ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মিহির কুমার রায়

হাওড় অর্থনীতি ॥ বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসনে কর্মসূচী জরুরী

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

হাওড় অর্থনীতি ॥ বন্যাপরবর্তী পুনর্বাসনে কর্মসূচী জরুরী

পত্রিকার পাতা খুললেই প্রথম খবরটি আসে বিপর্যস্ত হাওড় অঞ্চলের মানুষের জীবন, জীবিকা ও কৃষি অর্থনীতির কথা, যা গত মার্চ মাসের উজান থেকে আসা আগাম বন্যায় পানির তোড়ে ছয়টি জেলার বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এই অঞ্চলের কৃষকের জন্য এটি একমাত্র ফসল হিসেবে বিবেচিত। জানা গেছে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল ও ৩ লাখ ৫০ হাজার পরিবার প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সরকারীভাবে হয়ত ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ ও পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ বিলম্বে^ হলেও শুরু হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন মিডিয়া ও পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা যাচ্ছে যে, এর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো। ত্রাণ মন্ত্রণালয় বলছে হাওড়ের ৬টি জেলায় ৫৫টি ইউনিয়নের ১৮ হাজার ২০৫টি বাড়ি পরিপূর্ণ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে হাওড় অঞ্চলভিত্তিক গবেষকগণ বলেছেন, বিগত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতায় এত বড় বিপর্যয় চোখে পড়েনি। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হাওড় অঞ্চলের কৃষি ঋণের সুদ মওকুফ এবং ঋণ আদায় বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তার সঙ্গে আরও ঘোষণা রয়েছে হাওড়ের কৃষকদের পরবর্তী ফসলের মৌসুমে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের কথা। সরকার বলছে হাওড়ের ধান নষ্ট হওয়ার ফলে দেশের মোট ধানের উৎপাদনের হিসাবে তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু হাওড় নিয়ে নিরপেক্ষ গবেষণা সংস্থার বিজ্ঞানীরা বলছেন এই ক্ষতির প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে। কারণ হাওড় মহাপরিকল্পনার হিসাবে দেশের মোট ধানের ১৮ শতাংশ এবং উন্মুক্ত উৎসের মাছের ২৮ শতাংশ আসে হাওড় থেকে। আবার জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে হাওড় অঞ্চলের অবদান ৬ শতাংশ অর্থাৎ হাওড় সর্বসময়ই অবহেলিত হয়ে আসছে, যা এবারকার পাহাড়ী ঢলের সৃষ্ট আগাম বন্যার কারণে তা সকলের নজর কেড়েছে। তাই হাওড় রাজনীতির প্রাণপুরুষ বর্তমান রাষ্ট্রপতি এই হাওড়ের দুর্ভোগের কথা উপলব্ধি করে ছুটে গিয়েছিলেন দুর্গত এলাকায় স্ব-ইচ্ছাতেই এবং সিলেট বিভাগীয়-জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। রাষ্ট্রপতির দীর্ঘদিনের এই অঞ্চলের রাজনীতির অভিজ্ঞতা এবং সে উপলব্ধি থেকে উঠে এসেছে যে, হাওড় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বাঁচাতে আগামী বোরো ফসল তোলার আগ পর্যন্ত এই অঞ্চলে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী অব্যাহত রাখতে হবে; হাওড় অঞ্চলের ফসল রক্ষা বাঁধকে যুগোপযোগী করতে হবে; বাঁধ তৈরির ডিজাইনে পরিবর্তন আনতে হবে; হাওড়বেষ্টিত জেলাগুলোর সকল নদী, হাওড়, বাঁওড়গুলোকে ক্যাপিটেল ড্রেজিংয়ের আওতায় এনে খনন করতে হবে। যদিও কাজটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। হাওড়ের মানুষের ফসল ছাড়া যেহেতু বিকল্প কোন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই তাই কর্মসংস্থানে ইকোনমিক জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং