ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক মান বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের ২০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

আন্তর্জাতিক মান বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের ২০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আজ

নিখিল মানখিন ॥ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মেডিক্যাল উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়। এ প্রতিষ্ঠানে চালু হতে যাচ্ছে জরুরী বিভাগ ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে সেন্টার অব এক্সিলেন্সের তৃতীয় পর্যায়ের কাজ। রোগীদের প্রয়োজনে সি ব্লকে আরও ১৭ শয্যাবিশিষ্ট আইসিইউ ও এইচডিইউ চালু হতে যাচ্ছে। চলছে শিশুদের জন্য আইসিইউ এবং পৃথক ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপনের কাজ। মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা এবং একটি ওয়ান পয়েন্ট চেকআপ সেন্টার চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ উচ্চশিক্ষা ও গবেষণায় সাফল্যের কারণে বিশ্বসেরার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। গত দু’বছরে ৭৪৩টি গবেষণাকর্ম সম্পন্ন হয়েছে। আর গত বছর স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস পরিচালিত জরিপে দেশে পঞ্চম এবং বিশ্বে ৬৪০তম অবস্থানে স্থান পায় দেশের একমাত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়টি। এ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রতিদিন সকালের বহির্বিভাগে ও বৈকালিক স্পেশাল আউটডোরে পাঁচ হাজার রোগী সেবা নিচ্ছেন। গড়ে প্রতি বছর সেবা নিচ্ছেন প্রায় ১২ লাখ রোগী। শুরু হতে যাচ্ছে এক হাজার বেডের সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের নির্মাণকাজ। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে আজ রবিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলা আজ রবিবার ১৯ বছর পূর্ণ হয়েছে। আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ২০তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। আওয়ামী লীগ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের একমাত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ১৯৯৮ সালের ৩০ এপ্রিল যাত্রা শুরু করে ‘বিএসএমএমইউ’। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নাম পরিবর্তনসহ বিশ্ববিদ্যালয়টি ধ্বংসের পাঁয়তারা চালানো হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক উন্নয়নের কাজ শুরু হয়। উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান বলেন, স্বল্প খরচে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা পাওয়া যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ)। প্রায় দু’হাজার শয্যাবিশিষ্ট এ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন পাঁচ হাজারের বেশি রোগী সেবাগ্রহণ করেন। বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর তুলনায় চার থেকে পাঁচগুণ কম ডায়াগনোসিস ফি নেয়া হয়। রোগী ভর্তি, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফিসহ সকল আর্থিক বিষয় লেনদেন হয়ে থাকে ব্যাংকের মাধ্যমে। তাই এক্ষেত্রে রোগীদের হয়রানির শিকার হতে হয় না। শৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশে সব কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন মেডিক্যাল উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে উদ্বোধন করা হয়েছে এক হাজার শয্যাবিশিষ্ট সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনসালটেন্সি কার্যক্রম। গবেষণায় সাফল্যের কারণে এ বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি স্পেনের সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ ও যুক্তরাষ্ট্রের স্কপাস প্রকাশিত জরিপে বাংলাদেশের ১১টি নেতৃত্বস্থানীয় বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পঞ্চম স্থান অধিকার করে নিয়েছে। উপাচার্য আরও জানান, দেশের একমাত্র মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’ আজ রোগীদের আশা-ভরসার কেন্দ্রস্থল। জাতির জনকের নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা, গবেষণা ও চিকিৎসাসেবায় শ্রেষ্ঠতম নাম। এ বিশ্ববিদ্যালয় আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি প্রাণবন্ত। বিকেল, সন্ধ্যা এমনকি রাতেও সিনিয়র অধ্যাপকবৃন্দ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ নিয়মিত রাউন্ড দিচ্ছেন। সন্ধ্যায় অনেক শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন। চিকিৎসকবৃন্দ তাদের ওয়ার্ড ও বহির্বিভাগে যথাসময়ে উপস্থিত থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। নার্সরা নিজ হাতে রোগীদের ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সকল মানুষের বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণে চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসা শিক্ষা ও গবেষণায় অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা হবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন উপাচার্য। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য সফলতা অর্জন করেছে। উন্নত বিশ্বের ন্যায় স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষায় রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম চালু করা হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয় আজ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি উচ্চতর মেডিক্যাল শিক্ষা ও গবেষণার এক অনন্য নাম এ বিশ্ববিদ্যালয়। ৯০টির বেশি উচ্চতর মেডিক্যাল শিক্ষাবিষয়ক কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। রয়েছে ৭টি অনুষদ ও ৫৩টি বিভাগ। ৩শ’ বিদেশী রেসিডেন্সি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। রিউমাটোলজি ও এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, পাবলিক হেলথ এ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগ চালু করা হয়েছে। সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড অটিজম ইন চিলড্রেন, পেলিয়েটিভ কেয়ার উইং, রেসপিরেটরি মেডিসিন উইং প্রতিষ্ঠা, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে অনেক গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ছয়টি বাস সংগ্রহ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ সহায়তায় কেবিন ব্লকের উত্তর দিকে ১২ বিঘা জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশ বেতার ভবনের জায়গা রেজিস্ট্রেশন করে বুঝে নেয়ার পর্যায়ে রয়েছে। নিজস্ব আয় থেকে বিভিন্ন উন্নয়নে ব্যয় করা হয়েছে। পঙ্গু ও অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঁচ কোটি টাকার আয় থেকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান এবং বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫শ’ বেডে উন্নীত, কেবিনের সংখ্যা ১২৪-এ উন্নীত, অপারেশন থিয়েটারের সংখ্যা ৫৬-এ উন্নীত, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের শয্যা সংখ্যা ৩৭-এ উন্নীত, করোনারি কেয়ার ইউনিটের সংখ্যা ৩৫-এ উন্নীত, আউটডোরে আগত রোগীর দৈনিক গড় সংখ্যা পাঁচ হাজারে উন্নীত এবং বছরে হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৩০ হাজার অতিক্রম করেছে। এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৪৪৭টি গবেষণাকর্ম সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে গত দু’বছরে ৭৪৩টি গবেষণাকর্ম সম্পন্ন হয়। টিচার্স এ্যাডমিনিস্ট্রেশন এ্যান্ড প্রোমোশন সেল গঠন করা হয়েছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ১৯০৪টি রোগী শয্যার মধ্যে অর্ধেক শয্যাই গরিব রোগীদের জন্য ফ্রি ভাড়ার বিছানা। এখানে রয়েছে স্বল্পমূল্যে রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা। এমআরআই, সিটি স্ক্যানের মতো ব্যয়বহুল পরীক্ষাও এখানে তুলনামূলকভাবে কম খরচে করানো হয়ে থাকে। দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি জনগণকে আরও আস্থাশীল করার উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে আধুনিক সকল চিকিৎসা সুবিধাসংবলিত পূর্ণাঙ্গ ইমার্জেন্সি কমপ্লেক্স, আউটডোর কমপ্লেক্স, অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স, নার্সিং অনুষদ প্রতিষ্ঠা, আন্তর্জাতিক মানসম্মত মেডিক্যাল কনভেনশন সেন্টার, বিভিন্ন রকমের গবেষণা পরিচালনার জন্য স্বতন্ত্র ল্যাবরেটরি ভবনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়কে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে রূপান্তরকরণের কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে চলছে।
×