ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শব্দদূষণ

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

শব্দদূষণ

শব্দদূষণ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এটা অনেকেই জানেন না। তবে এটাও মানতে হবে এখন জনস্বার্থে সরকারী প্রচারণার কল্যাণে রাজধানীবাসীর বহুসংখ্যক মানুষ শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিক বিষয়ে সচেতন। তবে দুঃখজনক হলো সচেতন হলেও সতর্ক নন, আবার অনেকেই শব্দদূষণের জন্য দায়ীও বটে। শব্দদূষণ সৃষ্টি করা হলে যিনি এটা করেন তিনিও একই ক্ষতির শিকার হবেন। দেশে শব্দদূষণ বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সম্প্রতি রাজধানীর মানিক মিয়া এ্যাভিনিউর এমপি হোস্টেলের সামনে আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে শব্দদূষণ রোধে নানা উদ্যোগের কথা শোনা যায়। সরকার শব্দ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরের তথ্য সংগ্রহ করেছে। বলাবাহুল্য, উচ্চ শব্দে বা জোরে আলাপচারিতা চালানোর প্রবণতা রয়েছে বহু মানুষের ভেতর। এটা যে কান ও মস্তিষ্কের জন্য বিপদ ডেকে আনতে পারেÑ এমন কথা উচ্চারিত হলে হয়ত তারা হেসেই উড়িয়ে দেবেন। পাবলিক প্লেসে চেঁচিয়ে সেলফোনে কথা বলার মতো বদভ্যাস থেকে মুক্ত নয় অনেক শহুরে ও শিক্ষিত মানুষও। এমন একটি সামাজিক পরিস্থিতিতে শব্দদূষণের মাত্রা কমিয়ে আনা একটি চ্যালেঞ্জই বটে। বর্তমানে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের প্রেক্ষাপটে মারাত্মক পরিবেশগত সমস্যা হিসেবে পরিগণিত হয়েছে ‘শব্দদূষণ’। বিশেষ করে শব্দদূষণের কারণে নতুন প্রজন্ম মানসিক ও শারীরিকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শব্দদূষণের ফলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘিœত হওয়া, ঘুমের ব্যাঘাতসহ নানা রকম সমস্যা দেখা দিচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় শব্দদূষণের মাত্রা বিপদসীমার উর্ধে বহুদিন ধরেই। উত্তরোত্তর তা ভয়াবহ মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাজধানীর প্রধান সড়কসমূহ তো বটেই, বিভিন্ন অলিগলির বাসিন্দা ও পথচারীদের জীবনও অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে উচ্চমাত্রার শব্দের কারণে। এমনকি নীরব এলাকা হিসেবে চিহ্নিত স্কুল-কলেজ-হাসপাতালগুলোয়ও উচ্চমাত্রার শব্দদূষণ ঘটছে ভীষণভাবে। শ্রুতিযোগ্য স্বাভাবিক মাত্রা ৫০ ডেসিবেলের অনেক ওপরে শব্দদূষণ ঘটছে রাজধানীর সব স্থানেই। সমাবেশে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু যথার্থই বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য এলাকার চাইতে এ উপমহাদেশে শব্দদূষণ বেশি। এখানে প্রায় সবাই হর্ন বাজায়। কিন্তু অনেক দেশে গাড়ির হর্ন বাজালে অভদ্রতা হিসেবে দেখা হয়। শব্দদূষণ যে ক্ষতিকর তা বাংলাদেশের লোকজন ক্রমান্বয়ে বুঝতে পারছে। এ সম্পর্কে এখন অনেকেই সচেতন। এরপরও নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ অধিদফতর নানা কর্মসূচী পালন করছে। উল্লেখ্য, হাইড্রোলিক হর্ন না বাজানোর জন্য আইন আছে। কিন্তু অনেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে এই হর্ন বাজাচ্ছেন। তবে আমাদের হতাশ হলে চলবে না। এ অবস্থার পরিবর্তন হবে। শব্দদূষণ রোধে আইনের কোন কার্যকর প্রয়োগ দেখা যায় না। ২০০২ সালে উচ্চ আদালত থেকে হাইড্রোলিক হর্ন এবং বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী যে কোন ধরনের হর্ন গাড়িতে সংযোজনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। মানুষকে সচেতন করা হলে এবং আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিলে শব্দদূষণের মাত্রা যে কমে আসবে, সে ব্যাপারে সবাই আশাবাদী।
×