হাওড় অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি প্রতিরোধের ব্যাপারে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে; যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য সাব-মার্জিনেল (ডুবন্ত) সড়ক নির্মাণের প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে ইত্যাদি। রাষ্ট্রপ্রধানের একই উপলব্ধিগুলো বাস্তবতার আবদ্ধে লিপ্ত, যা বাস্তবায়ন করা গেলে দীর্ঘমেয়াদে হাওড় অঞ্চলবাসী উপকৃত হবে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ভাবনাগুলো কি সেদিকে কিছুটা আলোকপাত করা যাক। ত্রাণ ও দুযোর্গ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রী বলেছেনÑ হাওড়বাসীকে পরিবার প্রতি আগামী এক শ’ দিন প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল এবং ৫০০ টাকা নগদ দেয়া হবে, যার অংশ হিসেবে এর মধ্যে ৩৫ হাজার টন চাল ও ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আবার খাদ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন হাওড় অঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্ত ১ লাখ ৫০ হাজার হতদরিদ্র পরিবারকে ওএমএস কর্মসূচীর আওতায় প্রতি কেজি ১০ টাকা মূল্যের চাল সরবরাহ করা হবে। বিগত এক মাসে হাওড় অঞ্চলের সাংবাদিক, সাহিত্যিক, সমাজ সংগঠক, নিরপেক্ষ গবেষক অনেক লেখালেখি করেছেন এবং এ লেখার ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। এই সকল লেখা থেকে উক্ত বিশেষ অঞ্চলটির সামাজিক প্রেক্ষাপট, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির যে পরিচয় পাওয়া যায় তা কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার ধরন কৃষিভিত্তিক এক ফসলি জমিনির্ভর, যা অন্য অঞ্চলে দেখা পাওয়া দুষ্কর। তাই একটি প্রাকৃতিক অনিশ্চয়তা সব সময়ই এই এলাকার অর্থনীতিকে তাড়িয়ে বেড়ায়, বিশেষত উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে আসা পাহাড়ী ঢলের আতঙ্কটি। যদি ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয় তাহলে ফসল ঘরে তোলা যায় আর তা না হলে দুঃখ-কষ্টে ভরে যায় হাওড়বাসীর জীবন, যা কোনভাবেই জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় ভৌগোলিক অবস্থানের ফসল। বিভিন্ন সংস্থা যারা এই হাওড় অঞ্চল নিয়ে গবেষণা করে কিংবা মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করে তাদের গবেষণার ফল হলো দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ী ঢলের সঙ্গে বালিবাহিত হয়ে নদীসহ প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় পাহাড়ী ঢলের কারণে প্রবাহিত জলধারা ধারণক্ষমতা লোপ পায়। আবার হাওড় রক্ষার বাঁধগুলোর নির্মাণ দুর্বলতা এত পশ্চাৎপদ যে, অল্প স্রোতেই সেগুলো তাদের স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলে। এক সময় হাওড় অঞ্চলের বনতুলসি ও হিজলগাছ এখন আর তেমন দেখা যায় না, যেগুলো মাটির সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক ছিল। এই ভৌগোলিক পরিবর্তনগুলোর বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ কোন গবেষক কিংবা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতর করেনি। যার ফলে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক ধারায় আরচণ করে চলছে, যা হাওড়বাসীর জীবন-জীবিকার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে, যার প্রকৃত প্রমাণ বর্তমান বিপর্যয়। এখন পুনর্বাসনের বিষয়টি নিয়ে সরকার আর কালবিলম্ব না করে যত ত্বরিত এগোবে জনজীবনে স্বস্তি তত সহজে আসবে। এরই মধ্যে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক ৩০ কোটি