ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আসিয়ান শীর্ষ বৈঠক ॥ প্রসঙ্গ চীন

বচসা এড়ালেন দুতার্তে

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৩০ এপ্রিল ২০১৭

বচসা এড়ালেন দুতার্তে

ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতার্তে শনিবার আসিয়ান শীর্ষবৈঠকে চীন বিরোধী কড়া অবস্থানে যাননি। তিনি আশা করেছিলেন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নেতৃবৃন্দ দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের সম্প্রসারণবাদী নীতির সমালোচনা করবেন, কিন্তু তার সে আশা পূরণ হয়নি বলে কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানা গেছে। অন্যদিকে তিনি নিজেও পূর্বসূরীরর মতো বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে ততটা কঠোর হননি। খবর এএফপির। ম্যানিলায় শনিবার আসিয়ানের (দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ১০ জাতি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট) একদিনের শীর্ষবৈঠক শেষে দেয়া সভাপতির বিবৃতিতে দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে বেইজিং যে আন্তর্জাতিক শালিস আদালতের রুল যে অগ্রাহ্য করে চলেছে সে বিষয়টি উপেক্ষা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দক্ষিণ চীন সাগরের যে অংশ চীনের নিজের বলে দাবি করছে সেটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক নৌপথ। সেখান দিয়ে বছরে ৫ ট্রিলিয়ন মূল্যের পণ্য পরিবহন করা হয়ে থাকে। চীন সেখানে বালু ফেলে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে সামরিক স্থাপনা বসিয়েছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের সঙ্গে দেশটির সীমান্ত বিরোধ চলছে। আসিয়ান বৈঠকের আগে বৃহস্পতিবার দুতার্তে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, চীনের সম্প্রসারণবাদী নীতির সামনে ফিলিপিন্সসহ অন্যন্য দেশগুলো অসহায়বোধ করছে। তিনি বলেন, বিষয়টি (চীনের উপস্থিতি) আর কোন আলোচনার বিষয় নয়। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে না নিলে আসিয়ানের মতো একটি কূটনৈতিক ফোরামে শুধু শুধু আলোচনা করে কি লাভ হবে। তার মতে, যে কাজটি হয়েই গেছে এ নিয়ে আলোচনা নিষ্প্রয়োজন। ফিলিপিন্সের মতো ব্রুনেই, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়াও দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের অংশ রয়েছে বলে দাবি করে থাকে তবে চীন সাগরের পুরো অংশের ওপরই নিজের সার্বভৌমত্ব দাবি করছে। শনিবার সভাপতির বিবৃতিতে দক্ষিণ চীন সাগর বিবাদ প্রসঙ্গে চীনের কথা উল্লেখ না করে ‘সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইনগত ও কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য আহ্বান জানান হয়। জানা গেছে বেইজিংয়ের কূটনৈতিক লবিংয়ের জোরে বিবৃতিতে চীনের নাম বাদ দেয়া হয়েছে। তবে চীন বিবৃতিতে এই কথাটিও উল্লেখ হোক, তা চায়নি। দুতার্তের পূর্বসুরী বেনিগনো আকুইনো আসিয়ানকে চীনের সম্প্রসারণবাদী নীতি রোখার জন্য আসিয়ানকে একটি প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করেন। তিনি বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক শালিস আদালতে যান এবং আদালত শেষ পর্যন্ত ফিলিপিন্সের পক্ষে রায় দেয়। কিন্তু দুতার্তে এক্ষেত্রে পূর্বসূরীর পথ অনুসরণ করেননি। তিনি আদালতের ওই রুলিং ব্যবহার করে কখনই চীনের বিরুদ্ধে জোরালো চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেননি। প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে ফিলিপিন্সের শত কোটি ডলার বাণিজ্যিক সম্পর্কের কথা চিন্তা করেই দুতার্তে সম্পর্ক উষ্ণ রাখার চেষ্টা করেন। দক্ষিণ চীন সাগর ছাড়া এবারের আসিয়ান সম্মেলনের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল উত্তর কোরিয়া। দেশটির নেতা কিম জং উন পরমাণু যুদ্ধ এড়াতে আসিয়ানের সহযোগিতা চেয়েছেন। কিম জং উনের পক্ষ থেকে আসিয়ানকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বার্ষিক সেনা মহড়া কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে। ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসান বালকিয়া, কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জকো উইদোদো, লাওসের প্রেসিডেন্ট ভাউনহ্যাং ভোরাসিথ, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ও-চা এবং ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী গুয়েন শুয়ান ফুক সম্মেলনে যোগ দেন। মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আউং সান সুচিও দেশটির প্রেসিডেন্টের পরিবর্তে সম্মেলনে যোগ দেন। এ বছর নবেম্বরে ফিলিপিন্সে আরও বড় পরিসরে আরেকটি শীর্ষ সম্মেলন হবে বলে জানা গেছে।
×