত্ব দিয়েছেন আধুনিক রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে। সাহিত্যের মধ্য দিয়ে গণসমাজকে তুলে ধরার কাজ করে গেছেন। কবিতা, উপন্যাস, গল্প, সমালোচনা, কিশোর সাহিত্য, ভাষাবিজ্ঞান- যাই লিখেছেন সেখানে তার সমাজ ভাবনা ও দেশপ্রেম উঠে এসেছে বারবার। সেটা চিরকাল আমাদের জন্য অনুসরণীয়। জাতীয় জাদুঘর আয়োজিত ‘ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আজাদ স্মরণ সভা’ শীর্ষক সভায় বক্তারা এভাবে তাকে মূল্যায়ন করেছেন। শনিবার সকালে জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব আকতারী মমতাজ। কবি মুহাম্মদ সামাদের সভাপতিত্বে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আকতার কামাল। আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিক উল্লাহ খান ও কবি মাসুদুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। আকতারী মমতাজ বলেন, আমি সব সময় দেখেছি সত্য প্রকাশে তিনি কতটা দৃঢ়চেতা। সমাজ ভাবনা, দেশ ভাবনা তাকে তাড়িয়ে ফিরত। মাতৃভাষার প্রতি তার ছিল অকৃত্রিম ভালবাসা। লেখনীর মাধ্যমেই তিনি সামাজিক দায়বদ্ধতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। খোলা চোখে সমাজের এপিঠ ওপিঠ দেখেছেন। সেটা ভাসা ভাসা চোখে নয়, গভীরতা দিয়ে। অন্য বক্তারা বলেন, তিনি সত্যিকারার্থেই প্রথাবিরোধী মানুষ ছিলেন। তার উপন্যাসকে ছাপিয়ে একজন কবিকেই আমি প্রধান করে দেখি। উপন্যাস ছিল তার বিতর্কের জায়গা। কবিতায় প্রেম, দেশপ্রেম, গ্রামের প্রতি তার টান বারবার উঠে এসেছে। তিনি কবিতায় রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য নিয়ে এসেছিলেন। প্রবন্ধে তিনি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে বাংলা সাহিত্যের সমালোচনা করেছেন। বক্তারা আরও বলেন, আমাদের জাতিগত চেতনা বিনির্মাণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আধুনিক রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চেতনাগুলোকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন এবং সেগুলো তার সাহিত্যে উঠে এসেছে। তবে তিনি নিজেকে মূলত কবি পরিচয় দিতে ভালবাসতেন। বলতেন, কবিতার ভেতরে অকপটে নিজেকে মেলে ধরা যায়। শ্যামসুন্দর সিকদারের চার গ্রন্থের পাঠ মূল্যায়ন একসঙ্গে কবি শ্যামসুন্দর সিকদারের চারটি বইয়ের পাঠ্য মূল্যায়ন অনুষ্ঠান হলো শনিবার। বইগুলো হলোÑ ‘আঁচলে এঁকে দেবো মানচিত্র’, ‘নীল খামে ডিজিটাল ভালোবাসা’, ‘গোলাপের কাছে যাবো’ ও ‘সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে সতর্কতা’। পদক্ষেপ বাংলাদেশ আয়োজিত এ অনুষ্ঠান ছিল রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ইস্ফেন্দিয়ার জাহিদ হাসান মিলনায়তনে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে পাঠ মূল্যায়ন করেন কবি আসাদ চৌধুরী, কবি অসীম সাহা, কবি আমিনুর রহমান সুলতান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মোস্তাফা জব্বার। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পদক্ষেপ বাংলাদেশের সভাপতি বাদল চৌধুরী। কবির কবিতা থেকে আবৃত্তি করেন রূপা চক্রবর্তী, পারভেজ চৌধুরী, অন্বেষা সিকদার প্রমুখ। কবিতার অনুবাদ থেকে পাঠ করেন জান্নাতুন নিসা।
×