টাকার পুনর্বাসন কর্মসূচী ঘোষণা করেছে দুর্গত হাওড় অঞ্চলের জন্য। এখন সরকারের উচিত হবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খাদ্য সহায়তাসহ বাড়িঘর মেরামতের উদ্যোগ গ্রহণ করা। প্রাকৃতিক কারণে বৈশাখেই আষাঢ়ের বর্ষা শুরু হয়ে গেছে, যে সময়টাতে প্রকৃতিগতভাবে হাওড় এলাকার লোকজন বাড়িতে বসে অলস সময় কাটায়, তার ওপর আবার ফসল হারানোর যন্ত্রণাও রয়েছে। এখন প্রতিশ্রুত সরকারী সাহায্য খাদ্য ও পুনর্বাসন প্রথাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে পৌঁছবে সত্যি, যা অনেক ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত এবং এর সঙ্গে সামাজিক উন্নয়ন সংগঠনগুলোর এগিয়ে আসা উচিত দাতা সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে। এই অকাল বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষকের পাশাপাশি ব্যবসায়ী শ্রেণীর, যাদের বেশিরভাগ পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং ফসলহানির ফলে আগামী ফসল না উঠা পর্যন্ত তাদের বাড়িতে লেনদেনের টাকা প্রাপ্তির কোন সম্ভাবনা নেই, যা তাদের অর্থনৈতিক কর্মকা-কে স্থবির করে দিয়েছে। তাদের জন্য কৃষকের মতো সরকারের ঋণ মওকুফের বিষয়টি বিবেচনা করা ও সহজ শর্তে কার্যকরী মূলধন (সিসি) ব্যাংক থেকে সরবরাহ করা যেতে পারে। হাওড় অঞ্চলের প্রধান সমস্যা বা চ্যালেঞ্জ হলো বাঁধ মেরামত ও সংরক্ষণ করা, যা বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বাঁধ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলগত বিষয়, যার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হলো পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্তমানে হাওড় অঞ্চলে নির্মিত বেশিরভাগ বাঁধই হলো ডুবো বাঁধ, যাদের উচ্চতা ৬.০৩ মি. থেকে ৬.৫০ মি.। কিন্তু এবারের পাহাড়ী ঢলের বন্যা এসেছে ৮.১০ মি. উচ্চতায়, যা প্রচলিত বাঁধগুলো ধরে রাখতে পারেনি। নির্মাণগত ত্রুটির কারণে অনেকে বলে থাকেন পাঃ উঃ বোঃ ডুবো ডিজাইনে বাঁধ তৈরি করে বন্যার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে, যা সঠিক নয়। কারণ, ষাটের দশকে হাওড় অঞ্চলে স্থানীয় জাতের ধানের আবাদ হতো, যাদের জীবনকাল ছিল ১২৫-১৩৫ দিন, যা এপ্রিল মাসেই শেষ হয়ে যেত। কিন্তু পরবর্তী আশির দশকে যখন হাওড় অঞ্চলে ব্যাপকভাবে উফশী জাতের বোরো ধানের আবাদ শুরু হয় এখন তাদের জীবনকাল ১৫০ থেকে ১৬৫ দিন হওয়ায় মে’র মাঝামাঝিতে ফসল কৃষকের ঘরে আসে, যখন বর্ষা শুরুসহ বন্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। প্রাকৃতিগতভাবেই এই হাওড় অঞ্চলে বিশেষতঃ সুনামগঞ্জে গড়ে বৃষ্টিপাত হয় ৫৫০০ মি. মি.। ফলে ফসল কাটার মৌসুমে মার্চ-এপ্রিল আগাম ঢলের কারণে ফসল ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তাই বাঁধগুলোকে উঁচু করে তৈরি করতে হবে এবং যে সব এলাকায় তা রয়েছে সেখানে ফসল ডুবে যায়নি। তাই পাঃ উঃ বোঃ কে কৃষকের ফসল, তার জীবনদর্শন ও জীবিকায়নের বিষয়গুলোকে বিবেচনায় রেখে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। আর ডুবো বাঁধ অনেক ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়, যা তৈরি প্রশাসনিকভাবে পরিহার করতে হবে। হাওড় অঞ্চলের প্রধান সম্পদ তার জলাভূমি সংরক্ষণ, যার মুখ্য উদ্দেশ্য জীব পরিবেশ রক্ষা, ফসল বাঁচানো, মৎস্যের প্রাচুর্য ফিরিয়ে আনা ইত্যাদি। যার জন্য স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ জরুরী। কিন্তু এই অঞ্চলের পরিবেশবাদীরা এর বিরোধিতা করে থাকে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সাধারণের চলাচলের জন্য বাঁধগুলোকে বছরান্তে মেরামত না করে স্থায়ীভাবে