ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বে পাইলট লাগবে ১০ লাখ ॥ বাজার ধরার উজ্জ্বল সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:৪৯, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

বিশ্বে পাইলট লাগবে ১০ লাখ ॥ বাজার ধরার উজ্জ্বল সম্ভাবনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী এক দশকে সারা বিশ্বে কমপক্ষে ১০ লাখ পাইলট দরকার হবে। এত বিপুলসংখ্যক পাইলটের বাজার ধরার উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। এ সময়ে দেশীয় এভিয়েশান খাতেও প্রয়োজন কমপক্ষে ১০ হাজার পাইলট ও টেকনিক্যাল লোকবল। কাজেই এ সময়ের জন্য এটা একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। সেই চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করা হবে সেটার জন্য এখনই কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। বিশেষ করে বিমানবন্দরের অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধি, দক্ষ জনবল তৈরি, সরকারী এয়ারলাইন্সের অনুপাতে বেসরকারী অপারেটরদেরও সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর প্রাধান্য দেয়ার কোন বিকল্প নেই। এভিয়েশন অপারেটরস এ্যাসোসিয়েশন্স অব বাংলাদেশ (এওএবি) আয়োজিত এক সেমিনারে দেশের এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা এ ধরনের তথ্য উপস্থাপন করেন। এওএবি প্রেসিডেন্ট অঞ্জন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নভোএয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান। এতে অন্যদের মধ্যে অংশ নেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব এস এম গোলাম ফারুক, সিভিল এভিয়েশান চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল ইহসানুল গনী চৌধুরী, এওএবি মহাসচিব মাসুদুর রহমান ও বিশিষ্ট এভিয়েশান বিশেষজ্ঞ আশীষ রায় চৌধুরী। সেমিনারে ‘দেশীয় এয়ারলাইন্সের সমস্যা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনা’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মফিজুর রহমান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ভিশন ২০৪১ এর সফল চালিকা শক্তি হিসেবেই এভিয়েশান খাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিগত দশকে এভিয়েশান খাতে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে প্রায় ডাবল ডিজিট প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। যার মূল চালিকা শক্তি ছিল চীন ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। বাংলাদেশ রয়েছেÑ এ ত্রিদেশীয় মাঝে। সে কারণে এখানে এভিয়েশান হাব গড়ে তোলার ওপর প্রধানমন্ত্রীসহ দেশী-বিদেশী এভিয়েশান বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। এমন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে এভিয়েশান খাতের উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে ফ্লাই ক্লাব ও হেলিকপ্টার মূল ভূমিকা রাখতে পারে। অথচ দেশে এখনও গড়ে ওঠেনি প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো, রক্ষণাবেক্ষণের হ্যাঙ্গার, সিভিল এভিয়েশানের যুগোপযোগী নীতিমালা, ও অন্যান্য স্থাপনা। উদাহরণ দেয়া যেতে পারে শাহজালাল এয়ারপোর্টে ব্যাংকগুলোকে দেয়া হয়েছে সব লাউঞ্জ। কিন্তু কোন এয়ারলাইন্সকে দেয়া হয়নি একটিও। প্রবন্ধে বর্তমানের শুল্কায়ন জটিলতা, জ্বালানি তেলের মূল্যের অসামঞ্জস্যতা, এরোনটিক্যাল চার্জ, সারচার্জ ও ভ্যাটের অস্বাভাবিকতা দূরীকরণের ওপর জোর দেয়া হয়। প্রধান অতিথি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বিমানবন্দরগুলোরও সার্বিক সেবার মান বাড়াতে হবে। বেসরকারী ব্যবস্থপনায় পরিচালিত এয়ারলাইন্সগুলো এখনও ভাল করতে পারেনি। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। অনেকগুলো এয়ারলাইন্স কাজ শুরু করলেও এখন টিকে আছে মাত্র তিনটি। এয়ারলাইন্সগুলোকে সহযোগিতা দিতে হবে। এগুলোর অগ্রযাত্রায় যাতে কোন ধরনের বাধার সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে বাস্তব সম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। তোফায়েল আহমেদ বলেন, দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো এখন এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। মানুষ এখন সময় ও কষ্ট বাঁচানোর জন্য আকাশপথ ব্যবহার করছে। এ পথের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন কাজে মানুষ এখন হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে। মানুষ এগুলো ব্যবহারের সক্ষমতা অর্জন করেছে। এয়ার লাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। লাভজনক অবস্থায় নিতে সহযোগিতা দিতে হবে। সেবার মান বৃদ্ধির মাধ্যমে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে হবে সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে। দেশীয় এয়ার লাইন্সগুলোর সামনে বিপুল সম্ভাবনা। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। গ্রাহকদের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে হবে। তৈরি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ আজ বিশ^বাজারে সুনাম অর্জন করেছে। বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, বেসরকারী পর্যায়ে এয়ার লাইন্সগুলোর বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এ জন্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন। দেশে এ সেক্টরে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য একটি আলাদা বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে যা বঙ্গবন্ধু এভিয়েশান এ্যান্ড এরোস্পেস ইউনিভার্সিটি নামে এখন ইউজিসিতে বিবেচনাধীন রয়েছে। খুব শীঘ্রই এ ইউনিভার্সিটির স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা হবে। এটা হয়ে গেলে দেশের এভিয়েশান খাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে। মেনন বলেন, এয়ারলাইন্সগুলোকে কার্যকরভাবে পরিচালনার জন্য জ্বালানির মূল্য যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নিয়ে আসা উচিত। ভ্যাটসহ অন্য ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তবেই এয়ারলাইন্সগুলো ভালভাবে চলতে পারবে।
×