ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ে-

প্রকাশিত: ০৩:৪২, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার বিষয়ে-

দুর্বল নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের কারণ দেখিয়ে গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি কার্গো (বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পণ্য পরিবহন) পরিবহন স্থগিত করে যুক্তরাজ্য। পরে ওই বছরের ২১ মার্চ পরামর্শ, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও জনবল প্রশিক্ষণের জন্য দেশটির বেসরকারী প্রতিষ্ঠান রেডলাইন এ্যাসিউরড সিকিউরিটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এ চুক্তির এক বছর পেরিয়ে গেলেও আরোপিত সরাসরি কার্গো পরিবহন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে তেমন কোন অগ্রগতি আসেনি। সর্বশেষ গত বছরের ১৬ নবেম্বর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজ পরিদর্শন করে ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল। পরিদর্শন শেষে প্রতিনিধি দলটি বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার কথা বলেছিল। এরপর সরকার প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করলেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়নি। যুক্তরাজ্যে সরাসরি কার্গো পরিবহন বন্ধ থাকায় গত অর্থবছরে এ খাত থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বিমানের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৫-’১৬ অর্থবছরে এয়ারলাইনসটি উড়োজাহাজের কার্গো হোল্ডের মাধ্যমে ৪০ হাজার ৯১১ টন মালপত্র পরিবহন করেছে। এর মাধ্যমে বিমানের আয় হয়েছে ৩১৫ কোটি টাকা, যা ২০১৪-’১৫ অর্থবছরে ছিল ৩৯২ কোটি টাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে কার্গোসেবার পরিধি বাড়াতে দুটি এয়ারলাইনসের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বিমান। এর আওতায় বিমানের গ্রাহকদের মালপত্র ১৩টি রুটে পৌঁছে দিচ্ছে একটি এয়ারওয়েজ। আর ইউরোপের ১৫টি রুটে বিমানের হয়ে পণ্য পৌঁছে দেয়ার কাজ করছে অপর এয়ারলাইনস। এ বাস্তবতায় যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময় সুযোগ ছিল বিষয়টির দিকে তার দৃষ্টি আকর্ষণ। বাংলাদেশ সরকার সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছে ভালভাবেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে সরাসরি যুক্তরাজ্যে কার্গো পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ডেভিড ক্যামেরনের কাছে তুলে ধরে এর সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্য বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। এটি আমাদের কাছে আশ্বাসবাণীর মতোই। বর্তমান সরকার আরও শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশব্যাপী এক শ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে এবং এসব অঞ্চলে বিদ্যুত ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার কাজ চলছে। ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদারে সরকার গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে দেশব্যাপী রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করার কাজ চলছে এবং দক্ষিণ অঞ্চলে রেললাইন নির্মাণে ব্রিটিশ কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে যুক্তরাজ্যকে অবশ্যই সুবিবেচনার পরিচয় দিতে হবে। ব্রিটেনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক সুদীর্ঘকালের। সেখানে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশী বাস করেন। তারা ব্রিটেনের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে বিশাল প্রভাব বিস্তার করে আছেন। সফরকারী ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় নানাক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসাও করেন। সব মিলিয়ে আমরা আশা করতে পারি বাংলাদেশের ওপর থেকে কার্গো নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার মাধ্যমে দেশটির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে। এ ব্যাপারে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অনুযায়ী সেদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী যথাযথ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন বলে আমরা আশাবাদী।
×