নির্মাণ করতে পারে। এতে করে ফসলের সুবিধার্থে পানি নিয়ন্ত্রণ (বন্ধ বা ছাড়া) করা যাবে, দুর্নীতি দূর হবে এবং জলাভূমির জীববৈচিত্র্য অনেকাংশে রক্ষা পাবে। এর পরের প্রসঙ্গটি হলো কৃষি পুনর্বাসন ব্যবস্থাপনা, যা বর্ষার পানি সরে যাওয়ার পর থেকে শুরু করতে হবে। আমার জানা আছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের হবিগঞ্জ আঞ্চলিক কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা হাওড় অঞ্চলের উপযোগী বিশেষ উফশী জাতের ধান আবিষ্কার করেছেন, যা এরই মধ্যে ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। এখন কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচীর আওতায় আর্থিক প্রণোদনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেখানে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিটি সাপোর্ট ও ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাস্তবায়ন কর্মপরিকল্পনা জরুরী। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট হাওড় অঞ্চলে কৃষির জন্য কোন বিশেষ পদ্ধতির উদ্ভাবন করেছে কিনা আমার জানা নেই। তবে পানির ওপর ভাসমান কৃষি কিংবা নৌকায় অথবা ভেলায় কৃষি উৎপাদনের নজির রয়েছে, যা হাওড় অঞ্চলের জন্য অনুশীলন করা যেতে পারে। হাওড়ের মানুষ যেহেতু বছরের বেশিরভাগ সময় পানিবন্দী অবস্থায় বাড়িতে বসে থাকে সে সময়টাকে কৃষক পরিবারের সদস্যরা আয় বর্ধনমূলক কাজে অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারে, যার জন্য হাওড়ভিত্তিক এনজিওগুলোর ভূমিকাই বেশি। উজান থেকে আসা আগাম বন্যায় ধানসহ গাছ পচে যাওয়ায় পরিবেশের বিশেষতঃ পানির ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে, যা মানব তথা পশু স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এরই মধ্যে মাছ ও হাঁসের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে পানিবাহিত রোগের কারণে। এখন পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় মৎস্য ও পশুসম্পদ কার্যালয় দুর্গত অঞ্চলে তাদের প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করবে। এরই মধ্যে ঢাকাভিত্তিক নাগরিক সমাজ হাওড়বাসীকে রক্ষায় দ্রুত রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার তাগিদ দিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ১. বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল ২৪ লাখ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা, ২. সবার জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা, ৩. ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত, ৪. পানিবাহিত রোগ না বিস্তারে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া, ৫. শিশুদের শিক্ষা থেকে ঝরেপড়া রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া, ৬. হাওড়ের সকল জলাশয়ের লিজ বাতিল করে উন্মুক্ত জলাশয়ে সকলকে মাছ ধরার সুযোগ দেয়া, ৭. স্বাভাবিক পানি প্রবাহ, প্রাকৃতিক মৎস্যক্ষেত্র সংরক্ষণসহ পরিবেশ অনুকূল উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, হাওড়ের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা ইত্যাদি। সামনে বাজেট আসছে, যেখানে আঞ্চলিক উন্নয়নের কথা থাকবে, জেলাভিত্তিক বাজেটের কথা থাকবে। কিন্তু কতটুকু এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ব্যয় হবে তা দেখার বিষয়। তবে আগামী অর্থবছরে আকস্মিক বন্যার সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্তদের কথা বিবেচনায় রেখে বাজেট প্রণয়নের দাবি এখন সময়ের দাবি। লেখক : গবেষক ও অর্থনীতিবিদ সরযরৎ.পরঃু@মসধরষ.পড়স
×