ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুর্ভোগ চরমে

ময়লা ফেলে কুতুবখালী খাল ভরাট, জলাবদ্ধতা দোলাইরপাড়ে

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

ময়লা ফেলে কুতুবখালী খাল ভরাট, জলাবদ্ধতা দোলাইরপাড়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান সড়কসহ এলাকার অলিগলিতে জমে আছে পানি। ঘর থেকে বের হওয়া কিংবা বাসায় ফিরতে হয় নোংরা পানি মাড়িয়ে। বৃষ্টি হলে সড়কে পানির উচ্চতা বাড়ে, বাড়ে এলাকাবাসীর ভোগান্তিও। গত প্রায় এক মাস ধরে সড়কে পানি জমে থাকায় এ ভোগান্তিতে রয়েছেন রাজধানীর পূর্ব দোলাইরপাড়ের বাসিন্দারা। স্থানীয়রা জানান, কুতুবখালী খাল দিয়ে বৃষ্টি ও গৃহস্থালীর ব্যবহার্য পানি সরতে না পারায় জলাবদ্ধতা চরম আকার ধারণ করেছে। বর্ষা মৌসুম এখনও শুরু হয়নি, কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই পানি জমে আছে। আগের বছরগুলোর মতো এ বছরও পুরো বর্ষা মৌসুমজুড়েই এখানে পানি জমে থাকবে বলে শঙ্কা স্থানীয়দের। তারা বলছেন, সকালে সড়কে পানি কম থাকে, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পানি। সন্ধ্যার দিকে তা চরম আকার ধারণ করে। আর বৃষ্টি হলে পুরো সড়কে হাঁটুপানি জমে যায়। সরেজমিনে বৃহস্পতিবার দেখা যায়, দোলাইরপাড় ঢাল থেকে দোলাইরপাড় বাজার পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে আছে। পানি জমে গেছে দোলাইরপাড় ১, ২, ৩ এবং কবিরাজবাগ গলিতে। এসব গলিতে সিমেন্টের বস্তা, ইট ফেলে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। নোংরা পানি থেকে বাঁচতে এলাকার দোকানগুলোর বেশিরভাগের সামনেই ছোট দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। হাঁটুসমান পানি জমে থাকায় এ সড়কে হাঁটার কোন সুযোগ নেই। দুই-একজন হেঁটে যাচ্ছেন কাপড় গুটিয়ে। সড়কের এ অংশে রিক্সা ছাড়া চলাফেরা করা যায় না। রিক্সা ভাড়াও অনেক বেশি জানিয়ে স্থানীয় গৃহিণী হোসনে আরা বলেন, ‘রিক্সাওয়ালারা আসতে চায় না। ডাবল ভাড়া চায়।’ ২৬৫ নম্বর দোলাইরপাড়ের মরিয়ম এন্টারপ্রাইজের মালিক মোঃ বাচ্চু মিয়া বলেন, ময়লা পানি দিয়ে চলাফেরা করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘পানি এত নোংরা। পানি পাড়াইয়া অনেকের চুলকানি, খোসপাঁচড়া হয়ে গেছে।’ সড়কে পানি জমে থাকায় এলাকার স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বিপাকে পড়ে বলে জানান চা বিক্রেতা মরিয়ম। প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘স্কুলের বাচ্চারা তো সবাই রিক্সায় যাইতে পারে না। যারা হাঁইটা যায়, পানি ছিট্টা অনেক সময় হেগো কাপড় নষ্ট হয়। আর মাজে-মইদ্দে এইহানের গর্তে রিক্সার চাক্কা পইরা উল্টাইয়া যায়।’ সড়কে পানি জমে থাকায় বেচা-কেনাও কম, বলেন মৃন্ময় হার্ডওয়্যার এ্যান্ড ইলেকট্রিক সেন্টারের মালিক পরেশ পাল। এলাকার প্রধান সড়কে পানি জমে থাকায় এখানকার দোকানগুলোয় ব্যবসা কমে গেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, এই সড়ক দিয়ে লোকজন চলাফেরা করে কম। পানি পাড়াইয়া লোকজন জিনিসপত্র কিনতে আসতে চায় না। বেচাকেনা খুব কম। গত সপ্তায় ঘরে পানি ঢুকে আমার চারটি ফ্যান নষ্ট হয়ে গেছে। দোলাইপাড় ও কুতুবখালী ছাড়াও দনিয়া এলাকার বিভিন্ন স্থানেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। খালে পানি আটকে জলাবদ্ধতা কুতুবখালী খালের বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি সরতে না পারায় তা সড়কে উপচে আসছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। দোলাইরপাড়ের রাশেদা ফার্মেসির মালিক দেলোয়ার হোসেন জানান, ময়লা আবর্জনা ফেলায় খালটির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছর খাল পরিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু লোকজন ময়লা ফেলে ভরাট করেছে। এ কারণে পানি যেতে পারে না। কুতুবখালী খালের দোলাইরপাড় ঢাল থেকে কুতৃবখালী বিশ্বরোড পর্যন্ত অংশ ঘুরে তাদের কথা সত্যতা পাওয়া যায়। দোলাইরপাড় বাজারের কাছে খালের কোন চিহ্নই নেই। পুরো খালই ভরাট করে ফেলা হয়েছে আবর্জনা দিয়ে। একপাশ দিয়ে পানির সরু একটি প্রবাহ বইছে। বাজারে কালভার্টের কাছে বাঁশের খুঁটির বেড়া দিয়ে মাটি ফেলে খাল ভরাট করা হয়েছে। পুরনো ফ্রিজের কাঠামো, সোফার কাঠামো, উচ্ছিষ্ট নির্মাণ উপকরণ এনে ফেলা হয়েছে খালে। কুতুবখালী মাদ্রাসাতুল কুরআন বাংলাদেশÑ এর সামনে থেকে কুতুবখালী বিশ্বরোড পর্যন্ত অংশে শতশত পলিথিনের ব্যাগে ভরে গৃহস্থালীয় ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয়েছে খালে। ফেলা হয়েছে দোকানের উচ্ছিষ্ট। কুতুবখালী বাজার থেকে মাদ্রাসা পর্যন্ত খালে কচুরিপানা, মাটিতে ভরাট হয়ে যাওয়ার পর সেখানে গজিয়ে উঠেছে নানা আগাছা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই সিটি করপোরেশনের গাড়িতে ময়লা না দিয়ে ময়লা খালে ফেলে দেয় বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ কুতুবখালীর বাসিন্দা আয়নাল হোসেন। তিনি বলেন, গতবার মাত্র খাল পরিষ্কার কইরা গ্যালো। কিন্তু মাইনসে এ্যামনে ময়লা ফেইল্লা খালডা আবার ভইরা ফালাইল। কুতুবখালী থেকে দোলাইরপাড় পর্যন্ত খালের দুপাশের বাড়ির মালিকরা খালে টংদোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন। এ কারণেও খালে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। দোলাইরপাড় বাজারের কাছে খালের ওপর টংদোকান চালাচ্ছেন এমন এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শত্যে বলেন, খালের পাশের বাড়িওয়ালা এসব টং দোকান তুলে ভাড়া দেন। তিনি বলেন, বাড়িওয়ালা না কইলে তো এখানে দোকান তুলতে পারতাম না। প্রতিমাসে বাড়িওয়ালারে এক হাজার টাকা দেই। তারা উঠাইয়া দিলে চইল্লা যামু। কুতুবখালী খাল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বরাদ্দ না থাকায় খালটি এবছর সংস্কার করা যায়নি বলে পাউবোর একজন কর্মকর্তা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, গত বছর এ খাল খনন করা হয়েছিল। এ বছর বরাদ্দ না থাকায় এ খালের রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারিনি।
×